বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একবার মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন একেবারে আসল কথাটি। তার পর অবশ্য তিনি ঢােক গিলেছিলেন। সাধারণ চোখে মক্তব ও মাদ্রাসা একটি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলিই সন্ত্রাসের আঁতুরঘর। এর গভীরে রয়েছে একটি জিহাদি আগ্নেয়গিরি, তাতে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী এক একটি জেহাদি স্ফুলিঙ্গ। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও নির্লিপ্ততা এমনকী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির ভােটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে অন্ধ ও উদাসীনতায় ব্যাঙের ছাতার মতাে এই ভয়ংকর প্রতিষ্ঠান গ্রামে-গ্রামে মহল্লায়মহল্লায় গড়ে উঠেছে। যার পরিণতিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতাে দেশগুলি প্রতিনিয়ত জেহাদি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে ।
আমাদের ভারতও এই ধ্বংসাত্মক জেহাদি কার্যকলাপ থেকে মুক্ত নয়। বার। বার এই জেহাদি আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ হয়েছে ভারতবর্ষে। ফলস্বরূপ ভারত ভাগ হয়েছে এবং ভারতের দুইদিকে দুই জেহাদি দেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং আজও প্রতিনিয়ত ভারতভূমিতে জেহাদি আঘাত হানছে। কখনও সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব চালিয়ে, কখনও-বা ইসলামি আন্দোলনের নামে ভারতভূমিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভারতভূমিকে পুনরায় খণ্ড বিখণ্ড করতে তৎপর। এদের লক্ষ্য পুনরায় ভারতভূমিতে ইসলামি শারিয়া শাসন কায়েম করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি দেশে পরিণত করা এবং ভারত দেবভূমিতে আরবি ও ইসলামি সাম্রাজ্যবাদ। স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টাব্দের পর হযরত মহম্মদ জিহাদের মাধ্যমে আরবভূমিতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল বিরােধী মতালম্বীদের ছলে-বলেকৌশলে ইসলাম অনুসারী করে তাদের বিষয় সম্পত্তি দখল করা এবং নিজ আনুগত্যে আনা। আনুগত্যে অপরাগ পুরুষদের হত্যা করে তাদের নারী শিশু ও বিষয়-সম্পত্তি গনিমত হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া (কেউ এই বিষয়ে প্রশ্ন তুললে দয়া করে কোরান হাদিস গ্রন্থ পড়ে দেখে নিতে পারেন)। হযরত মহম্মদ তাঁর নব প্রতিষ্ঠিত মত বিস্তার ও অনুসারী বৃদ্ধির জন্য দিহাদকেই ছিল সেরা পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ইসলামি শাসন পরিধি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম রক্ষার জন্য বিশ্বস্ত ইসলামি বাহিনী গঠনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিল। এই লক্ষ্যে হযরত মহম্মদ আরবের মদিনাতে প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সেখানে তার অনুসারী নব মুসলমানদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে জেহাদি সেনা তৈরি করা শুরু করেন। ভারতবর্ষে প্রথম মাদ্রাসা স্থাপন ও
বিস্তার : ভারতবর্ষে আরবীয় সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী খলিফাদের আগ্রাসন, ভারত বর্ষদখল ও ইসলামি সাম্রাজ্য স্থাপন ও বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষে মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপনের সূচনা শুরু হয়। এটা সমস্ত মুসলমান শাসকদের প্রধান ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হতাে। মহম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ দখলের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে ইসলামি আগ্রাসন ও দখলদারি শুরু করে। পরবর্তীতে সুলতান মাহামুদ ঘােরি। তৈমুর লং, মহম্মদ বিন তুগলক, সর্বশেষে বাবর ভারতবর্ষ দখল করে। সমস্ত আক্রমণকারীরা প্রথমেই ভারতের প্রাচীন। হিন্দু মন্দির ধ্বংস ও দখল করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ ও সংলগ্ন মক্তব ও মাদ্রাসা স্থাপন করে।। মন্দিরের বিষয় সম্পত্তি লুট ও দখল করে মসজিদ ও মাদ্রাসার অধিকার ভুক্ত করে। তার জলন্ত প্রমাণ সােমনাথ। মন্দির, রামজন্মভূমি মন্দির, কৃষ্ণজন্মভূমি মন্দির, কাশীবিশ্বনাথ মন্দির সহ শত শত মন্দির। এমনকী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। মােগল সম্রাট জাহাঙ্গির লাখেরাজ নামে এক কালাকানুন করে কোনাে অমুসলমান বা হিন্দু ব্যবসায়ী বা ভূস্বামীর কোনাে উত্তরাধিকারী না থাকলে ওই তার মৃত্যুর পর তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি মাদ্রাসাকে হস্তান্তর করাম নিয়ম চালু করেন। ঠিক যেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু সম্পত্তি দখল করার জন্য শত্রসম্পত্তি কালাকানুনের মতাে। মহম্মদ বিন কাসিম প্রথম ভারতবর্ষে ইসলামি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা স্থাপন করে। মহম্মদ ঘােরি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে আজমিরে মাদ্রাসা স্থাপন করে সরকারিভাবে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সুলতান ও শাসকরা সরকারি স্তরে ব্যাপকভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মাদ্রাসা স্থাপন করে। মহম্মদ বিন তুগলক মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে শুধু দিল্লিতে এক হাজার মাদ্রাসা স্থাপন করে, সুবে বাঙ্গলায় ৮০ হাজার মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করা হয় । কুখ্যাত লাখেরাজ আইনে হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি দখল করে বাঙ্গলার প্রায় একচতুর্থাংশ জমি মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। অনুমান করা যায়, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পিছনে ইসলামি শাসকদের সরাসরি সরকারি সহযােগিতা ও অনুদান সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা ভারতভূমিতে মাদ্রাসা স্থাপন করে।
ইসলামি শাসনকালে ভারতবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ঃ • মুসলমান শাসনের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং জিজিয়া কর প্রভৃতি আইনে অর্থনৈতিক নিপীড়নে ফলে যারা ইসলামে ধর্মান্তরিত হতাে তাদের মধ্যে কোরান হাদিসের শিক্ষা, ইসলামি অনুশাসন, নিয়মনীতি পালন ও আরবি ভাষা শিক্ষায় পারদর্শী করা এবং আববিী ভাষ ও আদব কায়দা ভারতীয় সমাজে বিস্তৃত করে ইসলামি সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করা।
নবসৃষ্ট মুসলমান জনগােষ্ঠীকে সঙ্ঘবদ্ধ করা ও মুসলমান শাসকদের প্রতি আনুগত্যে আনা।
• ইসলামি শরিয়া আইন ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য দক্ষ আলেম, মওলনা ,মৌলভি ও ইমাম সমাজ সৃষ্টি করা এবং সরকারি কার্যে বিশ্বস্ত সহযােগী শক্তি তৈরি করা।
•মুসলমান শাসকদের প্রতি আনুগত্যশীল ইসলামি জেহাদি সেনা গড়ে তােলা যারা স্থানীয়ভাবে ভারতীয় রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় সহযােগী শক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করা। •ইসলামি আইন ব্যবস্থার জন্য কাজি (বিচারক) নিয়ােগ করা।
ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য নতুন নতুন প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমাম ও শিক্ষক নিয়ােগ করা।
• সর্বোপরি, মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে কোরান হাদিসের শিক্ষায় ইসলামি আলােকে অমুসলমানদের প্রতি চরম ঘৃণা, বিদ্বেষ ও হিংসা নব মুসলমানদের মনে রােপণ করা।
ব্রিটিশ শাসনে ভারতে মাদ্রাসা ব্যবস্থার অবস্থা : ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ইসলামি
শাসনের আইন কানুন শিথিল হয়। বিশেষ করে মসজিদ মাদ্রাসার জন্য সরকারি অনুদান বন্ধ হয় এবং কুখ্যাত লাখেরাজ আইন বাতিল হয়। ফলে অর্থাভাবে মাদ্রাসা সংখ্যা দিনে দিনে হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া আধুনিক সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হওয়ার জন্য সমস্ত প্রকার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে।
ভারতে নবরূপে পুনরায় মাদ্রাসা স্থাপন কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য :
ইসলামি শাসনের পতনের পর মুসলমান সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত অনুদানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পুনরায় মাদ্রাসা স্থাপনে সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা গড়ে উঠে কিন্তু মূল উদ্দেশ্য একই থাকে।
• ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় ভারতে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত করা।
•ভারতের মুসলমানদের একত্রিত করে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
• দেশে সরকারি আইনের সমান্তরালে শারিয়া আইন ব্যবস্থা মুসলমান সমাজে প্রচলিত রাখা, যা আজও স্বাধীন ভারতে বিদ্যমান।
• মুসলমানদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তােলা এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে এক জোটবদ্ধ শক্তি তৈরি করা।
• ধ্বংসাত্মক গণআন্দোলন গড়ে তুলে নির্বাচিত সরকারকে সংকটে ফেলে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা, যা আজও স্বাধীন ভারতে ঘটে চলেছে।
•পুনরায় ভারত বিভাজন করে মুসলমান প্রধান অঞ্চলে আলাদা মুসলমান দেশের দাবি তােলা।
• দেশবিরােধী শক্তির সঙ্গে সমঝােতা ও বােঝাপড়া করে মুসলমান স্বার্থ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা।
ভারতে প্রচলিত মাদ্রাসা সমূহ :
•কওমি মাদ্রাসা :মহা বিদ্রোহের পর ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে মওলনা কাসেম নানুতবি উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে দারুল উলুম দেওবন্দ নামে কওমি মাদ্রাসা স্থাপন করে এবং ভারতবর্ষে পুনরায় ইসলানি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন ধারার ইসলামি আন্দোলন শুরু করে। বর্তমান এই মাদ্রাসার অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে কোনাে ধরনের ইসলামি আন্দোলনে এদের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে।
• খারিজি মাদ্রাসা : কওমি মাদ্রাসার মতাে সরকারি অনুমােদন ছাড়া মুসলমান সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযােগিতায় গড়ে উঠেছে যাদের কাজকর্মে কওমি মাদ্রাসার মতাে সাদৃশ্য রয়েছে।।
• অলিয়া মাদ্রাসা : মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে আধুনিক সাধারণ শিক্ষা প্রসারের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস ১৯০৮ সালে কলকাতায় সরকার অনুমােদিত ও সহযােগিতায় আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করে। উদ্দেশ্য ছিল কওমি ও খারিজি মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষা দিয়ে শুধুমাত্র আলেম, মওলানা, মৌলভি ও ইমাম তৈরি করা এবং ইসলামি আন্দোলন গড়ে তােলা যা ব্রিটিশ শাসকদের মাথাব্যথার কারণ ছিল। দ্বিতীয় কারণ ছিল, ওই সময়ে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত যুবসমাজ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছিল, ফলে মুসলমান যুবসমাজকে হিন্দু যুবসমাজ থেকে পৃথক করা এবং নিজেদেরকে মুসলমানপ্রেমী হিসেবে উপস্থাপন করা। যা পরবর্তীতে মুসলমান সমাজে ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে ভারত ভাগের মানসিকতা গড়ে উঠে। এতে কিন্তু কওমি ও খারিজি মাদ্রাসার কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারেনি, এখনও আলিয়া মাদ্রাসা স্বাধীন ভারতে সরকারি অর্থানুকূল্যে পরিচালিত হয়ে আসছে।
বর্তমান মাদ্রাসাগুলির ভূমিকা ও কার্যকলাপ : •বর্তমানে উত্তর পূর্ব ভারত ও পশ্চিমবঙ্গকে ভারতভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা ও ‘বৃহত্তর ইসলামি বাংলাদেশ’ গঠন করা।
•উত্তর পূর্ব ভারত থেকে জম্মু-কাশ্মীর পর্যন্ত সর্বশেষ পাকিস্তান পর্যন্ত ভারতের সীমান্তরেখা বরাবর জেহাদি ইসলামি করিডাের সৃষ্টি করা।(নেপাল ভারত সীমারেখা বরাবর বিহার উত্তরপ্রদেশ উত্তরখণ্ড হিমাচলপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীর)
•সর্বোপরি, ভারতকে পুনরায় মুসলমান দেশে পরিণত করা ও ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত করে দারুণ ইসলামের সাম্রাজ্য স্থাপন করা ও প্যান ইসলামিজম্ সফল করা।
কার্যকলাপ :
• উত্তর পূর্ব ভারত অবস্থানগত ভাবে ভারতের বৃহৎ ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সরু করিডাের (চিকেন নেক বলে) দ্বারা সংযুক্ত। এই চিকেন নেকের একদিকে বাংলাদেশ এবং অন্য দিকে নেপাল এছাড়া উত্তরপূর্ব ভারতের সাত রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমারেখা দ্বারা যুক্ত। পাহাড়ি রাজ্য হওয়ার কারণে সহজেই বাংলাদেশ থেকে মুসলমান অনুপ্রবেশ ঘটছে যা ব্রিটিশ ভারত আমল থেকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হয়েছে।
• বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি, আগামী ২৫ বছর বাদে এই জনসংখ্যা এসে দাঁড়াবে ৩০ কোটি। আবার বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র ও বড়াে নদী উপকূল অঞ্চল সমুদ্র জলে স্থায়ীভাবে প্লাবিত বা নিমজ্জিত হবে, ফলে বাংলাদেশের ১/৩ ভূমি সমুদ্র বানদী গ্রাসে চলে যাবে এবং বসবাস অযােগ্য হয়ে পড়বে। এরফলে বাংলাদেশের এই বিপুল জনসংখ্যা কর্মসংস্থান বা নিরাপদ বসবাসের জন্য সারাপৃথিবী ব্যাপী অনুপ্রবেশ করছে। উত্তরপূর্ব ভারত সবচেয়ে সহজে অনুপ্রবেশ ও নিরাপদ স্থান, তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় মুসলমানদের সহায়তায় উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে অবাধে অনুপ্রবেশ করছে দীর্ঘদিন ব্যাপী প্রতিনিয়ত।
দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নবাব সল্লিমুল্লাহর নেতৃত্বে ব্রিটিশ শাসকদের প্রভাবিত করে বৃহত্তর বাঙ্গলাকে বিভক্ত করে অসম-সহ পূর্ববঙ্গকে আলাদা মুসলমান প্রভাবিত ইসলামি বঙ্গপ্রদেশ সৃষ্টি করে। লক্ষ্য ভারত ভাগ করে মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাসভূমি, তার জন্য পাকিস্তান দাবির আন্দোলন গড়ে তােলে এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ লগ্নে ১৯৪৬ সালে এক ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট মাত্র ৬ কোটি মুসলমান ভারত ভাগ করে পাকিস্তান নামক ইসলামি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে
নিতে সমর্থ হয়। এই হিংসাত্মক আন্দোলনে সহযােগীশক্তি হিসেবে মাদ্রাসার ভূমিকা প্রধান। এটাই আধুনিক ভারতে মাদ্রাসা স্থাপনে তাদের স্বপ্ন পূরণে ভারতবর্ষের দু’প্রান্তে দুটি ইসলামি দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
• এখনও তাদের দৃষ্টিতে সারা ভারতে ইসলামি শাসনের স্বপ্ন বাকি আছে। সেই লক্ষ্যে স্বাধীন ভারতে তারা কাশ্মীর দিয়ে শুরু করেছে এবং কাশ্মীর হিন্দু শূন্য করতে সমর্থ হয়েছে।
• মাদ্রাসার মাধ্যমে জেহাদি পরিকল্পনা ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই শুরু করেছে। বিশেষভাবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানি দোসর জেহাদিদের অতি সক্রিয়তা উত্তরপূর্ব ভারত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতে জেহাদি অনুপ্রবেশ বিগত ৫০ বছর ধরে ঘটে চলেছে। যার পরিণতিতে আজ উত্তরপূর্ব ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা ২৫ শতাংশ, অসমে ৩৫ শতাংশ , পশ্চিমবঙ্গে ২৭ শতাংশ (১৯ শতাংশ) এবং পার্শ্ববর্তী নেপালে ৫ শতাংশ (২ শতাংশ)। সহজেই অনুমেয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা কী ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এই অনুপ্রপ্ৰেশের কিছু প্রক্রিয়া বা পর্যায় আছে যা মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত আলেম, মৌলভি ও ইমামরা নীরবে পরিচালনা করে আসছে।
পর্যায় বা প্রক্রিয়া : • তারা সহজ সরল পাহাড়ি জনজাতিদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, আবার অনেকেই স্থানীয় মেয়েদের লাভজেহাদের ফঁদে ফেলে বিয়ে করছে এবং বেহিসেবি সন্তান উৎপাদন করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করছে।
• ভারতের অন্যান্য স্থানে থেকে কাজের সন্ধান গিয়ে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানরা ওই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি করছে।
• এটা শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবী ব্যাপী এই প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম কর্মসংস্থানের জন্য যেভাবে হােক যে কোনাে দেশে অনুপ্রবেশ করাে। ধর্ম পালনের নামে মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করাে। স্থানীয়দের বিয়ে করাে, সন্তান সন্ততি বৃদ্ধি করাে। কোরান হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামি শিক্ষা দিয়ে জেহাদি মগজধােলাই করে সদ্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তােলাে। রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করাে যা ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বুলগিরিয়া, বেলজিয়াম, স্পেন, সুইডেন, কানাডা, প্যারাগুয়ে, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে শুরু হয়েছে। এই নীরব জেহাদি মুসলমানরা বিশ্বের সব দেশে মসজিদ মাদ্রাসার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে ঢুকে পড়ছে। ফিলিপাইন্স, থাইল্যান্ড জাপান ইন্দোনেশিয়া, তিউনিসিয়া, সােমালিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান সিরিয়া ইয়েমেন, বসােনিয়া, কসােবা চেচনিয়া প্রভৃতি দেশসমূহে যেসব সন্ত্রাসবাদী ইসলামি কার্যকলাপ চলছে তার মূলে রয়েছে মক্তব ও মাদ্রাসা কেন্দ্রিক শিক্ষা।
সমস্ত প্রকার ইসলামি সন্ত্রাসকাজে মাদ্রাসা সক্রিয় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে :
• মাদ্রাসা পড়াশােনা করা ছাত্ররা সর্বস্তরের মুসলমানদের সঙ্গে ধর্মীয় আবরণে ‘হুজুর হিসেবে আস্থা অর্জন করে।
•ভারতবর্ষে যত ইসলামি সংগঠন আছে যেমন—মুসলিম লিগ, জামাত-ইইসলাম, তবলিগ জামাত, জামাতই ওলেমা হিন্দ, SIMI, NDE, PFI AIMIM ,উকেমা পরিষদ, ইমাম সংগঠন স্থানীয় পর্যায়ের মসজিদ মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত থাকে। এমনকী প্রচলিত সাধারণ রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, বিভিন্ন আঞ্চলিক দল তাদের বিচরণ ক্ষেত্র। এই সমস্ত সংগঠনে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিভিন্ন রকম ভূমিকা পালন করে , কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন – দারুল ইসলামের আন্দোলন সঙ্ঘটিত করা এবং সমস্ত প্রকার ইসলামি আন্দোলনে প্রধান সহযােগী শক্তি হিসেবে কাজ করা ও উল্লেখযােগ্য ভাবে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ করা।
• এই মাদ্রাসার ছাত্রসমাজের সক্রিয় ভূমিকায় ভারতভূমিতে ওয়াহাবি,খিলাফত, ফরাসি, মাপেলা ও পাকিস্তানের দাবি প্রভৃতি হিংস্র ভয়ংকর ইসলামি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ১৯৪৬ সালে তারা কলকাতা ও নােয়াখালিতে হিন্দুদের রক্তে মাটি লাল করে দিয়েছিল। বর্তমানকালে শরিয়া আইন রক্ষা আন্দোলন, শাহাবানু মামলা, তিনতালাক বিরােধী আইন পাশ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, সিএএ এবং এনআরসি বিরােধী, এমনকী সলমন রুশদি ও তসলিমা নাসরিন বিরােধী ইসলামি আন্দোলনে মাদ্রাসার ছাত্রসমাজের সক্রিয় উপস্থিতি উল্লেখযােগ্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে ও সমস্ত প্রকার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের বিরােধিতায় এবং সংখ হিন্দু নির্যাতন ও বিতাড়নে মাদ্রাসার শক্তিশালী ভূমিকা ইতিহাস খ্যাত। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতাে মুসলমান দেশসমূহে যে জেহাদি শক্তি পুনর্জন্ম এবং সব দেশেই যে কোনাে ধরনের ইসলামি আন্দোলনে মাদ্রাসার শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রসমাজের উপস্থিতি ও ভূমিকা অগ্রগণ্য।
মক্তব ও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রধান মূল লক্ষ্য। হযরত মহম্মদের জীবনী ও শিক্ষা, কোরান হাদিসের শিক্ষা হলাে ইসলামি শিক্ষার মূল কথা। একমাত্র ইসলাম, সত্য জগতের বাকি সব মিথ্যা ও ভুল। তাই সমস্ত মানব জাতিকে ইসলাম কবুল বা স্বীকার করাতে হবে এবং নবি মহম্মদ ও কোরান হাদিসের উপর আস্থা ও বিশ্বাস বা ইমান স্থাপন করতে হবে। ইসলামে আনুগত্য এনে মুসলমান হতে হবে। যারা ইসলাম স্বীকার ও গ্রহণ করবে না তারা সকলে অবিশ্বাসী, কাফের বা মুসরিক। তারা নিকৃষ্টতম পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। তাদের জন্য চরম শাস্তির বিধান রয়েছে। কোরান অনুসারে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করা মুমিন মুসলমানদের জন্য অবৈধ। মুসলমান শুধু মুসলমানদের জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ। কামনা করবে, সমগ্র মানব জাতির জন্য নয়। অবিশ্বাসী ও অমুসলমানদের জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা অবৈধ, এমনকী তাদের মৃত্যুর পরও নয়। তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রার্থনা করা হয়। এটাই ইসলামি শিক্ষা ও বিধান। মুসলমানদের প্রধান কর্তব্য অবিশ্বাসী ও অমুসলমানদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু যুদ্ধ করে তাদের বিষয় সম্পত্তি লুটপাট করে দখল করা।
মক্তব ও মাদ্রাসাগুলিতে সরল কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের শিশু বয়স থেকে ধর্মীয় শিক্ষার নামে এরূপ জেহাদি শিক্ষা প্রদান করা হয়। যদি ছাত্র-ছাত্রীরা মাদ্রাসার কোরান হাদিশের শিক্ষা প্রকৃতভাবে আত্মস্থ ও হৃদয়ঙ্গম করে তারা চরম জেহাদি মানসিকতা সম্পন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।
ফলে অনুমেয়, মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অমুসলমানদের প্রতি বিনা কারণে এক প্রকার জেহাদি ঘৃণ্য হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে যা কোনাে সভ্য দেশ ও সমাজের কাম্য নয়, বরং মারাত্মক ভয়ংকর। যে কোনাে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে একান্তে। আলােচনায় তার পরিচয় পাওয়া যায় এবং যে কোনাে প্রকার ইসলামি আন্দোলনে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ভারতের জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলির উদাসীনতা, ভােটব্যাঙ্কের রাজনীতি এবং সাধারণ ভারতবাসীর মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা ও তাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অজ্ঞতা ও নির্লিপ্তভাবের কারণেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শত শত মক্তব ও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। যা ভারতের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষায় ভয়ংকর প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে। যে মক্তব ও মাদ্রাসা শিক্ষা আমাকে ঘৃণা বিদ্বেষ নির্যাতন নিপীড়ন করতে শিখাচ্ছে, আমার বিষয় সম্পত্তি লুট করছে, আমার ঘরে অগ্নি সংযােগ, আমার মা-বােনের উপর অত্যাচার, এমনকী আমাকে হত্যা করার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেই মাদ্রাসা আমার আপনার কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত হচ্ছে। কী বিচিত্র আমাদের দেশ!
চন্দন রায়
2020-09-08