পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক পরিসরের মধ্যে যা যা ব্যবস্থাদি নিয়েছে এবং নিচ্ছে তার চেয়ে বেশি আর কী কী করতে পারত ? প্রতিটি বুথে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ আছে এমন পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের বদলি করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে সাধ্যের মধ্যে যতদূর পারা যায় চেষ্টা করেছে নির্বাচন কমিশন। শুধুমাত্র ভোটের নিরাপত্তা খাতেই কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এর চেয়েও বেশি করতে গেলে রাজ্যের পুরো প্রশাসনকেই সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দিতে হয়। সরকার না ভেঙে সেটা সম্ভব নয়। যা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে নেই।
এবারের নির্বাচনে সাধারণ মানুষ মোটের উপর ভোট দিতে পারছে। আর তা নিশ্চিত করতেই নির্বাচন আধিকারিকদের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে । আচ্ছা সাধারণ মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে,নিরুপদ্রবে ভোট দিয়ে অক্ষত শরীরে বাড়ি ফিরতে পারে তার দায় কি কেবল নির্বাচন কমিশনের ? কেবল পুলিশ আর আধাসামরিক বাহিনীর ? আমাদের রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির কোনও দায়দায়িত্ব নেই ? শাসক-বিরোধী সবার কথা বলছি। পরীক্ষায় নকল আটাকানো হলের ভেতর প্রহরারত শিক্ষকদের অবশ্যই দায়িত্ব। কিন্তু ছাত্রদেরও কি কর্তব্য নয় অসদুপায় অবলম্বন না করেই পরীক্ষা দেওয়া ?
ভোটে এত কড়াকড়ির পরেও মারপিট, দৌড়ঝাঁপ, বুথজাম, ছাপ্পা ,গাজোয়ারি আটকানো যাচ্ছে না। কড়াকড়ি একটু কম হলে মনে হয় লাশের পর লাশ পড়ত। যেভাবই হোক ভোটে জোর খাটাবো। বিপক্ষ দলের এজেন্টকে রাতে বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে আসব। তারপরেও সকালে বুথে এলে কেলিয়ে হাসপাতালে পাঠাব। বুথের সামনে চারটে পেটো মেরে নিরীহ মানুষকে সন্ত্রস্ত করব। দলের ভোটার না হলে রাস্তাতেই আটকে দেবো। এই ছ্যাঁচরামো গুলি সদিচ্ছা থাকলে বন্ধ করা যায় না ? বুথের সামনে প্রার্থীকে ঘিরে গালিগালাজ। প্রার্থীর পাল্টা গালিবর্ষণ। প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর। সাংবাদিকদের ধোলাই। ইভিএমে আছাড়। ভোটের দিন দিনভর এইসব কুনাট্য বন্ধ করার দায় শুধু নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে ঠেললেই চলবে ?
ভোটকে ঘিরে রাজনৈতিক ইতরামি যদি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এমনকী বিহার-ইউপিতেও বন্ধ হতে পারে তবে পশ্চিমবঙ্গে নয় কেন ? নিজের শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে বাঙালির এত অহঙ্কার। আত্মপ্রসাদে যেই জাতির মাটিতে পা পড়ে না কদর্য রাজনৈতিক চুলোচুলি বন্ধে তার এত ব্যর্থতা কেন ? রাজনৈতিক দলগুলির যদি আপনা থেকে শুভবুদ্ধি না জাগে তবে বাংলার নাগরিকসমাজ কি পারে না দলগুলিকে সৎপথে আসতে বাধ্য করতে ? নাগরিকসমাজের কেষ্টবিষ্টুরা তো আবার পেটের দায়ে মাথা বিক্রি করে বসে আছেন। নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তায় ভোটসন্ত্রাসে লাগাম পড়ানো গেছে কিন্তু ভোট ঘিরে কলতলার মারপিট চলছেই। সবজান্তা বাঙালি নিজের স্বভাব নিজে না শোধরালে কমিশন কী করতে পারে ?
উত্তম কুমার দেব