আর কোনও স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন এবার সত্যিই বাস্তবের রূপ পাচ্ছে। ইনভেস্টর হিসেবে ‘শ্রী সিমেন্টের’ সঙ্গে চুক্তি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। আটকে শুধু ক্রিকেট স্বত্ব দেওয়ার প্রশ্নে। বাকি সব শর্ত দু’পক্ষই মানার জায়গায় চলে এসেছে। যার চূড়ান্ত রূপ কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাবের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কোয়েস চলে যাওয়ার পর নতুন ইনভেস্টর পাওয়ার জন্য রীতিমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কর্তারা। এরজন্য নানাদিক থেকে নানাভাবে সাহায্য নিচ্ছেন তাঁরা। একটা সময় এভাবেই কথা এগিয়েছিল সিঙ্গাপুরের শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। কিন্তু বিনিয়োগ করার আগে আইএসএল খেলার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের বাঙালি শিল্পপতি। যা দিতে পারেননি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। এবারও শ্রী সিমেন্টের (Shree Cements) পক্ষে মিঃ বাঙ্গুর ইনভেস্টর হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে সেই আইএসএলের প্রসঙ্গটি টেনেছেন। কিন্তু প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের কোম্পানির সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের পার্থক্য হল, এই কোম্পানির সদর দপ্তর কলকাতায়। ফলে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের পক্ষে সংস্থার কর্ণধারদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে, হাতে ইনভেস্টর না এলে কিছুতেই আইএসএল খেলার জন্য আবেদন করতে পারছেন না তাঁরা। ইনভেস্টর দেখাতে না পারলে, এফএসডিএলও আইএসএল (ISL) খেলা নিয়ে কথা বলতে পারছে না। তাই আগে ‘শ্রী সিমেন্ট’ ইনভেস্টর হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হোক, তারপর নিশ্চয়ই এফএসডিএলও ইস্টবেঙ্গলের এইমরশুমে আইএসএল খেলা নিয়ে ভেবে দেখবে।
‘শ্রী সিমেন্টের’ কর্ণধাররা যেহেতু কলকাতাতেই থাকেন, ‘ইস্টবেঙ্গল’ এই আবেগটার সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত। তাই এই সময়টায় ইস্টবেঙ্গলের পাশে থেকে সাহায্য করতে চান আইএসএল খেলার জন্য। ইনভেস্টর পাওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল যদি সত্যি সত্যিই আইএসএল খেলার সুযোগ পায়, তাহলে আইএসএল খেলার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচা করতে হবে তা করতে রাজি আছে ‘শ্রী সিমেন্ট।’ আর যদি শেষ পর্যন্ত অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে বলে এই মরশুমে আর আইএসএল খেলা সম্ভব না হয়, তাহলে এই মরশুমে আই লিগ খেলার মত খরচ করবে। পাশাপাশি এফএসডিএলের (FSDL) সঙ্গে কথা চালানো হবে পরের মরশুমের আইএসএল খেলার জন্য।
মোটামুটি ভাবে দু’পক্ষের মধ্যে যা কথা হয়েছে, তাতে ৭৬ ভাগ শেয়ার দেওয়া হবে শ্রী সিমেন্টকে। ক্লাবের হাতে থাকবে ২৪ শতাংশ শেয়ার। সব কিছু পাকা হয়ে যাওয়ার পরেও চূড়ান্ত হওয়ার পথে আটকে রয়েছে ক্রিকেট। শ্রী সিমেন্টের কর্ণধাররা চাইছেন, ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট-সহ ক্লাবের সব স্বত্ত্বও নিয়ে নিতে। সেক্ষেত্রে সিএবিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন ‘শ্রী সিমেন্টের’ কেউ। কোয়েসের অভিজ্ঞতা থেকে ঠিক এই জায়গাটিতে এসে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না লাল-হলুদ কর্তারা। ক্লাবের জার্সির রঙ, লোগো এসব নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। শ্রী সিমেন্ট চাইছে চুক্তির পর ক্লাবের যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করবে তারাই। একে সমর্থকদের দিক থেকে আইএসএল খেলার চাপ। তার উপর বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে আর কোনও ইনভেস্টর পাওয়া সম্ভব নয়, এটা বুঝেই ‘শ্রী সিমেন্টের’ প্রস্তাবে রাজি হতে চলেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, চুক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটের স্বত্ত্ব ছেড়ে দেওয়াটা বড় কোনও ইস্যু হবে না। সোমবারও শ্রী সিমেন্টের কর্ণধারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষে দেবব্রত সরকার এবং সৈকত গঙ্গোপাধ্যায়। হয়তো চূড়ান্ত ঘোষণাও হয়ে যাবে দু’দিনের মধ্যে।
তাহলে কি এবার আইএসএল খেলার পালা? ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বলছেন, যতক্ষণ না ইনভেস্টরের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে, “আইএসএল খেলার জন্য আমরা সরকারিভাবে এফএসডিএলের কাছে আবেদন করতে পারছি না। এই মুহূর্তে একটা একটা করে ধাপ পার হতে চাইছি। ইনভেস্টর পেয়ে গেলে তখন আইএসএল খেলার জন্যও চাপ তৈরি করা যাবে। তাই এখন আমরা ইনভেস্টরের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।”