রাজীব গান্ধীর দুর্ভাগ্যজনক হত্যার পর 1991 তে কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রথম সংখ্যালঘু সরকার বানাল নরসিমা রাওএর নেতৃত্বে l রাওকে সেবার টিকিট দেননি রাজীব এবং রাজনৈতিক সান্যাসের উপদেশ দেন l স্থিতপ্রজ্ঞ রাও দক্ষিণের একটি মন্দিরে পুরোহিতের চাকরি নিয়ে চলে যাবার পরিকল্পনা করেন l রাজীবের মৃত্যুর পর সোনিয়া সেই রাওকে নিয়ে এলেন এবং প্রধানমন্ত্রী পদে বসালেন l ভারতবর্ষের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বছর এই 1991 l আর মাত্র 15 দিনের মধ্যে দেশ IMF এর কাছে দেউলিয়া ঘোষিত হবে এই অবস্থায় এসে রাও হাল ধরলেন l কিছু সংস্কার করলেন l আর্থিক সংস্কারের জন্য আনলেন ডঃ মনমোহন সিংকে l বিজ্ঞান ও গবেষণার পরিকাঠামো বানাতে আনলেন ডঃ কালামকে l প্রণব মুখার্জীকে দিলেন যোজনা কমিশন ও পরে বিদেশ দপ্তরের দায়িত্ব l মুখ্যনির্বাচন কমিশনার টি এন শেসনকে দ্বায়িত্ব দিলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের l তাঁর পুরোনো বন্ধু তথা ভাতৃপ্রতিম অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে চাইলেন রাজনৈতিক সমর্থন l নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধীর অর্থনীতি, বিদেশ নীতি, প্রতিরক্ষা নীতির আমূল বদল আনলেন মাত্র ছয় মাসে l সংস্কার আনলেন দলের সংগঠনেও l ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় কংগ্রেস ছাড়ার পর থেকে 1969 এ গঠিত কংগ্রেস (আর ) কিংবা 1978 এ গঠিত ইন্দিরা কংগ্রেসে কোনদিন সাংগঠনিক নির্বাচন হয় নি l এই পারিবারিক দলকে বিজেপির মত সাংগঠনিক দলে রূপান্তরের চেষ্টা করলেন রাও l যদিও তাঁর বিদায়ের পর দল আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে l
রাজীব গান্ধী মনোনীত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সিদ্ধার্থশঙ্কর বুঝলেন তাঁর সময় শেষ l সোমেন মিত্র মনোনয়ন জমা দিলেন l সমর্থন করলেন প্রণব, গণিখান, সুব্রত, জয়নাল আবেদিন, অতীশ সিংহরা l মমতা পাল্টা মনোনয়ন দিলেন l সমর্থন করলেন সিদ্ধার্থ, প্রিয়, সৌগত রায়, পঙ্কজ ব্যানার্জী ও অজিত পাঁজা l সোমেন জিতলেন l এর কিছুদিনের মধ্যে 25 শে সেপ্টেম্বর 1992 তে মমতা যুব কংগ্রেসের ব্যানারে ব্রিগেডে সভা ডাকলেন, যা সেই সময় কংগ্রেস ভাবতেই পারতো না l জনসমুদ্র দেখে আলিমুদ্দিন চমকে উঠল l ওদিকে সোমেন মিত্র ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থ-মমতার লোকজনকে সংগঠন থেকে সরাতে শুরু করলো l ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদে তাপস রায়কে সরিয়ে আনা হল শুভঙ্কর সরকারকে l মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী পদে মিনতি অধিকারীর বদলে এলেন কৃষ্ণা দেবনাথ l সিদ্ধার্থ রায় রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে গেলেন আমেরিকা l মমতা- প্ৰিয়রা দলে কোনঠাসা হয়ে পড়লেন l
পরের বছর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল l মহাকরণে যুবকংগ্রেসের সভায় প্রায় জালিয়ানবাগের ঢঙে 13 জনকে হত্যা l কিন্তু মমতা দেখলেন, নরসিমা রাও কিংবা তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চবন কেউই জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে এতো বড় ঘটনায় সিবিআই তদন্তটুকু করার সাহস দেখালেন না l এর মধ্যে ত্রিপুরা বিধানসভা ভোট পিছিয়ে দিলেন টি এন শেসন l সমীর বর্মন পদত্যাগ করলেন এবং ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল l সিপিএম আবার ক্ষমতায় এলো l নিন্দুকেরা বলে, নরসিমা রাও তাঁর সংখ্যালঘু সরকার বাঁচাতে ত্রিপুরা তুলে দেন দশরথ দেবদের l পরের দিন আনন্দবাজারে হেডলাইনে লেখা হল মমতার প্রতিক্রিয়া, ” এই জয় কংগ্রেস হাইকমান্ডের জয়” l মমতা বুঝলেন এই দলে তাঁর ভবিষ্যৎ নেই l কংগ্রেস ও সিপিএম একে অপরের বি টিম l প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতাদের তরমুজ বলে ডাকা শুরু করলেন এবং বিজেপি নেতা তপন সিকদারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে l 1996 ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী তথা ভারতীয় রাজনীতির চানক্য দিল্লিতে ডাকলেন মমতা ও সোমেনকে l সেইবারও একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট l মমতা ও সোমেনকে নিজেদের পছন্দমত 147 টা করে আসন নিতে বললেন l
এদিকে, 1991-96 পাঁচ বছর সিপিএম এর মূল হাতিয়ার ছিল রাও মনমোহনের উদার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন এবং গ্যাট চুক্তির বিরোধিতা l জ্যোতিবসু সরকারের অকর্মণ্যতা ও অত্যাচার যত বাড়ছে, কেন্দ্রের বিরোধিতা তাতো বাড়ছে l সঙ্গে বিরোধীদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখছে শৈলেন দাশগুপ্ত, অনিল বিশ্বাসরা l তরমুজ নেতারা এদের প্রতিদিন ভিতরের খবর এনে দিতেন l
1996 বিধানসভা ভোটে সোমেন যাদের টিকিট দিলেন তারা সবাই বেশ ঝানু কিংবা বাহুবলী l কিন্তু মমতা টিকিট দিলেন অপেক্ষাকৃত আনকোরা অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এবং স্তাবকদের l 1977 এর পর এই প্রথম সিপিএমকে টক্কর দিল কংগ্রেস l লোকসভায় 8 টি আসন এবং বিধানসভায় 84 l সোমেনপন্থি 56 জন এবং মমতাপন্থী 28 l কিন্তু নরসিমা রাও পরাজিত হলেন l দলের সভাপতি হলেন সীতারাম কেশরী l বিজেপি বৃহত্তম দল হিসেবে সংসদে এলো l অটলজি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও কোন সমর্থন জোগাড় করতে পারলেন না l 13 দিন পর পদত্যাগ করলেন l ক্ষমতায় এলো দেবেগৌড়ার নেতৃত্বে তৃতীয় ফ্রন্ট l সমর্থন করল কংগ্রেস l সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হলেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত l মমতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো l অনেকটা সেই ছাত্রের মত যে পাঁচ বছর স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রস্তুতির পর বাতিল হয়ে যায়, পিছনের দরজা দিয়ে লোক নেয়া হয়েছে বলে l 1997 এর ডিসেম্বরে নিজের দল গড়লেন মমতা ও বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালেন l 1998 তে আবার সাধারণ নির্বাচন হল l এবার প্রথম তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির জোট রাজ্যের রাজনীতিতে উত্তীর্ণ হলেন l সাতটি আসন তৃণমূল, একটা বিজেপি ( তপন সিকদার ) ও একটি কংগ্রেস ( গণিখান ) পেলেন l
সিপিএম বুঝলো সময় শেষ হয়ে এসেছে l 2001 এ জিততে গেলে একটু সুতো ছাড়তে হবে l নিজেদের শক্তি বাড়বে না তারা জানে l কিন্তু 1991 তে যেভাবে বিজেপিকে দিয়ে সিদ্ধার্থশঙ্করের খেলা নষ্ট করেছিল, এবার তারা কংগ্রেসকে দিয়ে বিজেপি তৃণমূলের জোটের খেলা শেষ করার পরিকল্পনা করলো l পরের বছর 1999 এ আবার অন্তর্বর্তী নির্বাচন হল l এবার তারা ঠিক করলেন তাঁদের দুই চিরশত্রুকে সংসদে পাঠাবে l এক, প্রিয়রঞ্জন দুই, অধীররঞ্জন l বিরোধী ভোটারদের মধ্যে দুটো শক্তিশালী শিবির বানিয়ে ভোট ভাগ করে দিতেই তাঁদের এই দুই শত্রুকে সংসদে পাঠাতে তারা মাঠে নেমে পড়লেন l
এই প্রসঙ্গে নব্বইয়ের দশকে বহরমপুরের বড়দা তথা অধীররঞ্জন চৌধুরীর নাটকীয় উত্থানের কথা না বললে, 2001 এ সিপিএম এর জেতার স্ট্রাটেজি বোঝা যাবে না l 1992 তে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশে বহরমপুরের পুরাসভাকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলেন অসীম দাশগুপ্তরা l শহর নোংরা ও গন্ধে ভোরে গেল l কংগ্রেস পুরচেয়ারম্যান শঙ্করদাস পালের সাহায্যে এগিয়ে এলেন টাউন ক্লাবের সভাপতি বড়দা তথা অধীর রঞ্জন চৌধুরী l শঙ্করদাস পালকে বরখাস্ত করলেন বুদ্ধদেব এবং পুনর্নিবাচনে 23 এ শুন্য পেলেন বুদ্ধদেব l এবার রাগ পড়লো অধীরের উপর l 1996 এ সোমেন যে 147 টা আসনে মনোনয়ন দেবার জন্য পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছি, সেখানে নবগ্রাম কেন্দ্রে তিনি অধীরকে টিকিট দেন l প্রথমে বেঁকে বাসেন মমতা l বলেন তিনি কোন অপরাধীর সঙ্গে ভোটে দাঁড়াবেন না l কিন্তু না হাইকমান্ড না সোমেন তাঁর কথা শোনেন l এদিকে একটা মিথ্যে খুনের মামলায় অনিল বিশ্বাসের নির্দেশে অধীররঞ্জনকে বাড়ি ছাড়া করলো জ্যোতিবসু l ফেরার অধীর মাইক তাঁর ভাষণের রেকর্ড বাজিয়ে প্রচার করে নবগ্রাম কেন্দ্র সিপিএমএর থেকে ছিনিয়ে নেন l কিন্তু 1998 তে মমতা বিজেপি জুটি সফল হলে, এই অধীরকেই সংসদে পাঠিয়ে মমতার মুর্শিদাবাদে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেন সিপিএম l মধ্যস্ততা করেন সোমেন মিত্র l 1999 তে তৃণমূল ও বিজেপি একটি করে বেশী আসন পেল l কৃষ্ণনগরে জিতলেন বিজেপির জুলুবাবু l কিন্তু কংগ্রেস আরও দুটি আসন যোগ হল l বহরমপুরে অধীররঞ্জন এবং রায়গঞ্জে প্রিয়রঞ্জন l মমতা বিজেপি জোটের উত্তরবঙ্গ যাত্রা বন্ধ করে দিল সিপিএম l এদিকে বিজেপি বিরোধী প্রচারে মুসলিম ভোট বামেদের দিকে যাওয়া শুরু করলো l সিপিএম এই চলে চেয়েছিলেন ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে l.কিন্তু মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত অধীর, প্ৰিয় ও বরকতের শক্তি দেখে বিভ্রান্ত হলেন মমতা l এর মধ্যে 2000 এ কলকাতা পুরাসভা দখল করলো তৃণমূল-বিজেপি জোট এবং মেয়র হলেন সোমেন, প্রণবের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত সদ্য তৃণমূলে আসা সুব্রত মুখার্জী, যাকে সেই সময় তরমুজশিরোমনি বলে ডাকতো কংগ্রেস কর্মীরা l সুব্রতর মধ্যস্ততায় মমতা মিটিং করলেন প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে l কেন্দ্রের রেলমন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে হাত ধরলেন কংগ্রেসের l ভোটের ঠিক আগে গত তিন বছরের বিরোধী রাজনীতির রসায়ন পুরো পাল্টে গেল l
এর মধ্যে অনিল বিশ্বাস আরও একটা মাস্টারস্ট্রোক দিলেন l ভোটের একবছর আগে জ্যোতি বসুকে সরিয়ে বুদ্ধদেবকে মুখ্যমন্ত্রী করলেন l অনিল জানতেন বসুর পাহাড়প্রমান সার্বিক ব্যর্থতাকে পঞ্চমবার বেচা কঠিন l বুদ্ধদেবের ভাবমূর্তি মোটামুটি পরিষ্কার l বুদ্ধদেব বাংলা সাহিত্যের স্নাতক হলেও, পার্টি তাঁর ভাবমূর্তি এমনভাবে তৈরি করে দিয়েছে, যে বহু মানুষের ভাবতেন যে উনি সত্যেন বোস বা মেঘনাদ সাহার মতই একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ l ওদিকে জ্যোতিবাবুর রাজত্ব কালেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ও আইন পাশ করেও মমতা সমাজে নিজেকে সেইভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে.পারেন নি l এছাড়া ওই দুই বছরের প্রায় হাফডজন বার কেবিনেট থেকে পদত্যাগ করেন মমতা l এমন একজনকে জনগণ রাজ্যের দায়িত্ব দেয় কিভাবে? ভোটের আগে বিজেপিকে ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়ার এই ঘটনা মমতাএ গ্রহণযোগ্যতা শুন্যতে নিয়ে আসে l অনিল বিশ্বাস নিজেও এতটা আশা করেন নি l
কিন্তু এখানেই শেষ নয় l ষষ্ঠ বামফ্রন্ট জেতানোর জন্য শেষ চেষ্টায় নামলেন মমতা l কংগ্রেসের সঙ্গে আসন বন্টনের সময় মমতা কংগ্রেসকে প্রায় কিছুই দিতে রাজি হলেন না l যেখানে চিরশত্রু অধীর ও প্রিয়কে সংসদে পাঠিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন অনিল বিশ্বাস দুই বছর আগেই, সেখানে উত্তরবঙ্গ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, আসানসোলে কংগ্রেসের ভাল সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও মমতা অধিকাংশ আসন নিয়ে নিলেন সোনিয়া-প্রণবের থেকে l বেশ কিছু কংগ্রেস বিধায়ক পর্যন্ত টিকিট পেলেন না l তাঁরা কার্যতঃ বসে গেলেন l তাঁদের সমর্থকরা বিজেপি কিংবা সিপিএমকে ভোট দিল l ওদিকে মমতা অধিকাংশ আসনে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের টিকিট দিলেন l যেমন অমল দত্ত, মাধবী মুখার্জী, আইপিএস রঞ্জিত গুপ্ত, তাপস পাল ইত্যাদি l তৃণমূলের নিচের তলার কর্মীরা প্রশ্ন করলেন, যদি কলকাতাই ঠিক করে কে নেতৃত্বে দেবে, তবে ‘তৃণমূল’ শব্দের অর্থ কি?
এদিকে বিজেপিকে ছেড়ে প্রণববাবুর ফাঁদে পা দেয়ায়, বিদ্রোহ করলেন তৃণমূলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংসদ অজিত কুমার পাঁজা l তিনি ঘোষণা করলেন, তৃণমূল 60 ছাড়াবে না এবং কংগ্রেস 30 l ছাড়ালে উনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন l
এই পর্বে, আরও একটি খেলা চলছিল সিপিএম এ l সুভাষ চক্রবর্তী, সমীর পততুন্ড, সাইফুদ্দিন চৌধুরী এবং সুজিত বসু ঠিক করলো সিপিএম ছাড়বে l সমীর পাততুন্ড ও সাইফুদ্দিন নিজেদের দল বানালেন এবং কথা হল পরে সুভাষ চক্রবর্তী যোগ দেবেন l সুজিত বসু তৃণমূলে যোগ দিলেন l অনিল বিশ্বাস এলেন সুভাষ-রমলার বাড়ি l কথা হল তাঁকে আগামী দিনে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আনা হবে এবং তাঁর দপ্তরের কাজে বুদ্ধদেব বা অসীম কোন নাক গলাবে না l সুভাষ ঘরে ফিরে এলেন l অনিল বিশ্বাসের শেষ মাস্টারস্ট্রোক l অজিত পাঁজা ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল l
2001 পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সম্ভবত নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল এক বহুমাত্রিক ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন, যার বহু লিমিটিং কন্ডিশন l কিন্তু কোন কম্পিউটারে নেই l আর এই ইকুয়েশন এর সমাধানের কৃতিত্ব নিশ্চই একজনেরই প্রাপ্য l তিনি অনিল বিশ্বাস l শৈলেন দাশগুপ্তকে সরিয়ে জ্যোতিবাবু অনিল বিশ্বাসকে ওই আসনে বসান আর রাজনীতির দাবায় জেতার জন্য সেই জ্যোতিবাবুকেই সরিয়ে এবং তাঁর স্নেহধন্য সুভাষ চক্রবর্তীকে নিজের দিকে এনে এই যুদ্ধে জয়ী হল অনিল বিশ্বাস l প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রত্যেক অতিআত্মবিশ্বাসী নেতার অন্ততঃ একবার 1996 ও 2001 এর কংগ্রেসের হারের ইতিহাস পড়া উচিৎ, নিজেদের নির্বাচনী স্ট্রাটেজি বানানোর আগে l অতিআত্মবিশ্বাস মহাভারত থেকে আজকের ভারতে কতটা আত্মঘাতী হতে পারে, এই নির্বাচন তাঁর প্রমান l
শুরু হল ষষ্ঠ বামফ্রন্টের জয়যাত্রা l 34 বছরের বাম শাসনে যদি পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের থেকে কিছু পায়, সেটা এই ষষ্ঠ বামফ্রন্ট জামানায় l আলোচনা হবে শেষ পর্বে l
(সুদীপ্ত গুহ ) (Sudipta Guha)