অতীতের সত্য ঘটনাগুলির নিখুত বিবরণ বা সমসাময়িক অবস্থার পর্যবেক্ষণই ঐতিহাসিকদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনােত্তর তথাকথিত বামপন্থী ঐতিহাসিকরা ইতিহাসকে বিকৃত করেই ক্ষান্ত হননি, বরং সত্যের অপলাপ করে রক্তাক্ত ইসলামিক ইতিহাসকে ‘হােয়াইট ওয়াশ’ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছেন গত ৭০ বছর ধরে। অবশ্য তার পিছনে ছিল আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র। হাজার বছরের গােলামির পর রক্তাক্ত ও দ্বিখণ্ডিত ভারতের প্রথম দূরদৃষ্টিহীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুর প্রশ্রয়েই ওই ঐতিহাসিকরা কেন্দ্রীয় অনুদানে পুষ্ট জামিয়া মিলিয়া, জেএনইউ বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ইতিহাসের নামে। কল্পকাহিনি বা উপন্যাস লিখে চলেছিলেন। ইদানীং রামজন্মভূমি বিতর্কে ইরফান হাবিব, রােমিলা থাপার, রামচন্দ্র গুহ, ডিএন ঝা ও বিপানচন্দ্রদের কদর্য ভূমিকা সবার গােচরে এসেছে।
এই তথাকথিত ঐতিহাসিকদের শেষ পর্যন্ত সত্যমেব জয়তের কাছে মাথা নােয়াতে হয়। পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত আমাদের সবথেকে প্রামাণ্য ইতিহাস। ইতিহাস শব্দের অর্থ হলাে ‘অতীতে যা বলা হয়েছিল। আবহমানকাল ধরেই দেখে এসেছি দেবাসুরের সংগ্রামে দৈব শক্তির কাছে পাশবিক শক্তিসম্পন্ন দানবীয় শক্তির বারংবার পরাজয় ঘটেছে।
সৌরাষ্ট্র অর্থাৎ গুজরাটের পশ্চিমতটে বেরাবলের কাছে প্রভাস পাটনে ঐতিহাসিক দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের সর্বপ্রথম সােমেশ্বর শিবের ঐশ্বর্যশালী মন্দিরটি হিন্দুদের আস্থা ও ধর্মের প্রতীক এবং গৌরবময় প্রাচীন ভারতের সমৃদ্ধির পরিচায়ক ছিল। সােমনাথ মন্দিরের স্থাপনা, ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণের বিশদ বিবরণ ইতিহাসে লেখা আছে। অযােধ্যায় ৫ আগস্ট, ২০২০-তে প্রধানমন্ত্রী মােদীর রামজন্মভূমি মন্দিরের শিলান্যাস করায় কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের গাত্রদাহ ও বিরােধিতা, ১৯৫১ সালের সােমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণে নেহরর চরম বিরােধিতা হিন্দুরা ভুলতে পারে না। জওহরলাল নেহরু কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের চোখে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজবাদের প্রেরক হলেও বিজেপি নেতা সুব্রহ্মমণ্যম স্বামীর কথায়, দূরদৃষ্টিহীন ও জেদি নেহরুজী ছিলেন স্বঘােষিত ‘পণ্ডিত।
শাস্ত্রে আছে, সৃষ্টির শক্তিপুঞ্জ বিনাশের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হয়। বখতিয়ার খিলজিনালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্র বছরের তপস্যার ফল ৯০ লক্ষ পাণ্ডুলিপি ১২০২ সালে কয়েকদিনের আগুনেই নিঃশেষ করে দিয়েছিল। অনাদিকাল থেকেই প্রবাসখণ্ডে কপিলা, হিরণ্য ও সরস্বতীর ত্রিবেণীসঙ্গমে নিরাকার জ্যোতিপুঞ্জের প্রতীক ‘বিধু খণ্ডবিমণ্ডিত ভালতটং ‘সােম বা অমৃতের ঈশ্বর’ সােমেশ্বর শিবের মন্দিরটি সৌরাষ্ট্রে বিরাজমান ছিল। জে. গর্ডন, মেল্টনের বর্ণনায়, ৭২৫ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধের সুলতান আল -জুনেইদ প্রথমবার গুজরাট ও রাজস্থানের রাজাদের পরাজিত করে শিবলিঙ্গটি ধ্বংস করে। তারপর বহুবার ইসলামি আক্রমণে ধ্বংস হলেও স্থানীয় হিন্দুরা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। গজনির সুলতান মেহমুদ ১০২৪-১০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৭ বার সােমনাথ আক্রমণ করে মন্দির রক্ষাকারী ৫০ হাজার ভক্তকে। নির্মমভাবে হত্যা করে। ২০ মিলিয়ন। দিনারের সােনারুপা, মণিমাণিক্য, মূল্যবান। চন্দনকাঠের দরজা-জানালা ও। আসবাবপত্রগুলি অপহরণ করে। আফগানিস্তানে পালানাের পথে ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। আলাউদ্দিন খিলজি (১২৯৯) থেকে শুর চরম হিন্দুবিরােধী ও মূর্তিধ্বংসকারী ঔরংজেব (১৭০২) পর্যন্ত বিধর্মী শাসক সােমনাথকে ধ্বংস করে অসংখ্য হিন্দুকে হত্যা করে।
অন্যদিকে যাদবরাজ বল্লভী, রাজা ভােজ ও মহীপাল, প্রতিহাররাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট, শােলাঙ্কি – চালুক্য রাজাদের অন্যতম মূলারাজা, রাজা প্রথম ভীম, কুমারপদ প্রমুখ হিন্দুরাজা বারংবার ধর্মরক্ষার্থে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে মন্দির পুনরুদ্ধার করেছেন। মারাঠা মহারানি অহল্যাবাই হােলকর (১৭০০) শেষবারের মতাে পুনঃসংস্কার করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইতিহাসকার মীনাক্ষী জৈনের লেখা থেকে এসব জানা যায়। তাছাড়া, আমীর খসরু ও জিয়াউদ্দিন বারনির লেখা থেকেও ভারতে হিন্দুমন্দির ধ্বংসকারী ইসলামি জিহাদের মর্মন্তুদ কাহিনির বর্ণনা পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রদেশের ভােপালে রাজা ভােজের সময়ে তৈরি সারাবিশ্বের একমাত্র সরস্বতী মন্দিরটিকে মুসলমান ভােটভিখারি কংগ্রেসি সরকার মুসলমানদের মসজিদ বানানাের জন্য দিয়ে দেয়। আজও তার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। ১৯৪৭ সালে জুনাগড়ের নবাব মহব্বত খাঞ্জির পাকিস্তানে যােগদানের ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় সেনার সাহায্যে জুনাগড়কে ভারতে বিলয় করান এবং সােমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণে আচার্য কে.এম. মুন্সীকে নিয়ােজিত করেন। জুনাগড়ে ১৯৪৭ সালের ১২ নভেম্বর সােমনাথ দর্শনে গিয়ে স্থানীয় জনসভায় সর্দার প্যাটেল বলেন, বর্তমান সরকার এই জীর্ণ মন্দিরকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর হয়েছে।
ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হলেও ভারতকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ধর্মনিরপেক্ষ করা হয়। দেশ বিভাজনকারী বিশেষ বর্গের কাছে হিন্দু স্বাভিমানের কোনাে মূল্য ছিল না। সেই হিন্দুবিদ্বেষী বর্গের নেতা ছিলেন নেহরু স্বয়ং। তিনি ছিলেন সর্দার প্যাটেলের ভূমিকার প্রধান বিরােধী মুখ। বােম্বেতে সর্দার প্যাটেল একবার স্বেচ্ছাচারী নেহরর যুক্তিহীন বিচারে ক্ষুন্ন হয়ে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের পরিকল্পনা করেন। মহাত্মা গান্ধীও বলেছিলেন, ইংরেজরা দেশ ছাড়লে কংগ্রেসের প্রয়ােজন থাকবে না। কংগ্রেসের বিলয়ে দেশের মঙ্গলই হবে। কিন্তু রাজভােগে মত্ত নেহরু সহজে এই কথা মেনে নেবার পাত্র ছিলেন না। ভিপি মেনন ও দ্য আন সাং আর্কিটেক্ট অব মডার্নইন্ডিয়া’র লেখিকা ও ইতিহাসকার নারায়ণী বসু লিখেছেন, নেহরু সর্দার প্যাটেলকে তার মন্ত্রীসভায় নিতেই চাননি তাদের মধ্যে চলা শীতযুদ্ধের কারণে। কিন্তু ভাইসরয় মাউন্টব্যাটন বলেছিলেন, প্যাটেলকে বাদ দিলে মহামূর্খামি হবে। হ্যারি হডসনের লেখা থেকেও একথার পুষ্টি হয়।
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে জম্মু-কাশ্মীর আক্রমণ করলে রাজা হরি সিংহের অনুরােধ অগ্রাহ্য করে নেহর তার বন্ধু শেখ আবদুল্লাকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী করে ৩৭০ ধারা লাগু করেন। ভারতীয় সেনা যখন প্রতি আক্রমণে পাকিস্তানকে পরাজিত তাড়িয়ে লাহােরের পথে, সে সময় তিনি সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের পক্ষে দালালি করেন। ১৯৪৭ সালে বালুচিস্তানের কালাত খানেদের এবং ১৯৫১ সালে নেপালের রাজা ত্রিভুবন নারায়ণ শাহের ভারতে বিলয়ের প্রস্তাবও নেহরু প্রত্যাখান করেন। এর বিষময় ফল দেশকে ভােগ করতে হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে ওমানের সুলতান গ্ৰাদার বন্দর ভারতকে দিতে চাইলে নেহরু নেননি। বঙ্গোপসাগরে ১৯৫০ সালে কোকো দ্বীপপুঞ্জকে হাতে পেয়েও তিনি বর্মাকে দান করেন। চীনা নৌবাহিনী সেটা কিনে ভারতের উপর নজরদারি করছে। কথিত আছে, নেহরু ১৯৫২ সালে মণিপুরের ২২৩২৭ বর্গকিমি কাবাও ভ্যালি বর্মাকে বিক্রি করে দেন। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে চীন কারাকোরাম ও লাদাখের ৪৩,০০০ বর্গকিমি দখল করলে নেহরু বলেন, ওখানে শুকনাে ঘাসের একটি পাতাও জন্মায় না। আমেরিকা ১৯৫০ সালে ভারতকে আণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ এবং সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ীপদ গ্রহণের প্রস্তাব দিলে দূরদৃষ্টিহীন ও জোটনিরপেক্ষতার প্রতিমূর্তি নেহর সদস্যপদটি কমিউনিস্ট চীনকে দিয়ে দেন। এত ঘটনার পর ও মানুষ কংগ্রেসকমিউনিস্টদের ভােট দিয়ে ৭০ বছর ধরে দেশকে লুট করতে সাহায্য করেছে। তাইতাে এন ডি তিওয়ারী, মণিশংকর আয়ার ও দিগ্বিজয় সিংহরা-ই নেহরুর যােগ্য উত্তরসূরি হয়েছেন।
সর্দার প্যাটেল জুনাগড়ের জনসভায় বলেছিলেন, শুধু মন্দিরের জীর্ণোদ্ধারে হিন্দুরা সন্তুষ্ট হবে না, মূর্তি স্থাপনের মধ্যে দিয়েই হিন্দুর মনে স্বাভিমান ও সম্মান ফিরে আসবে যা এতদিন মুসলমান শাসকের ইসলামি শাসনতন্ত্রে নিষ্পেষিত হয়েছিল। নেহরু আবার সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার করলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর শরণাপন্ন হলেন যাতে মন্দিরের পুনর্নির্মাণ বন্ধ করা যায়। তাঁর যুক্তি ছিল, এই মন্দিরের জীর্ণোদ্ধারে মুসলমানদের আস্থায় চোট পোঁছবে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে উপেক্ষা করা হবে, অথচ সাঁচীর বৌদ্ধ মন্দির এবং দিল্লির পুরানাে মসজিদের পুনর্নির্মাণে সরকারি তহবিল থেকে মুক্তহস্তে দান দেওয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের এহেন দুর্দশা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও পাওয়া যায় না। হিন্দুর চোখে ধুলাে দিয়ে কংগ্রেস-কমিউনিস্টরা গত ৭০ বছর লুটপাট চালিয়েছে। আজও হিন্দুরা সেই কংগ্রেসকে অন্ধবিশ্বাসে ভােট দিয়ে নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে।
যাইহােক, সর্দার প্যাটেলের দৃঢ়তার কাছে হার মানলেও নেহরু হিন্দুজনতার ট্যাক্সে ভরা সরকারি তহবিলের এক পয়সাও হিন্দুমন্দির নির্মাণে ব্যয় হতে দিলেন না। কিন্তু অসমসাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কানহাইলাল মানেকলাল মুন্সিজী, যিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, আইনজ্ঞ, বিদ্বান, শিক্ষাব্রতী, ভারততত্ত্ববিদ ও গান্ধীবাদী কংগ্রেসের একনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী, তিনি হিন্দুদের কাছে দানের জন্য আবেদন করলেন। মুন্সিজী বম্বেতে ভারতীয় বিদ্যা ভবন নির্মাণ করে ভারতের বিকৃত ইতিহাসকে পুনর্লিখনের প্রয়াস জারি রাখেন। ইতিহাসকার রমেশচন্দ্র মজুমদারের বিখ্যাত প্রাচীন ভারতের ইতিহাস’-এর সম্পাদনা করে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করেছেন। রিক্ত ও রক্তাক্ত ভারতের দীনহীন হিন্দুর উদার দানেই গড়ে উঠেছিল আজকের ভব্য ও বিশালাকার সােমনাথ মন্দিরটি।
পক্ষান্তরে, এয়ার পাের্টের কাছে মমতা ব্যানার্জি নির্দ্বিধায় হিন্দুর ট্যাক্সের টাকায় সরকারি তহবিলের ১০০ কোটি টাকা সংবিধানকে কঁচকলা দেখিয়ে ‘হজ হাউস করে দিয়েছেন। এরই নাম সেকুলারিজম। ভারতে যত মসজিদ আছে সবই তৈরি হয়েছে হিন্দুমন্দির বা জমির উপর সরকারি অনুমােদনে। জঙ্গিপুরের বিকাশবন্ধু পালকে হত্যা করে তার ১৭ কাঠা জমির উপর ভব্য মসজিদ হবে। বাংলাদেশে ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির মন্দির ও বাড়িটি শত্রু সম্পত্তি ঘােষণা করে এক বিশাল মসজিদ বানানাে হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ে রামমন্দির তৈরি হলেও তৃণমূল নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও আসাউদ্দিন ওবেসিরা তাকে গুড়িয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছেন।
সর্দার প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধীর অকাল নিধনে সােমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ে মুন্সিজীর উপর। নেহরু মুন্সিজীকে ধমকের সুরে বলেছিলেন, মুন্সিজী আপনি যে মন্দির সংস্কারের কাজ করছেন সেটা একেবারে হিন্দু-পুনরুত্থানের মতাে হচ্ছে, যা আমার একেবারেই অপছন্দ। সুতরাং এর থেকে আপনি নিবৃত্ত হন। মুন্সিজী ক্রোধান্বিত হয়ে স্থান ত্যাগ করে এক দীর্ঘ পত্রে লিখেলেন, সােমনাথ মন্দির হিন্দুর সম্মান ও স্বাভিমানের প্রতীক। স্বাধীনােত্তর ভারতের সংকটপূর্ণ অবস্থায় দেশবাসীর আস্থা সুদৃঢ় করা ও আত্মশক্তি বাড়ানাের প্রয়ােজন আছে। এই চিঠি পড়ে তৎকালীন গৃহসচিব নেহরু ও প্যাটেলের ঘনিষ্ঠ ও মধ্যস্থতাকারী কেরলীয় কূটনীতিজ্ঞ ভিপি মেনন বলেন, আমি আপনার এই ঐতিহাসিক চিঠি আদ্যোপান্ত পড়েছি এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার এই অদম্য প্রয়াসকে সাফল্যমণ্ডিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। গান্ধী (৪৮) ও প্যাটেলের (৫০) অকাল প্রয়াণে, মুন্সিজী ও মেননের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি মন্দিরের উ দঘাটন সমারােহে রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদকে যােগদান থেকে নিবৃত্ত করার যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যান নেহরু। প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন সনাতনী হিন্দু। ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতে হতমনােবল হিন্দুর দুর্দশার কথাতিনি ভালােই বুঝেছিলেন। তাই নেহর বিরােধিতা ও হুমকি অগ্রাহ্য করেই সােমনাথে উপস্থিত হয়ে এক ওজস্বী ভাষণ দেন। তখনকার সমস্ত সংবাদমাধ্যমে। প্রশংসা-সহ ভাষণ প্রকাশিত হলেও নেহরুর কড়া নির্দেশে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়াে’নিশ্রুপ ছিল। ভাষণে তিনি নেহরুর প্রতি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “বিষ্ণুর নাভিনিগত ব্রহ্মার । উৎপত্তির মতােই প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অবস্থিত অটুট বিশ্বাস ও আস্থাকে পৃথিবীর কোনাে অস্ত্র, শক্তি, সম্রাট বা সেনা নিঃশেষ করতে পারবে না। প্রতিহিংসাপরায়ণ নেহরু রাজেন্দ্রপ্রসাদের শেষজীবনটা অত্যন্ত বিষময় করে তুলেছিলেন। অবশেষে ১৯৬৩ সালে পাটনার সাদাকাত আশ্রমে বিনা চিকিৎসায় মারা যান অত্যন্ত দীনহীন অবস্থায় ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
গৌরবশালী প্রাচীন ভারতে সম্পদের অভাব ছিল না। ওই সম্পদের ভাণ্ডার ছিল হিন্দু মন্দিরগুলিতে রক্ষিত অপার সােনামণিমুক্তার কোষাগার। সারাবিশ্বের ২৫ শতাংশ সােনা কেরলের পদ্মনাভন ও অন্ধ্রের বালাজী মন্দিরেই রক্ষিত আছে। সেটা জানতাে বলেই বিদেশি আক্রমণকারীরা হিন্দু মন্দিরগুলিকে লুট করতাে। আজও সেই ট্র্যাডিশন সমান তালে চলছে। আজও কেরল ও অন্ধে মন্দিরগুলিকে মুসলমান ও খ্রিস্টান শাসকরা হস্তগত করে ধন লুট করে চলেছে। অতীতে রক্তপাত করে তরবারির জোরে, আজ বিরক্তপাতে আইনের জোরে, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লুটের সেই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত আছে। সর্দারজী দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, সােমনাথ মন্দিরের জীর্ণোদ্ধারের সঙ্গে হতােদ্যোম হিন্দুর আস্থা ও বিশ্বাসেরও আজ জীর্ণোদ্ধার হলাে। বামপন্থী ঐতিহাসিকরা পাকিস্তানিদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেছেন, নেহরু একজন সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ছিলেন। আচার্য মুন্সিজী তার বিখ্যাত পুস্তক, ‘জয় সােমনাথ’-এ আক্ষেপের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, ভারতের রাজনীতিতে ভােটভিখারি কিছু রাজনেতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধার্মিক ও সামাজিক সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতে বহুসংখ্যক জনসমুদায়ের আস্থা ও বিশ্বাসকে বিধ্বস্ত করেছেন। কখনও কখনও সনাতন ধর্মে এলার্জিযুক্ত তথাকথিত হিন্দুনামধারী ধর্মনিরপেক্ষ রাজনেতারা অকারণে হিন্দুধর্মকে সাম্প্রদায়িকতার রঙে রাঙিয়ে তুলছেন। সােমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণে যেন সেটাই প্রতিপন্ন হয়েছে।
ডাঃ আর এন দাস
2020-09-08