প্রধানমন্ত্রী মােদী যখন মজবুত ভারত গড়ার স্বপ্নকে সাকার করতে নিরলস এগিয়ে চলেছেন, তখন তাকে যাঁরা ঘৃণা করেন তারা। দিশেহারা হয়ে সেই বিশ বছর আগের অবস্থানেই অনড় থেকে খাবি খাচ্ছেন।
গত ৫ মাস ধরে কোভিডের তীব্র অগ্রগতি চলাকালীন ভারতের বিভিন্ন । বিষয়ের ওপর আমি একটি বই লিখছি। আমি কিন্তু খােলামনেই সর্বদা কথা বলে থাকি। আমার বিশেষ নজরে পড়েছে রাজনৈতিক ফ্রন্টে মােদীর উপর্যুপরি সাফল্য। আস্থা— এটা কি নিয়তি, নাকি কঠিন পরিশ্রম? নাকি তুলনামূলকভাবে দুর্বল বিরােধীপক্ষ নিয়ে কাজ করার সুবিধে? আমি বেশ কিছু যুক্তি সন্ধান করেছি। সেগুলিই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।
মােদীর সমালােচকরা যে মােদীকে ঘৃণা করেন এটা বলতে ভালােবাসেন। তারা এই সূত্রে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মােদীর ওপর নানাবিধ গল্প তৈরি করেন যার মধ্যে থাকে বাছাইকরা গালাগাল। একটু পিছিয়ে গিয়ে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যখন মােদী প্রথম গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলেন তখন বিরােধীরা। বলেছিল একটা বছর তার মধ্যেই মােদী হাওয়া হয়ে যাবেন। খুব তাড়াতাড়িই সেটা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছিল। গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাকে একজন স্থানীয় নেতা। হিসেবে গণ্য করা হতাে। বড়ােজোর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যাঁর গুজরাটের বাইরে কোনাে স্বীকৃতি নেই। ২০১৩ সালের শীত বা ২০১৪-র বসন্তে ‘Modi in unclectable’ এই প্রকল্পটি গতি পায়। এই পথের প্রবক্তারা ২০১৪-র মে মাসের ফলাফলেই হতভম্ব হয়ে যান। ২০১৪-র পরবর্তী বছরগুলাে এই পণ্ডিতরা এই। আলােচনায় মগ্ন ছিলেন যে কিছু নয়, মােদী। এক মেয়াদের আলটপকা প্রধানমন্ত্রী। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে আনন্দ পেতে
যে এত ভালাে গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার কি কখনাে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে?
২০১৮ সালে ২৩ মে ব্যাঙ্গালােরের কংগ্রেস-জনতা (এস) দলের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এক অনুপ্রাণিত দৃশ্যের অবতারণা হলাে। মঞ্চের ওপর সারা ভারতের মােদী বিরােধীরা হাত ধরাধরি করে উদগ্র একতার প্রমাণ রাখলেন। হায়! ঠিক এক বছর পরে ২৩ মে ২০১১ নরেন্দ্র মােদীর আরও বেশি আসন নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলেন। টীকা হিসেবে উল্লেখ করা যায় কর্ণাটকের এই বিষম মিলনের সরকার অভ্যন্তরীণ চাপে কয়েক মাস পরেই ভেঙে পড়ে।
এই ঘটনার পর থেকেই মােদী নিন্দুকরা আর একটি সান্ত্বনা ওষুধের সন্ধান পেয়েছেন। তা হলাে টিএনএ দাওয়াই। মােদী কোনাে বিষয় নয়, আসলে বিরােধিতা করার যােগ্য কেউ নেই তাই। তাদের চরম
হতাশাব্যঞ্জক পর্যবেক্ষণ কেবল মােদীই পারেন মােদীকে হারাতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যতই মােদী শক্তিশালী হয়ে উঠছেন ততই তাদের বিভ্রম বাড়ছে। গণতন্ত্র কিন্তু কখনই এক মেরুর হতে পারে না। সেখানে যতই দুর্বল হােক না কেন একটি অন্য মেরুর আস্তিত্ব থাকতেই হবে। ভােট মেশিনে যখন নাম দেখা যায় তখন বহু নাম উঠে এসে বহুবিধ চিহ্ন নিয়ে প্রমাণ করে যে গণতন্ত্র কখনই বিকল্পহীন নয়। মােদী নিন্দুকরা সব ধরনের বিকল্প নেড়ে চেড়ে দেখতে কসুর করেনি। যে কোনাে জাতি-প্রজাতির যেমন— বামপন্থী, জিহাদি, ব্যর্থ পরিবারতান্ত্রিক, অরাজক, বিচ্ছিন্নতাবাদী কাউকে সঙ্গে নিতে দ্বিধা করেননি। এমনকী আগে যারা মােদী ও আরএসএস-এর সঙ্গে কাজ করেছে। তাদেরও টেনেছিল। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মােদীর নিজের দলেও বিকল্প নাকি চোখে পড়েছিল। তাই, যখন মােদী বিরােধীরা বলে কোনাে বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না তখন তারা নির্ভেজাল মিথ্যে কথা বলে বা তাদের ব্যর্থতা জনিত বিষােদগার করে হতাশার প্রকাশ ঘটায়।
সত্যি কথাটা হলাে সব ধরনের বিকল্পের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়ে গেছে। সেগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে নানা মােড়কে ভােটারদের কাছে নিয়ে গেলেও তারা প্রত্যাখান করেছে। তারা বারবার মােদীর ওপরই বিশ্বাস ন্যস্ত করেছে। তারা জানে এই মানুষটির সঙ্গে তারা মানসিক যােগসূত্র স্থাপন করতে পারে। মােদী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না, দেশ ও তার মানুষের প্রতি তিনি নিবেদিত প্রাণ।
প্রত্যেক বিকল্প ভাবনা ব্যর্থ হয়েছে তার
মূল কারণ মানুষ জানে এরা কেউই মােদীর মতাে মানুষের কাজে আসবে না। বিগত ৬ বছরে ভারতের ইতিহাসে সর্ব বৃহৎ দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প চালিয়েছেন মােদী। জনধন যােজনার ৪০ কোটি নাগরিক শুধু ব্যাঙ্ক খাতা পেয়েছে নয়, তারা এক পয়সা তছরূপ হওয়ার আগে পুরাে প্রাপ্যটাই খাতায় পেয়েছে। আয়ুষ্মন ভারত, পিএম কিষান, অটল পেনশন যােজনা, ফসল বিমার মতাে আরও বহু জনহিতকর সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের গরিব জনতা একটা নির্ভরতা পেয়েছে। তাদের দারিদ্রে তলিয়ে যেতে হয়নি। সকলেরই জানা উচিত ১০ কোটি শৌচালয় তৈরি ও ৮ কোটি উজ্জ্বলা যােজনার মাধ্যমে গরিব পরিবারগুলিতে ধোঁয়াহীন চুল্লি সরবরাহ করা হয়েছে। কেবল গত বছরেই ২ কোটি পরিবারে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। ২০২৪-এর মধ্যে দেশের সব বাড়িতে জল পৌঁছনাের প্রকল্প রূপায়ণের পথে। মােদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের এই চলতি কার্যকালে ক্ষমতার অলিন্দে দুর্নীতির কোনাে পূতিগন্ধ আজও পাওয়া যায়নি। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিগুলি আর নির্দিষ্ট পরিবারতন্ত্রের সদস্যদের বেআইনি টাকা রােজগারের খিদে মেটায় না। বরং পুরাে টাকাতেই ভারতের সেনাবাহিনীর সামরিক ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। এই মােদীই এক সময় একজন সামান্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গণ্য হতেন যাঁর বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে কোনাে ধারণাই নাকি ছিল না এমন প্রচার তারস্বরে করা হয়েছিল। তিনিই ‘India first’-এর আন্তর্জাতিক দর্শন নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
এমন মানুষকে নিরীক্ষণ করতে হবে তাকে দেওয়া তথাকথিত বিকল্পগুলির মধ্যে কারা এতগুলি কাজ সুষমভাবে করতে পারবে। মানুষ দেখেছে কাশ্মীরের বন্যাবিধ্বস্ত মানুষের পাশে তাঁকে দাঁড়াতে। প্রত্যন্ত কাশ্মীর সীমান্তে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীপাবলির প্রদীপ জ্বালাতে। প্রবীণ জনজাতি রমণীর পা ধুইয়ে দিতে। বহু সাফাই কর্মচারীর তিনি পদ প্রক্ষালন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। মানুষ তাকে আঁটা হাতে দেখেছে। দেখেছে লালকেল্লা থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিতে। আজ ভারত মােদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর অন্তর্নিহিত শক্তির সর্বদা কদর করেন, কেননা তিনি সেটা উপলব্ধি করেছেন। ভারতের কোনাে নেতা ক্রীড়া জগতের ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, সংস্কৃতি পরিসরের তরুণ প্রজন্মকে আন্তরিকতায় ভরা চিঠি লিখে উৎসাহিত করেছেন? এমন নজির বিরল। ভারতের অসংখ্য পরিবারের সুখ-দুঃখের একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে। তিনি তার জায়গা করে নিয়েছেন। এমন নেতার কি কোনাে বিকল্প আছে? আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে।।
আমার বাবা আমাকে কৈশােরকাল থেকে শিখিয়ে ছিলেন যে তুমি যদি সত্যি কথা বলাে তাহলে তােমায় সেটা মনে
রাখতে হবে না। খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী দেশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক সময় প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কার্যরত। এই ক্ষেত্রে তিনি অতীত সমস্ত প্রধানমন্ত্রীকে ছাপিয়ে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রিত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব এই যুগ্ম পদে তিনি একাদিক্রমে ১৯ বছর আসীন আছেন। এমন রাজনৈতিক সাফল্য ও তাঁর প্রতি মানুষের ভালােবাসা কেবলমাত্র বিরােধী হিসেবে উপযুক্ত লােক নেই— এই স্তোকবাক্যের মাধ্যমে বােঝানাে যায় না। মানা তােদূরস্থান।
এই সাফল্যের কোনাে মন্ত্রগুপ্তি নেই। সকলেই দেখছেন তিনি কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক চক্রান্ত ও কুৎসার প্রত্যুত্তর তিনি দিয়েছেন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, মােদী যখন পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে ভারত গড়ার স্বপ্নকে সাকার করতে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন তাঁর নিন্দুকরা তখনও সেই বিশ বছরের বস্তাপচা অবস্থানেই পড়ে আছেন তাঁর বিকল্পব সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত ও হতচকিত। তারা শুধু হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পরিত্রাণের উপায়। দেশবাসী নজরও করছে না।
অনুপম খের
(লেখক একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেতা এবং এফটিআইআই, পুনের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ)
2020-08-31