করােনাকালে মানসিক চাপ থেকে একমাত্র মুক্তির উপায় হলাে যােগানুশীলন


চিতা চিন্তাদ্বয়ো মধ্যে চিন্তা নামঃ গরীয়সী।
চিতা দহতি নির্জিবং, চিন্তা প্রাণৈঃ সহ বপুঃ।। (উপনিষদ)
আমরা যদি তুলনা করি চিতা ও চিন্তার মধ্যে কে বড়াে। তখন বলা হবে চিতা শুধু নির্জীব শবকেই দহন করে, আর চিন্তা দেহ ও প্রাণকে দগ্ধ করে।
আমরা যদি একটু ভাবি শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ হলাে দুশ্চিন্তা।। এই দুশ্চিন্তার ফলেই হয় টেনশন বা মানসিক চাপ। কিশাের থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। সবাই এই রােগের শিকার হতে পারে। আজকাল ভদ্র ভাষায় এই রােগের অন্য একটি নাম হচ্ছে Mental Stress বা মানসিক চাপ।
আমাদের মস্তিষ্কের দুটি অংশ এ ব্যাপারে দায়ী। একটি হলাে সেরিব্রাল কর্টেক্স যা চিন্তা করতে সাহায্য করে, বাইরের উত্তেজনা গ্রহণ করে স্মরণ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। আর দ্বিতীয় হলাে হাইপ্রাে থ্যালাসাস। এই হাইপাে থ্যালাসাস দেহের বিভিন্ন অংশের। স্বয়ংক্রিয়তাকে চালনা করে। যেমন হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করা, পাকস্থলী ও অন্ত্রের পেরিস্টলসিস, শ্বাস চালনার ক্ষেত্রে ফুসফুসের সংকোচন- প্রসারণ ইত্যাদি। হাইপাে। থ্যালাসাসের এই স্বয়ংক্রিয় নাৰ্ভতন্ত্র আবার সিমপ্যাথিটিক ও প্যারাসিস-প্যাথেটিক এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সিমপ্যাথেটিক অংশ হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের গতি বাড়িয়ে দেয়। প্যারাসিসপ্যাথেটিকের কাজ এর বিপরীত।।
কারণ : এই রােগ মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে। আবার পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক চাপে সৃষ্টি হয়। যেমন, ছেলে-মেয়েদের উপর পড়াশােনার চাপ, আর্থিক সঙ্গতির টানাপােড়েন। এছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ, নেশার আসক্তি, দারিদ্র্য ইত্যাদি।
লক্ষণ : মস্তিষ্কের উত্তেজনায় মাথাগরম দয়ে যাওয়া, চামড়া কুচকে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মহিলাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ ঋতু বন্ধ হওয়া, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি।
মুক্তি পাওয়ার উপায় : মানসিক টেনশন বা স্টেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালাে উপায় হলাে নিয়মিত হাঁটা, কিছু খালি হাতে ব্যায়াম, আসন ও প্রাণায়াম করা। ক্রম অনুসারে বর্ণনা দেওয়া হলাে।
• প্রথম অভ্যাস : ভ্রমণ প্রাণায়াম ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভােরবেলায় শ্বাসের সঙ্গে হাঁটা।
• দ্বিতীয় অভ্যাস : বক্ষ সঞ্চালন ২ থেকে ৩ মিনিট। দাঁড়িয়ে দু’হাত সামনে, তারপর
দু’হাত প্রসারিত করা, দু’হাত কঁাধের সঙ্গে সমান্তরাল।।
• তৃতীয় অভ্যাস : সেতুবন্ধন আসন ২ মিনিট। চিৎ হয়ে শুয়ে দু’পা ভাঁজ। করে, দু’হাত শরীরের পার্শ্বে রেখে নিতম্ব তােলা। (নিতম্ব উঠানাে নামানাে ১০ বার)।
•চতুর্থ অভ্যাস : বিপরীতকরণী মুদ্রা ৩ মিনিট। দেওয়ালের সাহায্য নিয়ে দু’পা কোমর থেকে উপরে উঠানাে। (সর্বাঙ্গাসনের মতাে)
•পঞ্চম অভ্যাস : চন্দ্র অনুলােম। বিলােম প্রাণায়াম ৩ মিনিট। সুখাসনে। বসে, ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান নাকের নাসারন্ধ্র বন্ধ করা, বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও খুব ধীর গতিতে ছাড়া।
•ষষ্ঠঅভ্যাস : শিতলী প্রাণায়াম ৩ মিনিট। সুখাসনে বসে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া। জিব পাখির ঠোটের মতাে হবে। তারপর দু’ নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়া।
• সপ্তম অভ্যাস :নাভি শুদ্ধি প্রাণায়াম ৫ মিনিট। সুখাসনে বসে নাসিকা মুদ্রায়, বাম নাক থেকে শ্বাস নেওয়া। তারপর ডান নাক থেকে শ্বাস ছাড়া। তারপর ডান নাক থেকে শ্বাস নিয়ে বাম নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়া। এটা ১ চক্র হলাে। এভাবে ৯ চক্র করা। শ্বাস নেওয়ার সময় ২ থেকে আড়াই সেকেন্ড শ্বাস নেওয়া ও ছাড়া।
•অষ্টম অভ্যাস :ভ্রামরী ২ মিনিট সুখাসনে বসে দুই কানের ফুটো নির্দেশিকা আঙুল দিয়ে বন্ধ করা। জিব তালুর উপর স্পর্শ করে দুই নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে ইংরেজির ‘এন’ উচ্চারণ করা। কম করে ৮ থেকে ১০ বার।।
শেষে শবাসন/যােগ নিদ্রা ৫ থেকে ১০ মিনিট। শান্তিমন্ত্র পাঠ করে স্থান। ত্যাগ করা।
শুধু আসন করলেই হবে না, তার জন্য সহজপাচ্য সাত্ত্বিক আহার গরেহণ। করা। যতদূর সম্ভব সংযত জীবনযাপন এই রােগের পরম ওষুধ। এছাড়া মাঝে মাঝে। ভ্রমণে যাওয়া।
আশীষ পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.