কালীভক্ত রবিঠাকুর ও মুর্শিদাবাদের অনুপ্রবেশ সমস্যা।

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান মুর্শিদাবাদের এক জ্বলন্ত সমস্যা। একেই মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষ কাজের জন্য সারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে বাধ্য হন। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা মুর্শিদাবাদে এসে জিহাদী কার্যকলাপ করে এবং এখানকার নিরীহ মুসলিমদের পয়সার লোভ দেখিয়ে হিংসাত্মক কাজে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করে। তার প্রমাণ পাওয়া গেছৈ খাগড়াগড় কান্ডে। এই খাগড়াগড় কিন্তু মুর্শিদাবাদের জেলাশহরে নিখ্যাত খাগড়া নয়, বর্ধমানের খাগড়াগড়। মুর্শিদাবাদ দিয়ে প্রবেশ করে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এই বাংলাদেশী জিহাদীর দল।

এই জিহাদী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, নিজের জীবনরক্ষা ও মা কালীর মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন এক অকৃতদার কালীসাধক শ্রী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়
রবিঠাকুর, যাঁর সম্পূর্ণ নাম রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বাড়ি কাশিমবাজার, বহরমপুর, এই সামান্য নামের ব্যক্তির অসামান্য কর্মকাণ্ড যারা জানেন তারা সহজে এই নাম ভুলতে পারবেন না। রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মুর্শিদাবাদের মানুষ রবিঠাকুর নামে এক ডাকে চেনেন। রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ জেলার কাশিমবাজার অঞ্চলের এক প্রাক্তন জমিদার বংশের ছেলে। তার জন্ম গ্রহণ বা জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা নেই।
রবীন্দ্রনাথ বাবু একজন অকৃতদার কালী সাধক, কাশিমবাজার রেলস্টেশন সংলগ্ন আনন্দময়ী কালিবাড়ি ছিল তাঁর সাধনার স্থল।একজন সাধারণ শাক্ত সাধকের মতোই সাধারণ ছিল তাঁর জীবন।কিন্তু তিনি বিখ্যাত হন যে কর্মকাণ্ডের কারণ সেটা এখন বলি।
ঘটনা ১৯৮৮ সালের, মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ সংক্রান্ত। সেইসময় সংখ্যাগুরু মুসলিম জেলা মুর্শিদাবাদের উগ্র মুসলিম সংগঠন গুলি কাটরা মসজিদ সাধারণ মুসলমানদের অধিকারের জন্য জঙ্গি আন্দোলন শুরু করেছিল।যদিও প্রশাসনের তরফে কাটরা মসজিদ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসাবেই রাখবার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিল
মুসলিম সংগঠন গুলি এই কারণে রাজ্যজুড়ে প্রচার চালাচ্ছিল এই উদ্দেশ্য সফলের জন্য মুসলিম সংগঠন থেকে জনাব ইয়াহিয়া নামের এক জঙ্গি নেতা ২৪ জুন ১৯৮৮ সালে শুক্রবার কাটরা মসজিদে একটা জমায়েতের আহ্বান জানায় তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় মুসলিমরা চুপ থেকে বাইরে থেকে মুসলিম জনতা এনে কাটরা মসজিদ দখল করা।
এই কারণে তারা রচনা করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি মুসলিমকে।বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে প্রবেশ করে প্রথমে ছড়িয়ে পরে তারপর ঘটনার দিন মানে ২৪শে জুন ১৯৮৮ সালে সকালে ট্রেনে করে রওনা হয় মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে। অনুপ্রবেশকারীরা ভুল করে নেমে পরে মুর্শিদাবাদের আগের রেলস্টেশন কাশিমবাজারেনেমেই শুরু করে সংঘবদ্ধ আক্রমণ। হিন্দু দোকান, বাড়িঘর ভাঙতে ভাঙতে প্রচুর হিন্দুকে আক্রান্ত করে তারা প্রবেশ করে কাশিমবাজার শহরের অভ্যন্তরে।
ভাগীরথী পুরাতন একটি নদীখাতের পাশেই আনন্দময়ী মন্দির, রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সেই মন্দিরের নিত্য পূজারী। অন্যদিনের মতন সেই দিনও রবীন্দ্রনাথ তখনকার নির্মাণাধীন মন্দিরে পূজায় ব্যাস্ত ছিলেন।


জনশ্রুতি এমন, উন্মত্ত মুসলিম জনতা ক্রমে প্রবেশ করে মন্দির প্রাঙ্গণে সেইসময় রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় একাগ্রচিত্তে মাতৃ আরাধনা রত ছিলেন।মুসলিমরা পিছন থেকে তাকে আঘাত করেন। তিনি একবার পিছনে ফিরে তাকান তারপর মন্দিরে রাখা বলির খড়গ হাতে তুলে নেন জয় মা ধ্বনিতে, তারপর শুরু করেন রণতাণ্ডব প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী তাঁর তাণ্ডবের প্রকোপ ছিল ভয়ানক। যবন রক্তে লাল করে দেয় মন্দির নিকটস্থ জলাভূমি। প্রচুর যবন আক্রমণকারীকে একাই শেষ করে জলে ভাসিয়ে দেন আর রক্ষা করেন কাশিমবাজারের হিন্দু জনসাধারণকে। পরবর্তীকালে মন্দির নিকটস্থ জলভূমি স্থানীয় হিন্দুরা নাম দেন কাটিগঙ্গা কারণ ঐ জলেই রবিঠাকুরের নেতৃত্বে কুটিকুটি করে কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল আক্রমণকারী বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের।
এই ঘটনার পরে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রচারের আলোতে আসেন, মুসলিম আক্রমণকারীদের পরিকল্পনা বিফলে যায়। পুলিশ মামলা করে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামে, রাজ্য সরকার কমিশন বসায় কিন্তু কিছুই করতে পারা যায়নি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তার কারণ নিহত প্রত্যেকটি আক্রমণকারী ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী তাদের বধের জন্য বিচার করতে গেলে সরকার ও মুসলিম সংগঠন গুলি নিজেরাই বিপদে পরতো, তাই মামলা ধামাচাপা দেওয়া হয়। উগ্র মুসলিম সংগঠনের পরিকল্পনা বিফল হয়।
এই হল কাশিমবাজারে ত্রাতা বীর সাধক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বা রবিঠাকুরের বীরত্বের কাহিনি যা আমাদের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেছে।

নওদার আলমপুরের নিমতলা কালীমন্দিরের মা কালীর মূর্তি পুড়িয়ে দেওয়ার পর পুলিশ যে ছৈলেটি ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি এনেছিল, তাকে গ্রেফতার করে। কালীমন্দিরের পরিচালন সমিতির শুকদেব বাজপেয়ী একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে খুন সঙ্গতভাবেই তিনি সম্প্রীতির পক্ষে আবেদন রেখেছেন। প্রশাসনের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রতিমার পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে তিনি সম্ভাবনার হাতে ছৈড়ে দিয়েছেন, সেটাও প্রশাসনের নির্দেশে কী না সেটা জানা যায়নি যদিও। ওনাকে যোগাযোগ করা হলে ওনার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন এখন নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। অতীতে স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছৈন দুষ্কৃতিদের, গার্ডেনরীচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কলকাতা কর্পোরেশনের বরো চেয়ারম্যান মুন্না ইকবালের নির্দেশে শেখ সুহান গুলি করে হত্যা করে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীকে। সে মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয় নি। কাজেই পুলিশের নিরপেক্ষতা নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক অতীতে পুলিশ যেমন কোনো তদন্ত না করেই হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক শ্রী দেবেন্দ্রনাথ রায়ের হত্যাকে আত্মহত্যা রুপে চালাতে চাইলেও, বিজেপির আন্দোলনের পরে মাবুদ আলিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়।
সীমান্তে বর্ডার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অধিগ্রহণ করতে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না, এই তথ্য এখন সর্বজনবিদিত। কাজেই এই অপদার্থ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমাজ একত্রিত হয়ে রুখে না দাঁড়ালে মুর্শিদাবাদে জিহাদী কার্যকলাও বৃদ্ধি পাবেই, এবং তার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুস্থ পরিবেশ বহুলাংশে বিঘ্নিত হবে তা বলাই বাহুল্য।

পার্থপ্রতিম ঘোষ (Parthapratim Ghosh)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.