শ্রদ্ধেয় শ্রীকৃষ্ণ ভগবন্ত মােতলগজী নাগপুরে বালুজী নামে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি একধারে যেমন আমার আত্মীয়, অন্যদিকে আমার ৫১ বছরের প্রচারক জীবনের প্রেরক, মার্গদর্শক ও অভিভাবক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত শােকাহত।
১৯৬৯ সালে বালুজী নাগপুর প্রান্ত প্রচারক ছিলেন। সেই বছর নাগপুর থেকে আমি একমাত্র প্রচারক বেরিয়েছিলাম। বালুজী আমার দাদাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। এবং আমাদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতেন, যার জন্য আমি তার সহচর্য পেয়েছি। তার মা একজন ধর্মপ্রাণা সাধ্বী মহিলা ছিলেন। আমি তার দর্শন পেয়েছি। মােতলগজীর বড়দা ও মেজদার সঙ্গে আমার ভালাে পরিচয় ছিল। প্রচারক বেরােনাের পর আমার প্রচারক জীবন পশ্চিমবঙ্গে শুরু হলাে এবং তা এখন পর্যন্ত চলছে। বালুজী ১৯৮১ সালে পশ্চিমবঙ্গে সহ-প্রান্ত প্রচারক হিসেবে আসেন। কিছুদিন পর পূর্বাঞ্চল ক্ষেত্র প্রচারক হন। এই সুবাদে তার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হলাে। প্রায়ই তার কাছে আমি যেতাম এবং সুপরামর্শ পেতাম এবং এমনকী আমার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তিনি করতেন। আমার কাছে তিনি সর্বদাই ‘বালুজী’ ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ত্রিপুরা, অসম ইত্যাদি স্থানে মােতলগজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতাে। সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের প্রতি তার যে অকৃত্রিম স্নেহ তা সবাইকে আকৃষ্ট করেছিল। মােতলগজীর সঙ্ কাজের একটি বিশেষ দিক বলা যেতে পারে বিবিধ ক্ষেত্রের কার্যকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনে তার উদ্যম। আমি কখনও কখনও বলতাম যে মােতলগজী হচ্ছেন ‘সমন্বয় মহর্ষি’। মােতলগজীর কাছে বসলে তিনি আমাকে দিয়ে তার কাছে আসা অনেক চিঠির উত্তর লেখাতেন, তার মধ্যে অসমের একজন সংস্কৃত শিক্ষকেরমৃত্যু সংবাদের উত্তর লিখতে গিয়ে আমি চিঠিটি সংস্কৃতে লিখলাম। চিঠি পেয়ে তারা মােতলগজী সংস্কৃতও জানেন এই দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছিলেন। মােতলগজী কার্যকর্তাদের চারটি সূত্র বলতেন যথা—প্যায়র চেঁ চক্কর, মু মেশঙ্কর, দিল মে আগ, সির মেব। আর এই সূত্র অনেক কার্যকর্তা বহুবার উল্লেখ করেছেন।
কয়েক বছর আগে মােতলগজী যখন নাগপুরে সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয়ে স্থায়ী থাকার জন্যে চলে গেলেন তখন সেখানেও আমি অনেকবার তার সঙ্গে দেখা করেছি। আমার লেখা বইও তাকে দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল নাগপুরে ২০১৯-এর ২৩ মে, যেদিন লােকসভা নির্বাচনের ফল ঘােষণা হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গের ফল শুনে তিনি যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তার অন্তরের টান ছিল, মনে হয় তার জন্যেই আমাকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তুমি হাওড়াতে কেন্দ্র করে থাকো । আমি হাওড়ায় এসেছি এই সংবাদ দেওয়ার পর তিনি খুশি হয়েছিলেন। মােতলগজী আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর স্মৃতি আমাকে সর্বদা প্রেরণা জোগাবে। ভগবানের কাছে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। শ্রীকৃষ্ণ শরণম্ মমঃ।
বিজয়গণেশ কুলকার্ণী
(লেখক বিদ্যাভারতীর দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রচারক)
2020-08-31