২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাটিকান মাদার টেরেসাকে সন্ত বলে ঘোষণা করেছিলো। তখন তার জীবন ও কাজকর্মকে সাধারণ মানুষের সামনে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছিল যেন তিনি ছিলেন মানবতার জন্যে ঈশ্বরের তরফ থেকে একটি সুন্দর উপহার। কিন্তু সত্যি কি সেটা ছিলো?
এখন সময় এসেছে “হেলস অ্যাঞ্জেল” ডকুমেন্টারীতে ফাঁস করা মাদার টেরেসার ভন্ডামী ও “দ্যা মিশনারি পজিশন” এ টেরেসাকে নিয়ে ক্রিস্টোফার হিচেন্সের করা ভয়াবহ অভিযোগগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরার।
কেন কেউ মাদার টেরেসার কাজের বর্ণনা দেওয়ার সময় প্রথম ব্যক্তিটির দেওয়া তথ্যগুলো উল্লেখ করে না। বিশেষত যেখানে “মিশনারি অফ চ্যারিটি” তে আর টেরেসার সাথে একসাথে কাজ করার ব্যক্তিদের উল্লেখ রয়েছে।
মাদার টেরেসা কি সত্যিই সন্ত বলে পরিচিতি পাওয়ার যোগ্য? এটা বর্তমান দিনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসুন আমরা এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
প্রথমে আমরা দেখবো যে সুসান শিল্ড তার কোন অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। ব্রোঙ্কস, রোম এবং সান ফ্রান্সিসকোতে মিশনারি অফ চ্যারিটির সাথে সুসান সাড়ে নয় বছর ধরে কাজ করেছেন। এখানে বলা দরকার যে‚ টেরেসার স্বরুপ নিয়ে “ইন মাদার্স হাউজ” নামে তিনি একটি বই লিখেছিলেন। কিন্তু কোনো পাবলিশারই তার বই প্রকাশ করতে সাহস করেনি।
বিখ্যাত সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচেনস‚ “দ্যা মিশনারি পজিশন : মাদার টেরেসা ইন থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস” বইয়ের লেখক
পর্যবেক্ষণ: পোপ যেখানে কোনো বই লেখার আগেই তার জন্যে অগ্রিম ৫ মিলিয়ন ডলার হাতে পেয়ে যায়‚ সেখানে সুসানের এমন একটি সাহসী পদক্ষেপের জন্যে প্রকাশক খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
মাদার টেরেসার নেতৃত্বে মিশনারি অফ চ্যারিটি কিভাবে ব্যাপকহারে ধর্মান্তকরণ চালাতো শিল্ড তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন -” তার “হোম ফর দা ডায়িং” এ মাদার তার সিস্টারদের শেখাতেন যে কিভাবে মৃত্যুপথযাত্রীদের গোপনে ধর্মান্তরিত করা যায়। প্রত্যেক মুমূর্ষু ব্যক্তিকে সিস্টাররা জিজ্ঞেস করত যে তারা “স্বর্গে যাওয়ার টিকিট” চায় কিনা। যে কোনো ধরনের সদর্থক উত্তরকেই ধর্মান্তরিত হতে যাওয়ার সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হতো। সিস্টার তখন লোকটির কপালে ঠান্ডা জলের জলপট্টি দেওয়ার নাটক করত‚ আর চুপচাপ বাপ্তিষ্ম দেওয়ার (ধর্মান্তরিত করার) জন্যে প্রয়োজনীয় শব্দগুলো আউড়ে যেত। এখানে গোপনীয়তা ছিলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাতে মাদার টেরেসার সিস্টাররা যে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করছে এটা বাইরের কেউ না জানতে পারে।
মাদার টেরেসা কি দরিদ্রদের রক্ষাকর্তা ছিলেন নাকি দারিদ্র্যের? ২০১৫ সালে “দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট” এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ক্যারল হান্ট এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। হান্ট লিখেছেন‚ ” প্রমাণ এবং তার নিজের কথা এটাই দেখায় যে টেরেসা গরীবদের রক্ষাকর্তা ছিলেন না‚ বরং ছিলেন একজন ধর্মান্ধ যে তাদের দুর্ভোগ দেখে সন্তোষ লাভ করতো। তিনি যে শুধু রোগীদের যন্ত্রণা কমাতে অস্বীকার করেছেন তাই না‚ তিনি একে গৌরবান্বিতও করেছেন। তিনি নিজে বলেছিলেন ” আমি মনে করি দরিদ্রদের অনেক কিছু মেনে নেওয়া ও খ্রিস্টের আবেগের সাথে তা ভাগ করে নেওয়াটা খুবই সুন্দর। আমি মনে করি যে দরিদ্র মানুষদের দুর্ভোগের দ্বারা বিশ্ব অনেক সাহায্য পায়।” কলকাতায় তার বিখ্যাত “হোম ফর দা ডায়িং” কে ইচ্ছাকৃতভাবেই রোগীদের প্রয়োজনের সাপেক্ষে যথাসম্ভব অপর্যাপ্ত রসদযুক্ত রাখা হতো। টেরেসার মতে এটা ছিলো ঈশ্বরের ইচ্ছা। যদিও ধনী পৃষ্ঠপোষকদের অনুদানগুলি ছিলো বেশ কয়েকটি বিশ্বমানের ক্লিনিক তৈরীর জন্য যথেষ্ট, কিন্তু তার রোগীদের ভয়াবহ দারিদ্র্যের মধ্যেই থাকতে হতো।
১৯৯৪ সালে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের সম্পাদক রবিন ফক্স মাদার টেরেসার “মিশনারিস অফ চ্যারিটির” দ্বারা পরিচালিত একটি ‘হোম’ পরিদর্শন করেন। তাঁর সেই পর্যবেক্ষণ তিনি লিখেছেন “ক্যালকাটা পার্স্পেক্টিভ: মাদার টেরেসা’স কেয়ার ফর দা ডায়িং” নিবন্ধে। ফক্স দেখেছিলেন‚ টিবি রোগীদের আলাদা রাখা হয়নি এবং সিরিঞ্জগুলিকে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে আবার ব্যবহার করা হচ্ছিলো। এমনকি অসহনীয় ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের যন্ত্রণা নাশক ওষুধ দিতেও অস্বীকার করা হয়েছিলো। আর তা কারও আদেশের ফলে ছিলো না‚ ছিলো তাদের আদর্শের ভিত্তিতে। ২০০৮ সালে কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটি হোমে কর্মরত আরেক স্বেচ্ছাসেবক হেমলেই গোঞ্জালে একটি সাক্ষাৎকারে ভয়াবহ কিছু তথ্য তুলে ধরেন। গোঞ্জালে বলন‚ ” এটা ঘটেছিলো প্রায় আকষ্মিকভাবে‚ আক্ষরিক অর্থেই আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগ দেওয়ার প্রথম দিনেই। এই দাতব্য সংস্থাটি যে ভয়াবহরকম অবহেলা করে এবং এদের কাজ সম্পর্কে জনগণের ধারণার সরাসরি বৈপরীত্য দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কর্মীরা ট্যাপ ওয়াটারেই সুঁচ গুলো ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করছিলো। ওষুধপত্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীগুলি বহুদিন ধরে পড়ে ছিলো‚ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো অথচ সেগুলোই রোগীদের উপর ইতস্তত ব্যবহার করা হচ্ছিলো। স্বল্প প্রশিক্ষণযুক্ত বা প্রশিক্ষণহীন স্বেচ্ছাসেবকরা যক্ষা বা অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে বিপজ্জনক আচরণ করছিলো। যারা এই চ্যারিটি চালায়‚ তারা প্রক্রিয়াগুলিকে নিরাপদ ও স্বয়ংক্রিয় করতে পারে আর মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে এমন চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
আরও তদন্ত এবং গবেষণার পরে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি যে সমস্ত ঘটনা দেখেছি সেগুলির নিয়মিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভালোমতো আর্থিক কেলেঙ্কারী ছাড়া আর কিছুই নয়। মিশনারিস অফ চ্যারিটি তার ষাট বছরের ইতিহাসে একবারও অনুদান হিসাবে যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছে, তার কত শতাংশ ব্যবহার করেছে আর বাকি অংশ কোথায় কিভাবে ব্যবহার করেছে তার হিসাব দেয়নি।”
ক্যাথলিক চার্চের দ্বারা সন্ত ঘোষিত হতে গেলে প্রত্যেককেই কম করে দুটো অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে হয়। বলা হয় যে টেরেসাও এমন দুটো অলৌকিক ঘটনা ঘটায় যার ফলে ৪ঠা সেপ্টেম্বর‚ ২০০৪ তার সেইন্টহুড পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। এখন আমরা সেই অলৌকিক ঘটনার পেছনের আসল ইতিহাস জানবো।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯৯৮ সালে। মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বলা এবং ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা সহজেই মেনে নেওয়া সংস্করণটি হলো‚ কলকাতার থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসী মনিকা বেসরার একটি বিশাল টিউমার নিরাময় হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর‚ মাদার টেরেসার মৃত্যুর বর্ষপূর্তির একদিন পর। দুজন সন্ন্যাসিনী তার শরীরে একটি অ্যালুমিনিয়াম মেডেল বেঁধে দেয় যা টেরেসার মৃতদেহের সংস্পর্শে ছিলো‚ আর তারা সারারাত প্রার্থনা করে।
এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ‚ বেসরার চিকিৎসার সাথে জড়িত একজন ডাক্তার সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদদাতা অ্যানি গোয়েনকে বলেছিলেন যে কোনও অলৌকিকতা নয় বরং ওষুধই বেসরাকে সারিয়ে তুলেছিলো।
ডা. রঞ্জন মুস্তাফিকে উদ্ধৃত করে গোয়েন একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন‚ “আমি অনেকবার বলেছি যে সে সুস্থ হয়েছিল চিকিৎসার দ্বারা‚ আর কিছুই ঘটেনি।” বেসরা প্রথমে বলেছিলো যে সে ওষুধের দ্বারা আরোগ্যলাভ করেছে‚ তার স্বামীও একই কথা জানায়। কিন্তু পরে সম্ভবত চার্চের কথায় তিনি তার মত পরিবর্তন করেন। এই “অবস্থান পরিবর্তন” এর ফলাফল গোয়েন বুঝেছিলেন বেসরার সাথে দেখা করার পর। তিন একর ধানজমি থাকা এই দম্পতি মিশনারিজ অফ চ্যারিটির থেকে মাঝের বছর গুলোতে কিছু সাহায্য পেয়েছে। তাদের পাঁচ সন্তানের স্কুল খরচও তারাই দেয়। গত বছর‚ স্থানীয় একজন প্রিস্ট‚ তাদের বাড়ির উল্টোদিকে একটা ছোট্ট সবুজ চ্যাপেল তৈরি করেছেন‚ যেখানে পরিবারগুলি বেশিরভাগ রবিবার উপাসনা করে। এক দশকেরও বেশি সময় আগে তারা ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।”
এটা কি শুধুমাত্র একটা কাকতালীয় ঘটনা যে বেসরা আর তার উপজাতি হিন্দু পরিবার ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পরই গীর্জা থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। আর এখন তো তার বাড়ির উল্টোদিকেই গীর্জা তৈরী হয়ে গেছে। উপরের ঘটনা থেকে এটা পরিষ্কার যে শুধুমাত্র বেসরা নয়‚ এই অঞ্চলের অন্যান্য অনেক উপজাতি হিন্দু পরিবারই ধর্মান্তরিত হয়েছে (নাহলে কেনই বা গীর্জা বানানো হবে?)। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এই অলৌকিক ঘটনার গল্প শুনিয়ে এখানে অনেক সরল আদিবাসীকে ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করানো সম্ভব হয়েছে।
সেইন্টহুড পাওয়ার দিন মাদার টেরেসার নির্বাচিত বিশেষ বিশেষ ছবি দুনিয়া জুড়ে দেখানো হয়েছিলো। তাতে মানুষের মনে টেরেসার যে ছবি প্রোথিত হয়ে যায় তাতে সত্য উন্মোচন করতে চাওয়া সাংবাদিকদের প্রথমে ভুল বোঝাই স্বাভাবিক। পিছন ফিরে তাকালে যে কেউই পুরো বিষয়টি বুঝতে পারবে যে কিভাবে ধীরে ধীরে মাদারের একটি অতিমানবিক চরিত্র মানুষের সামনে তৈরী করা হয়েছিলো।
এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সুপরিচিত ব্রিটিশ
ব্রডকাস্টার ম্যালকম মুগেরিজ দ্বারা। তিনি টেরেসার উপর একটি তথ্যচিত্র বানান “সামথিং বিউটিফুল টু গড” নামে। ১৯৬৯ সালে তথ্যচিত্রটি বিবিসি তে প্রচারিত হয়। পরে তিনি এই নামে একটি বইও লেখেন।
এখন দেখা যাক মুগেরিজ কিভাবে সত্য বিকৃত করে টেরেসার অতিমানবিক চরিত্র তৈরী করেছিলেন। তিনি সবাইকে জানান যে এই তথ্যচিত্র তৈরির সময়ই সম্ভবত প্রথম ফটোগ্রাফিক অলৌকিক ঘটনাটি ঘটে। তার মতে “হোম ফর ডাইং” এ আলো খুবই কম ছিলো। ফলে সেখানে ক্যামেরা ব্যবহার ছিলো রীতিমতো অসম্ভব‚ তবুও তারা এই তথ্যচিত্রের কাজ চালিয়ে যায়। পরে যখন তারা ফিল্মগুলোকে দেখে‚ তখন তিনি একটি ঐশ্বরিক আলোকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন।
মুগেরিজের কথায় – ” (এটি ছিলো ) ……একটি ভাস্কর জ্যোতির্বলয় যা সন্ন্যাসীদের মাথার চারপাশে দেখা গিয়েছিলো। আলোকিত ছবিটি যে কোনও ফটোগ্রাফিক ফিল্মে নিবন্ধিত হওয়া উচিত‚ তাতে আমি অবাক হওয়ার মতো কিছু পাই নি।
কিন্তু আসল সত্যি ছিলো কিছুটা আলাদা। এই তথ্যচিত্রের জন্য ( সামথিং বিউটিফুল ফর গড) ক্যামেরা টিমের নেতৃত্বে থাকা বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান কেন ম্যাকমিলান মুগেরিজের মিথ্যাচারকে ফাঁস করে দেন। ম্যাকমিলানের কথায় – “সামথিং বিউটিফুল ফর গড তথ্যচিত্র নির্মাণের সময়‚ একপর্যায়ে আমাদের টেরেসা কথিত “হাউজ ফর ডাইং” নামে এক বাড়িতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। পিটার চ্যাফার্থ বলেন‚ “ওহ! এখানে অত্যন্ত অন্ধকার‚ তুমি কি মনে করো যে আমরা এখানে কিছু পেতে পারি?” তখন আমরা কোডাকের কিছু নতুন ফিল্ম বিবিসিতে নিয়েছিলাম‚ যা তখনো পরীক্ষা করার সময় হয়নি। তাই আমি বলেছিলাম “ঠিক আছে‚ আমরা এগোতে পারি যেহেতু আমাদের করতেই হবে!” এইভাবেই আমরা ছবি নিয়েছিলাম। যখন আমরা বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরে এলাম, এক মাস বা দু’বার পরে‚ আমরা এলিং স্টুডিওর রাশেস থিয়েটারে বসে ছিলাম‚ হাউজ ফর ডায়িং এর ছবিগুলো আমাদের সামনে আসে। এটা ছিলো বিষ্ময়কর! আপনি বিষদে সবকিছু দেখতে পারেন। আমি বলেছিলাম “এটি আশ্চর্যজনক। এটি অসাধারণ।আমি কোডাকের জন্যে থ্রি চিয়ার্স জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তা বলার সুযোগ পাই নি কারণ সামনের সারিতে বসা ম্যালকম ঘুরে গেলো আর বলে উঠলো “এটা মাদার টেরেসার ঐশ্বরিক আলো। তুমি বুঝতে পারবে যে এটা একটা ঐশ্বরিক আলো।” তিন কি চারদিন পর আমি লন্ডনের সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের ফোন পাই, যারা এই জাতীয় কথা বলছিলেন যে – “আমরা শুনেছি আপনি ম্যালকম মুগেরিজের সাথে ভারত থেকে ফিরে এসেছেন এবং আপনি একটি অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী ছিলেন।”
“দ্য মিশনারি পজিশন” এর লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্স দেখেছেন যে‚ মুগেরিজের অলৌকিক ঘটনার প্রচারের ফলে প্রভাবিত টেলিভিশন ও গনমাধ্যমেগুলি
কেন ম্যাকমিলনের সাক্ষ্য প্রচারই করেনি।
ঘটনাক্রমে যাদের সাহায্যে মাদার টেরেসার
বর্তমান ইমেজ তৈরী হয়েছে তাদের মধ্যে মুগেরিজ অন্যতম। তাকে “ধারাবাহিক দুশ্চরিত্র” নামে অভিহিত করা হয়েছিল। বিবিসির ঐতিহাসিক জীন সিটন “Pinkoes and Traitors: The BBC and the Nation, 1974–1987” বইতে মুগেরিজের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ সৈন্য ও গুপ্তচর হিসাবে কাজ করা মুগেরিজ ১৯৯০ সালে মারা যান। দা গার্ডিয়ানকে সেটন আরও বলেছেন যে তৎকালীন মতবিরোধের বেদনাদায়ক আওয়াজ ম্যালকম মুগেরিজ‚ ছিলেন একজন দুশ্চরিত্র।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র “দ্য টেলিগ্রাফ” -কে লেখা একটি চিঠিতে ম্যালকম মুগেরিজের ভাইঝি
স্যালি বলেছেন যে মুগেরিজকে বিবিসিতে “দ্য পাউন্সার” ডাকনামে অভিহিত করা হয়েছিল এবং বর্ণনা করা হয়েছিল যে ” একজন ব্যক্তি যারা সংক্ষেপিত নাম NSIT হওয়া উচিত- not safe in taxis‚ ট্যাক্সিতে নিরাপদ নয়।”
অরুন আনন্দ ( Arun Anand )
Source :