যতীন্দ্র নাথ দাস (২৭ অক্টোবর, ১৯০৪ – ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯), ছিলেন একজন ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের সহকর্মী। আত্মত্যাগী, সাহসী মানুষটি লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯২৯ সালের ১৪ই জুন গ্রেপ্তার হন। জেলবন্দীদের অধিকারের দাবিতে ওই বছরই ১৩ই জুলাই অনশন শুরু করেন তিনি। ৬৩ দিন অনশনের পর ১৩ই সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে জেলেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্বাধীনতার পর তাঁর সম্মানে কলকাতা মেট্রোর হাজরা অঞ্চলের মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয় যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশন। 


           যতীন্দ্রনাথ দাসের জন্ম কলকাতায়। পিতার নাম বঙ্কিমবিহারী দাস এবং মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কংগ্রেসের সদস্য হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২৮-২৯ সনে বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র ছিলেন।


          ১৯২৩ সনে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কলকাতার ভবানিপুরে ঘাঁটি করলে তিনি এই দলে যোগ দেন। পরে দক্ষিণেশ্বরের বিপ্লবী দলের সংঘেও তাঁর যোগাযোগ হয়। ১৯২৪ সালে দক্ষিণ কলকাতায় “তরুণ সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৯ সালের ১৪ জুন যতীন দাসকে তাঁর কলকাতার বাড়ি থেকে লাহোর পুলিশের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত ঐ সময় ইস্যু ছিল লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। পরবর্তী সময়ে জেলের ভেতর রাজনৈতিক বন্দিদের মর্যাদার দাবীতে এবং মানবিক সুযোগ সুবিধার আন্দোলন ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।তাঁরা ১৩ জুলাই থেকে ভগৎসিং ও বটুকেশ্বর দত্তের সমর্থনে অনশন সংগ্রাম আরম্ভ করেন।  জেল কর্তৃপক্ষের আচরণের প্রতিবাদে ২৩ দিন অনশন করেন। এখানে রাজবন্দিদের উপর জেল কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে এই আন্দোলন। এই সময় তাঁকে বহুবার জোর করে খাওয়াবার চেষ্টা করা হয়। ৬৩ দিন অনশনের পর তিনি মারা যান। এইভাবে মৃত্যুবরণ করার ফলে রাজবন্দিদের উপর অত্যাচার প্রশমিত হয়েছিলো। এই বীর শহিদের মৃতদেহ কলকাতায় আনা হলে দুই লক্ষ লোকের এক বিরাট মিছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে শোকযাত্রায় কেওড়াতলা শ্মশানঘাট পর্যন্ত অনুগমন করে।

                     অনশন চলাকালীন শান্তিনিকেতনে তপতী নাটকের মহড়া চলছিল, এই ঘটনায় মর্মাহত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাটকের মহড়া বন্ধ রাখেন এবং সেই রাতেই রচনা করেন ‘সর্ব খর্ব তারে দহে তব ক্রোধ দাহ’ গানটি , যেটি পরে ‘তপতী’ নাটকে অন্তর্ভুক্ত হয়।
©সুমন কুমার দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.