প্রণববাবু বাঙ্গালিয়ানার আইকন


প্রণব মুখােপাধ্যায়ের পরলােক গমনের পরেও, অনেকে তাকে ক্রাইসিস ম্যানেজার, চাণক্য ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করছেন। কিন্তু আমি পেয়েছিলাম একদম ভিন্ন রূপে।
প্রণববাবু ছিলেন, মার্জিত, সদালাপী ও সৌজন্য বােধসম্পন্ন এক নিখাদ বাঙ্গালিয়ানায় ভরপুর এক মানুষ। তার কাছে পেয়েছি দাদার স্নেহ, পিতার উপদেশ এবং ভুল বা অনৈতিক কর্মে কঠোর ভাবে তিরস্কার। কেউ কিছু শিখতে বা জানতে চাইলে বিমুখ করেছেন এমনটা কদাপি দেখিনি। রাজনীতি ও সামাজিক বিষয়ে রেফারেন্স। সহকারে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত। ১৯৮৫ সালে এক নির্বাচনী জনসভায় তার বক্তৃতা শুনে আকৃষ্ট হই এবং সেই গুণমুগ্ধতা আজও অম্লান। তখন সিনিয়রদের বলয় ছিল, ভেদ করতে পারতাম না। পরে, ১৯৮৯ থেকে ২০১৯ অবধি নৈকট্য বেড়ে সম্পর্ক অনেক সাবলীল হয়েছিল। ২০০৭-২০১০ সালে সর্বভারতীয় যুব সংগঠনের কাজের সুবাদে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। সন্ধ্যায় ১৩নং তালকাতােড়া রােডের বাড়িতে প্রায়ই ঢু মারতাম। গেলেই যে দেখা পেতাম এমনটা নয়, কিন্তু বহু উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক বিষয়ে অনেক কাছ থেকে সাক্ষী থেকেছি। শিক্ষার ভাড়ার অফুরন্ত। ওখানেই আমায় বলেছিলেন, ‘জীবনে ধৈর্যের ভূমিকা অসীম। রাজনীতি এক অনিশ্চিত বিষয়, পূর্ণ সময় ও দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে রাজনীতিতে আসা উচিত নয়।
সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম গীতার সারাংশ। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, কর্ম করে যাও, ফলে আশা করাে না। তার জীবনের কর্মযােগ আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে চড়াই-উতরাই পার করে এগিয়ে গেলে ফল অনায়াসে মেলে। আর সেই ফল শুধু ব্যক্তিসত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, হয়ে ওঠে সমগ্র জাতির অহমিকা। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়ের পর জাতীয় রাজনীতিতে শেষ বাঙ্গালি মুখ চলে গেলেন, ঠিক যে ভাবে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন বাঙ্গালিয়ানার আইকন।
দেবাশিস পাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.