সন্ততুল্য মােতলগজী


মােতলগজী তখন ক্ষেত্র প্রচারক। তিনি নদীয়া জেলা প্রবাসে আসছেন। আমি কৃষ্ণনগর নগর প্রচারক। মােতলগজী শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর লােকাল ট্রেন ধরে কৃষ্ণনগর সিটি জংশনে নামবেন। ট্রেন আসার কিছু আগে আমি স্টেশনে অনুসন্ধান অফিসে অনুরােধ করলাম, আমাদের একজন অধিকারী এই ট্রেনে নামবেন, নামটা ঘােষণা করে দিলে ভালাে হয়। অনুসন্ধান বিভাগের ভদ্রলােক বললেন, তাঁর নাম কী? আমি তার নাম বললাম। তিনি বললেন, তিনি কি কোনাে সাধুসন্ত? আমি বললাম, সাধুসন্ত নন, কিন্তু সাধুসন্ত তুল্য। উনি সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে এসেছেন, আমরা তাকে সঙ্ঘের প্রচারক বলি।
সত্যিই মােতলগজী সন্ত তুল্যই ছিলেন। আমি কখনাে তাকে রাগ করতে দেখিনি, হতাশ হতে দেখিনি, সব সময় সবাইকে উৎসাহ দিতে দেখেছি। কোনাে পরিবারে গেলে মনে হতাে তিনি সেই পরিবারের একজন সদস্য। আমাদের এত সরল ভাবে জিজ্ঞেস করতেন, “তুমি আজকাল কোথায় আছাে ভাই? তােমার কী দায়িত্ব?’ শুনে মনটা ভরে যেত।
তিনি এত সহজভাবে বৈঠক নিতে তা সকলের বােধগম্য হতাে। সহজ সরল উপমা দিতেন আর বলতেন—উপমা কখনােই একশাে শতাংশ ঠিক হয় না। বলতেন, সন্তু কুকুরের মতাে ঘুমায়, তাই বলে সন্তু কুকুর নয়, তার ঘুমানােটা কুকুরে মতাে। আরও বলতেন, প্রচারক হচ্ছে মুড়ির মতাে, কেননা মুড়ি জল দিয়ে খাওয়া যায়, চিনি দিয়ে খাওয়া যায়, তরকারি দিয়ে খাওয়া যায় অর্থাৎ মুড়ি অ্যাডজাস্ট করে চলতে পারে। সেরকমই প্রচারকের কাজ—সবার সঙ্গে চলা, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা— এরকম সংগঠক। তিনি কার্যকর্তা এবং তাদের পরিবারের কুশল মঙ্গল জিজ্ঞাসা করতেন। তার হৃদয় ছিল আত্মীয়তার ভাণ্ডার, অকৃত্রিম ভালােবাসা যাকে বলা হয়।
তার দুটি বাক্য আমাকে বেশি প্রেরণা দিয়ে থাকে, (১) সঙ্ঘ কার্যপদ্ধতি অতুলনীয় কার্যপদ্ধতি, (২) স্বয়ংসেবকদের জীবন হবে—সাধারণ জীবনযাপন, উচ্চ চিন্তন। তার সবচেয়ে বড়াে বৈশিষ্ট্য হলাে তার সহজতা। কখনাে কারাে সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন না। সকলের হৃদয় জয় করেছেন। সর্বত্র গুণ দর্শন করেছেন। গীতার ভাষায় বলতে গেলে তিনি একজন লােকসংগ্রহী যােগ্য সংগঠক। তিনি ছিলেন ধীরস্থির, অবিচলিত। কেশব ভবন থেকে নাগপুরে চলে যাওয়ার দিন বালকসুলভ সরলতায় সবার কাছে অনুমতি নিচ্ছেন। সে দৃশ্য আজও মনকে স্পর্শ করে। তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎহয় ২০১৯ সালে তৃতীয় বর্ষ সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গ থেকে ফেরার দিন নাগপুর প্রধান কার্যালয়ে।তখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকলেও স্মৃতিশক্তি ঠিক ছিল। আমাদের প্রদেশের কার্যকর্তাদের এবং কয়েকজনের পরিবারের কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। এরকম এক মহাজীবন আমাদের দীর্ঘদিন কাজের প্রেরণা দিতে থাকবে।
গৌরাঙ্গ দাস
(লেখক দিনাজপুর বিভাগ প্রচারক)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.