কমিউনিস্টরা ভারতের পক্ষে দুষ্ট ক্ষত নিক্ষিপ্ত হচ্ছে কালের গহ্বরে


পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে যত ভ্রষ্ট, লােভী ও নৃশংস নেতা হয়েছেন তার মধ্যে জ্যোতিবাবুর নাম সবার আগে থাকবে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা কাশ্মীরের দেশদ্রোহী ফারুক আবদুল্লা ২০১০ এ জ্যোতিবাবুর মৃত্যুর সময়ে বলেছিলেন, ‘বাবার মতাে জ্যোতিবাবু, আমাদের কাছে বিরাট অবলম্বন ছিলেন। কাশ্মীরে ১৯৮৯ সালে যখন পণ্ডিতদের নরসংহার হচ্ছিল, ফারুক তখন লন্ডনে গলফ খেলায় এবং জ্যোতিবাবু ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে ম্যাসেজ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশ যুদ্ধজয়ের স্মৃতি হিসাবে ১৯৭১ সালে ফোর্ট উইলিয়ামে স্মারক-স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনার শুধু বিরােধিতা নয়, ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে শহিদ জওয়ানদের শব গ্রহণ করতে এবং তাদের হতভাগ্য বিধবাদের সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারও অস্বীকার করেন।
সাঁইবাড়ি, আনন্দমার্গী, বানতলা ও মরিচঝাপি হত্যাকাণ্ড জ্যোতিবাবুর সময়েই হয়েছিল। পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ প্রাপ্ত বিশ্ববিখ্যাত সাঁতারু মিহির সেন ও তার ব্রিটিশ স্ত্রী বেলা উইগার্টেন জ্যোতিবাবুর নির্বাচন প্রচারে শামিল হওয়ায় সিটুর গুন্ডাদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। জ্যোতিবাবু ভাগ্যিস প্রধানমন্ত্রী হননি! তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত সাত ভাগে বিভক্ত হয়ে যেত। প্রাক্তন আইবি প্রধান অরুণ মুখার্জির আত্মজীবনীতে তাঁর দুর্নীতির কথা উল্লেখিত আছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র তিব্বতীয়দের উপর জ্যোতিবাবুর পথনির্দেশক মাও সেতু ঙ্গের নির্মম অত্যাচারের ঘটনা মেলিসা মাথিসনের হলিউড ফিল্ম ‘কুন্দন’ দর্শকের চোখে জল এনে দেয়।
জামান-ইহুদি কার্ল মার্ক্স ১৮৬৭ সালে। ঘােষণা করেন, শােষক ধনীরাই দরিদ্রদের দুর্দশার কারণ। মার্ক্স রক্তক্ষয়ী বিপ্লব ও সমাজবাদের সাহায্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। আকর্ষক এই বামৈশ্লামিক স্লোগান অবশ্যই শ্রুতিমধুর। দাঙ্গা ও ধর্ষণকারী জেহাদিরাও একই কথা বলে। মার্ক্সবাদ ও ইসলাম উভয়ই হিংসাত্মক উ পায়ে বুর্জোয়া-ধনী ও প্রলেতারিয়েত-দরিদ্রের বৈষম্য মিটানাের অন্যতম পন্থা। কল্পলােকে স্বপ্নমগ্ন হয়ে বর্তমানের শান্তিময় সুন্দর পরিবেশকে ধ্বংস করার উন্মত্ততার মধ্যেই ওই দুই ইজমের’ বীজ নিহিত। তাদের সঙ্গে তাত্ত্বিক তর্ক হলে, হয় মার খাবেন নয় মারা যাবেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে একথা বলছি। হাজার বছরের দাসত্বের পর দেশের রক্তক্ষয়ী বিভাজনে ঐতিহ্যময় ভারতের গৌরবশালী ইতিহাসে অনভিজ্ঞ প্রথম প্রধানমন্ত্রী দূরদৃষ্টিহীন পণ্ডিত নেহরু পাশ্চাত্য সভ্যতা এবং সােভিয়েত সাম্যবাদে কুঁদ হয়ে ছিলেন। স্বৈরাচারী শাসক লেনিন ও স্টালিনই ছিলেন তাঁর আদর্শ। রাশিয়ার সাম্যবাদ ১৯১৭ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ১ কোটি নির্দোষ লােককে হত্যা করে। স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০০তে বলেছিলেন, মুসলমানরা ৪০ কোটি হিন্দুকে মুর্তিপূজার অপরাধে হত্যা করেছে। স্বাধীনােত্তর ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ইসলামি পণ্ডিত মৌলানা আবুল কালাম আজাদের কাছে হিন্দুরা কী আশা করছিল? স্বাধীনতার পূর্বেই কমিউনিস্টরা ভারতের পক্ষে এক হানিকর দুষ্টক্ষতের মতাে হয়ে উঠেছিল। নেতাজীকে তােজোর কু কু র এবং রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়াকবি বলা কমিউনিস্টরা ব্রিটিশদের হাতে অবলীলায় বিপ্লবীদের তুলে দিত। ১৯৪০ সালে মুসলিম লিগ ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা করে। তাদের পাকিস্থান নামে ইসলামিক দেশের কল্পনা যা বাস্তবে গাজওয়া-ই-হিন্দের ব্লুপ্রিন্ট, তাকেই কমিউনিস্টরা অকুণ্ঠভাবে সমর্থন জানিয়েছিল।
হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষকে আরও তীব্র করে তুলেছিল কমিউনিস্টরা। শক্তিশালী শত্রুকে বিধ্বস্ত করার ডিভাইড অ্যান্ড রুলের পদ্ধতি ম্যাসাডােনিয়ার দ্বিতীয় ফিলিপ থেকে শুরু করে, জুলিয়াস সিজার, নেপােলিয়ান, ম্যাকিয়াভেলি ও ইমানুয়েল কান্টও লিখে গেছেন। আকবর ও নেহেরুও বাদ যায়নি ওইলিস্ট থেকে। ব্রিটিশদের কাছে শেখা ওই পদ্ধতির দ্বারাই ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সাল জ্যোতিবাবু ২৩ বছর গদি আঁকড়ে ছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিখণ্ডিত ভারতে ৯৫ শতাংশ মুসলিম লিগ ও পাকিস্থানের সমর্থকরা ভারতেই থেকে যায়।
একদা মস্কোতে কমিন্টার্নের নেতা ফিলিপ স্ক্যাট লিখেছেন, নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ভারতের কমিউনিস্টরা অবৈধভাবে রাশিয়ার টাকা আত্মসাৎ করতাে। মস্কোপ্রেমে মশগুল নেহেরু জেনেও কিছু বলতেন না। কমিউনিস্টরা রামজন্মভূমি বিবাদে সর্বদা বাবরপ্রেমীদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে হিন্দুদের সঙ্গে চরম শত্রুতা করেছে। স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদিও তাদের অবদান ছিল না, কিন্তু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী তকমাধারীরা গত ৭০ বছর ধরে ভারতের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রগুলি কবজা করে ভারতবিরােধী কাজকর্ম চালিয়ে এসেছে। তাদেরই একজন হিন্দুবিদ্বেষী প্রাে-পাকিস্থানি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অমর্ত্য সেন ট্যাক্সহীন মাসিক ৫ লক্ষ টাকা বেতন নিতেন। সত্যের অপলাপকারী চীন ও রাশিয়ার মতােই ভারতের কমিউনিস্টরা মিথ্যার মােড়কে ইতিহাসকে শুধু বিকৃতি করেই ক্ষান্ত হয়নি; তারা মুঝে ফেলতে চেয়েছে আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বর্ণময় গৌরব গাথাকে। বেদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত হয়েছে তাদের কাছে অচ্ছুত। বুদ্ধবাবুর মসজিদ নামক আঁতুড় ঘরের জেহাদিরা আজ সরস্বতী পুজার স্থলে নবি দিবস পালনের হুমকি দিচ্ছে। মমতার ব্যানার্জির প্রশ্রয়ে। আমার মনে আছে, মাওবাদী লুম্পেন নকশালরা কীভাবে আমাদের স্কুলের অফিসঘর, লাইব্রেরি পুড়িয়ে ও স্বামীজির মূর্তিটাকে ভেঙ্গে দিয়েছিল।
ইংরেজরা যখন দেশ ছাড়ে সেসময়ও জিডিপির নিরিখে মহারাষ্ট্রের পরই পশ্চিমবঙ্গ ছিল সবথেকে উন্নত ও উর্বর ভূমি। দেশভাগের পর ধান ও পাটের সবচেয়ে উর্বর জমিগুলি বাংলাদেশে চলে যায়। গঙ্গাতীরে হাওড়ায় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জুটমিল। পূর্ববঙ্গোর পাটের আমদানি বন্ধ হলে পাটজাত উৎপাদনও ব্যাহত হল। কারখানাগুলি ৭০ এর দশকে বাম জামানায় নিরন্তর ঘেরাও ও ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে গেল। সত্তর হাজার কলকারখানার কঙ্কাল আজও দেখা যায় সেখানে। মেডিক্যালে পড়ার সময় আমি জুটশ্রমিকদের আকুপাংচার ও ফ্রি ওষুধ দিয়ে সেবা ক্লিনিক চালাতাম।।
কংগ্রেস আমলে কিছু উন্নতি হয়েছিল। কল্যাণী ও দুর্গাপুরের শিল্পোন্নয়নে ছিল বিধানচন্দ্রের অবদান। টাটারা তাদের আর্থিক রাজধানী কলকাতায় আনতে চেয়েছিল, কারণ তাদের জামসেদপুরের খনিগুলি ২৭৮ কিমি. ছিল। ৬০-এর দশকে নকশালিদের হিংসাত্মক বিপ্লব দমনে অসমর্থ কংগ্রেসের কারণেই সিপিএম হিংসার রাজনীতি শুরু করে দেয় যা পরবর্তীকালে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আজ যা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন জয়ের উপযুক্ত মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদব ও তাঁর সম্বন্ধী মুলায়ম সিংহ যাদব সিপিএমের কাছ থেকেই এই শিক্ষা নিয়েছিলিন। তাই গােপনে আঁতাত বজায় । রেখে রাজ্যে ও কেন্দ্রে ৭০ বছর লুটমার। জারি রেখে চলেছিল মুসলিম ও কমিউনিস্ট সমর্থিত এই সব আদর্শ ও নীতিহীন প্রাদেশিক দলগুলি। শ্রমিকদের ট্রেড। ইউনিয়নের খেলায় বাজিমাত করেছিল সিটু। ফ্যাক্টারিগুলি এরাই বন্ধ করতাে লাল সেলাম, ইনকিলাব, ধর্মঘট, ঘেরাও ও বন্ধের মাধ্যমে। মালিককে ভয় দেখিয়ে, খুন করে, জোর করে টাকা আদায় করে এবং কারখানা বন্ধ করে বিপ্লব করতাে। খিদিরপুর ও কলকাতা এয়ারপাের্টে সবথেকে বেশি মাল। পরিবহণ করা হতাে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের দৌরাত্ম্যে সেটা বন্ধ হয়ে গেছিল। কতিপয় হিন্দু শিল্পপতি মার্ক্সবাদের বিরােধিতা করায়। বামনেতাদের চক্ষুশূল হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, জ্যোতিবাবুর। সময়েই পুরুলিয়া জেলায় দারিদ্র্য হার ছিল ৭৮ শতাংশ। বেকারত্বে পশ্চিমবঙ্গ ষষ্ঠ থেকে নেমে ১৭তম স্থানে এবং শিক্ষায়। শেষের সারি তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছিল।
দুর্ভিক্ষের মাপকাঠিতে দৈনিক খাদ্যাভাবের পরিমাপে ওড়িশার ৪.৮ শতাংশ থেকেও। জঘন্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের ১০.৬ শতাংশ।
একসময় শিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ সবার। উপরে ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে জ্যোতিবাবু বাঙ্গালির বেকারিত্বের হার অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে নেতারা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের কনভেন্ট স্কুলে বা বিদেশে পাঠিয়ে ইংরেজি শিক্ষায় পারদর্শী করতেন। বাধ্য হয়ে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি বেকার যুবকরা। ইউনিয়নবাজদের ডাকা ধর্মঘটের শিকার হচ্ছিলেন। দুঃস্বপ্নের বাম জামানায় ৩৫ বছরে প্রতিটি পরিবারই রাজনৈতিক হত্যায় স্বজন হারানাের ব্যথায় ব্যথিত ছিল। বামনেতাদের অলস, অকর্মণ্য ও গুন্ডাপ্রকৃতির গুণধর পুত্রেরা অনুমােদনের জোরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রথারীতি স্থান করে নিত অনায়াসেই। স্বচেষ্টায় উঠে আসা মেধাবীরা রাজ্য ছেড়ে বিদেশে বা অন্য রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। ছাত্রাবস্থায় এই প্রতিবেদক ও এস.এফ.আই -এর মস্তানির শিকার হয়েছিল। বামেরা ৮০-র দশকে অটোমেশন। ও ক্য টারের বিরােধিতা না করলে। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাটনয়, পশ্চিমবঙ্গেই হতাে সবথেকে বড়াে আইটি হাব খঙ্গপুর আই.আই. টির কারণে। বামনেতারা ভােটের লালসায় বাংলাদেশি মুসলমানদের অবৈধ অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দিয়ে আজ জনবিন্যাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিকরেছেন। নৃশংস ও নির্লজ্জ বামনেতারা ক্ষণস্থায়ী লােভের বশবর্তী হয়ে ভারতের সনাতন সভ্যতা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষাকে বিদেশি আক্রমণকারীদের হাতে নিগৃহীত করেছেন। ইতিহাসকে বিকৃত করার জঘন্য অপরাধ করেছেন।
পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপােষণনীতিই ছিল ধােপদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত, চকচকে কালাে পাম্পশু পরা, দাম্ভিক, কর্কশভাষী ও চোয়াল চেপে কথা বলা জ্যোতিবাবুর মস্তবড় গুণ। বাপ-কা-বেটা শুভব্রত ওরফে চন্দন। বােসও দুটি বিয়ে করে কাশ্মীরে ডাক্তারি পড়া ও লন্ডনে ব্যবসায়ে অসফল হয়ে ইস্টার্ন বিস্কুট, গ্রিনফিল্ড হাউসিং এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে বাবার নাম আরও উজ্জ্বল করে তােলেন। চিরকাল হিন্দুকলেজের সবথেকে পিছনের বেঞ্চের ছাত্র জ্যোতিন্দ্র ওরফে জ্যোতি চিকিৎসক বাবা ডাঃ নিশিকান্ত বসুর টাকায় লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীব রজনী পামদত্ত, হ্যারল্ড ল্যাস্কি ও হ্যারি পােলিটের সংস্পর্শে আসেন। আই.সি.এসে অকৃতকার্য হয়ে ১৯৪০ সালে দেশে ফিরে বাবা-মা’র আজ্ঞা অগ্রাহ্য করে আইনব্যবসার থেকেও লাভদায়ী জেনে কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগ দিয়েছিলেন। মা-বাবার বিয়ের আদেশটি কিন্তু অগ্রাহ্য করেননি। সেই বছরেই বাসন্তীদেবীর সঙ্গে শুভপরিণয় হয়। দ্বিতীয় বিয়ে শ্যালিকা কমলার স ে১৯৪৮ সালে হয়।
চীন-ভারত যুদ্ধের পরেই, ১৯৬৪ সালে সিপিএমের জন্ম হয়। আক্রমণকারী চীনের সমর্থক জ্যোতিবাবুইহন এই পার্টির কর্ণধার। এই রূঢ়ভাষী, নির্মম মুখবিশিষ্ট ও উদ্ধত বামনেতার ধামাধরা চামচেরা বলেন, উনি নাকি বর্গাদারি ব্যবস্থা করে ভূমিহীন কৃষকদের প্রভুত উপকার করেছেন। পঞ্চায়েতি রাজ নাকি তারই অবদান। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিও নাকি তার উর্বর মস্তিষ্কের ফসল। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদগুলি ছিল সিপিএমের স্থানীয় অফিসঘর মানে বােমা ও প্রাণঘাতী ধারালাে অস্ত্রের মজুদ ভাণ্ডার। অন্য দলের লােকেদের কোনাে অধিকার ছিল না সেখানে। ভূমিরাজস্ব মন্ত্রী রেজ্জাক মােল্লা ২০০৯ সালে স্বীকার করেন ২৭ শতাংশ বেনামি জমি সিপিএমের লােকেরাই ভােগ করতাে। বেনামি অধিকৃত সম্পত্তিতে মসজিদ ও পার্টি অফিস বানানােই ছিল সিপিএমের প্রধান কাজ।
উন্নতমানের সেচ, সার, বীজ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ কিংবা ক্ষুদ্র উৎপাদিত খাদ্যশস্যের উপযুক্ত বাজারের ব্যবস্থা না করে, জোরজবরদস্তিতে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ২.৫ একর বেনামি জমি দখল করিয়ে, সিপিএমের উর্দিহীন মুসলমান ও ক্যাডারভুক্ত ভাগচাষীদের মধ্যে বিলি করে জ্যোতিবাবু সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছিলেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। সিপিএমের স্ট্যাম্পযুক্ত ঠিকাদার ও দালালদের ছিল রমরমা বাজার। সেসময় রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি পৌঁছেছিল ৭১০৯ কোটিতে। পূর্ববঙ্গ থেকে মুসলমামদের তাড়া খেয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে, বিনা পরিশ্রমে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে’পারদর্শী এই বামনেতারা শ্ৰেণীশত্রু ঘটিদের জমি দখল করে, ধর্ষণ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে, সামন্ততন্ত্রীয় প্রথায় নিজেদের মৌবসিপাট্টা জমিয়েছিল।
১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত অপারেশন বর্গা চালিয়ে ৪.১ লক্ষ হেক্টর জমি ১৪.৫ লক্ষ ভাগচাষির মধ্যে বণ্টন করে জ্যোতিবাবু অমর হয়েছেন। সংখ্যালঘু ভােটের জোরেই পরপর ৫টি নির্বাচনে ২৩ বছর রাইটার্সের গদিটি আঁকড়ে ছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনে সংবিধান মেনে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিজ্ঞানভিত্তিক রিগিং, প্রতিপক্ষকে হত্যা ও ধর্ষণের ভয় দেখিয়ে, অপহরণ করে জয় তিনি সুনিশ্চিত করতেন। তারজন্য অবশ্য স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অধ্যাপক, গবেষক , প্রশাসন এবং পুলিশের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকতাে। সিপিএমের নিজস্ব ক্যাডারদের দ্বারা তৈরি ছিল বেঙ্গল পুলিশ অ্যাসােসিয়েশন। লুম্পেন চরিত্রের মদ্যপ এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-এর গুন্ডাদের দিয়ে বিনাবাধায় শ্রেণীশত্রু ও বুর্জোয়া নিধন যজ্ঞের অপরাধমূলক কাজগুলি করাতেন। সিপিএমের ‘সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র। কমরেডদের দিয়ে দুপুরবেলায় দরজার ফাঁকে গণশক্তি ও দেশহিতৈষী ঢুকিয়ে, মাসের শেষে জোর করে চাঁদা তােলাতেন। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে পিওন নিয়ােগের ভার থাকত এদের উ পরই। হাইকোর্টের জজ,উকিল জ্যোতিবাবুর নাম শুনলে থরথর করে কাপতেন। চে গুয়েভারা বা মাওবাদীদের মতাে জঙ্গলযুদ্ধে বিলাসী জীবন বিসর্জন দিতে চতুর বিপ্লবী জ্যোতিবাবু রাজি ছিলেন না। তাই তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের রাজনীতিকেই বেছে নিয়েছিলেন। ছুটি কাটাতে লন্ডনে গিয়ে স্কচ হুইস্কিতে মেতে থাকতেন। পঙ্কজ ব্যানার্জির কথায়, তিনি ছিলেন তরল গরল, বহুরূপী বামপন্থী; যখন যে পাত্রে রাখা হতাে, তারই আকার ধারণ করতেন।
আমেরিকান কমিউনিস্ট নেতা ও লেখক হাওয়ার্ড ফাস্ট স্বৈরাচারী স্টালিনের জীবন অনুধাবন করে আক্ষেপের সঙ্গে ১৯৫৭ সালে তাঁর বিখ্যাত পুস্তক ‘দ্য নেকেড গড’-এ লিখেছেন, “এই দানবীয় ও তমােচ্ছন্ন শক্তিকে শুধুমাত্র শুদ্ধ ও সত্যের আলােকই দমন করতে পারবে। সমস্ত মানবজাতির পক্ষে বিশ্বাসঘাতক এই ইজম নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে। আজ ইন্টারনেটের যুগে মাও ও মার্ক্সিস্টদের সত্যস্বরূপটি লােকের কাছে প্রকট হচ্ছে। আধুনিক আত্মনির্ভর ভারতে তারা আবর্জনার মতােই নিক্ষিপ্ত হবেন কালের গহ্বরে।
ডঃ আর. এন দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.