দলিত পুরোহিত

একটা বিখ্যাত স্কুটি কোম্পানীর একটা এডভার্টাইজ একটা সময়ে খুব নজর কেড়েছিল সকলের।

“WHY SHOULD MEN HAVE ALL THE FUN?”

 সত্যিই তো বাইকিং এর যাবতীয় মজার অধিকার শুধুই কেন ছেলেদের থাকবে? স্কুটি আসার পরে সেই নারী মুক্তির একটা ঐতিহাসিক বিপ্লব কে স্মরনীয় করে রাখতেই এই বিখ্যাত ক্যাচলাইন টিই ব্যবহৃত হয়েছিল।

হাজার বছর ধরে পুরোহিতের কাজের একক অধিকার ভোগ করে আসছিল উচ্চবর্ণের মানুষ জন। পুজো আর্চার কাজে নিম্নবর্নের দলিত, আদিবাসীরা ছিল অচ্ছুত, অস্পৃশ্য। ভারতীয় হিন্দু সমাজের ঐক্য এবং সংহতির পক্ষে এই বর্ণভেদ একটা বিষফোঁড়ার ন্যায়, যা কিনা অনেক আগেই অস্ত্রপ্রয়োগ করে কর্তন করা করা উচিত ছিল। ব্যাক্তিস্বার্থ অথবা রাজনৈতিক স্বার্থ, যে কোন কারনেই হোক এই আশু অবশ্যম্ভাবী কাজটি কেউ করেনি বরং বিভেদের পাঁচিল দলিত, নিম্নবর্ণের মানুষ জনকে ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য ধর্মের আশ্রয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে বার বার।একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে ভারতের মুসলিম এবং খৃষ্টানদের মধ্যে সিংহভাগের উপাধি ই মন্ডল,কর্মকার,বিশ্বাস, তরফদার এসব। এরা সবাই হিন্দু উচ্চবর্ণের অস্পৃশ্যতার নির্যাতনে, দুরছাই করে দূরে ঠেলে দেওয়ার আক্রমনে জর্জরিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্য ধর্মের কোলে। অর্থাৎ এই বিভেদ অস্পৃশ্যতা আর ছোয়াছুয়ির ছোট্ট ঢিলেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছেন, হিন্দু ঐক্য সংহতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে, যতটা না বাহ্যিক কারনে তার চেয়ে অনেক বেশী আভ্যন্তরীণ দ্বন্দে।

এর পর কিন্তু দিন পাল্টেছে,কৃষ্ণা গোদাবরী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অনুভব করেছে এই বিভেদ, অস্পৃশ্যাতা হিন্দু সমাজকে নিকষকালো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দিনকে দিন।চাকা ঘুরতে আরম্ভ করেছে,সময় লাগলেও গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।

কামেশ্বর চৌপাল। হিন্দু-সমাজের অধিকাংশ মানুষ এই নামটি জানেন ই না। দলিত সমাজের প্রতিনিধি এই মানুষটিই ১৯৮৯ সালে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। অবশ্য দলিত সম্প্রদায় কে এক এবং অভিন্ন করে, সব কাজে সম অধিকার দেওয়ার প্রয়াস রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অনেক আগেই শুরু করেছিল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শাখা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ১৯৬৪ সালে তার জন্ম লগ্ন থেকেই হিন্দু সমাজে বিরাজমান বর্ণ বৈষম্য, অস্পৃশ্যাতা এবং জাতীভেদ প্রথা দূর করার জন্য নিভৃতে লোকান্তরে কাজ চালিয়ে গেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্নাটক সম্মেলন থেকেই বার্তা দেওয়া হয় সকল হিন্দুই ভাই ভাই, কেউ ই অস্পৃশ্য নয়।

কিন্তু যে খবরটি আজ সারা ভারত বর্ষের সমস্ত হিন্দু হৃদয়কে উদ্বেলিত করেছে সেটি সত্যিই একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ।সবার অলক্ষ্যে যে কাজটি ইতিমধ্যেই বিশ্বহিন্দু পরিষদ করে ফেলেছে সেটি সত্যিই যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক। মন্দিরে মন্দিরে পুজো আর্চ্চায় পৌরোহিত্য করার অধিকার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে দেওয়ার জন্য তারা ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার দলিতকে পৌরহিত্যের প্রশিক্ষন দিয়েছেন।সরকার পরিচালিত মন্দির গুলোর তালিকাতেও এই দলিত পুরোহিত দের নাম এনালিস্ট করা হয়েছে। প্রত্যেক দলিত পুরোহিত প্রশিক্ষন শেষে সার্টিফিকেট পেয়েছেন।বিশ্বহিন্দু পরিষদের পরিকল্পনার মধ্যে আগামীদিনে বাংলাতেও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে এই পুরোহিতের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সঙ্ঘের কার্যকর্তারা।

পৌরহিত্যের এই একক অধিকার পেট্রোল পাম্প আর রেশন ডিলারের মত বংশপরম্পরায় আর পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। সব হিন্দুর ই সব কাজে সমান অধিকারের কথা মাথায় রেখেই অত্যন্ত সুচারুরুপে কাজ চলছে। এক ভারত, একাত্ম মানববাদের লক্ষ্যে যে কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছিল ভারতবর্ষের ঠিকেদারেরা সেই কাজে এগিয়ে এসেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।ব্যাক ওয়ার্ড শ্রেনী থেকে উঠে আসা একজন মানুষ আজ গোটা ভার‍তবর্ষের প্রধানমন্ত্রী। এভাবেই সারা ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজ অস্পৃশ্যাতা মুক্ত, বিভেদ মুক্ত একটা ইউনিটারি সোসাইটি গঠনের দিকে আরেক টি ধাপ পেরোল বলেই দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কার্যকর্তারা।হিন্দু সমাজ তাই আজ এক নুতন দিশার পথে।সবার কল্যান,সবার মঙ্গল, সবার নিরাময়ের দিকে চেয়ে এই এ গান গাওয়াই যায় ” সর্বে ভবন্তু সুখীন,সর্বে সন্তু নিরাময়া।”

সজল মন্ডল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.