জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ এক যুগােপযােগী পদক্ষেপ

“Education is the manifestation of the perfection already in man.”—Swami Vivekananda

ভারতকে বিশ্বের দরবারে এক অতি উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিরাম গতিতে কাজ করে চলেছে মােদী সরকার। রাজনৈতিক ক্ষেত্র, অর্থনৈতিক সংস্কার, পররাষ্ট্রনীতি, সামরিক ক্ষেত্র ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীর সুযােগ্য ও ঐতিহাসিক নেতৃত্বে ভারত আজ এগিয়ে চলেছে সারা পৃথিবীতে শীর্ষস্থান অধিকারের দিকে। সাম্প্রতিককালে ভয়ংকর অতিমারীর সময়েও ভারত পৃথিবীকে এক বিপদ থেকে বেরিয়ে আসবার পথ দেখাচ্ছে। পৃথিবীর অতি উন্নত দেশগুলিতে যখন অতিমারীতে মৃত্যুহার ভয়ংকর বেশি, তখন এত জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এই ভারতে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম। এটা সম্ভব হয়েছে। মােদীজীর বিচক্ষণ ও সুচিন্তিত পদক্ষেপের কারণেই। এই সংকটকাল অতি শীঘ্রই কেটে যাবে, আমরা এই আশা রাখি। আগামীদিনে ভারতই হবে বিশ্বের পথপ্রদর্শক। এই লক্ষ্যে ভারত সরকারের আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলাে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’, যা নিঃসন্দেহে বিশ্বের । দরবারে ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। শিক্ষাই হলাে একটি জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড সােজা, সুস্থ ও দৃঢ় না হলে শায়িত অবস্থাই হয়ে পড়ে একমাত্র ভবিষ্যত। একইভাবে, যথার্থ শিক্ষা না থাকলে, জাতির প্রকৃত তথা সামগ্রিক উন্নতি হয় না। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের এই শিক্ষানীতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভারতে সর্বশেষ শিক্ষা-নীতি বলতে বােঝায় ১৯৮৬ সালের শিক্ষানীতকে, যা ১৯৯২ সালে আবার পরিমার্জিত হয় (NPE 1986/92)।মনে রাখা দরকার যে, এই প্রায় সাড়ে তিন দশকে দেশ তথা সমাজজীবনে ব্যাপক মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। তাই অনেক আগেই প্রয়ােজন ছিল যুগােপযােগী একটি নতুন শিক্ষানীতির, যা ভারতের আগামীদিনের শিক্ষার্থীদের করে তুলবে একই সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্য, পরম্পরা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারায় স্নাত। ভারতের এতদিনের প্রচলিত শিক্ষানীতিতে এই একটি মস্ত বড়াে ফঁক ছিল বা অভাব ছিল। বর্তমান শিক্ষানীতি সেই অভাবকেই পূরণ করল। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষিতই হবে না— সে হবে একজন প্রকৃত ভারতীয়, যে হবে নতুন ভারত গঠনের সৈনিক।

এই ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি মনে আসে, তাহলাে এই যে, বিগত দিনের শিক্ষানীতিগুলিতে এমন কী ছিল যার জন্য এই নতুন শিক্ষানীতি ছিল অত্যন্ত জরুরি? এই বিষয়ে গােড়াতেই বলে রাখা ভালাে যে, এই নতুন শিক্ষানীতি এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভারতীয় ধারায় ভাবতে শেখাবে, বিদেশি বা তাদের স্বার্থানুকূল্যে পরিপুষ্ট এদেশের কিছু তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত, দেশবিরােধী ও রাষ্ট্রভক্তিবিহীন ব্যক্তির চোখ দিয়ে শিক্ষার্থীরা আর নিজেদের মাতৃভূমিকে দেখবে না। এই কারণেই প্রয়ােজন ছিল সংশােধিত এই নতুন শিক্ষাক্রম তথা শিক্ষানীতির। এই বিষয়ে নতুন শিক্ষানীতিতে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে। 6,“The rich heritage of ancient and eternal Indian knowledge and thought has been a guiding light for this Policy. The pursuit of knowledge (Jnan), wisdom (Prajna) and truth (Satya) was always considered in Indian though and philosophy as the highest human goal. The aim of education in ancient India was not just the acquisition of knowlege as preparation for life in this world or life beyond schooling, but for the complete realization and liberation of the self… Indian culture and philosophy have had a strong influence on the world. These rich legacies to world heritage must not only be nurtured and preserved for posterity but also researched, enhence and put to new uses through our education system.”

তাই, এইকথা নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে, ভারতকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে অভিষিক্ত করবার যে মহান লক্ষ্যে নরেন্দ্র মােদী কাজ করে চলেছে, এই নতুন শিক্ষানীতি তারই একটি অঙ্গ। এর উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে— “The vision of the policy is to instill among the learners a deep-rooted pride in being Indian, not only in thought, but also in spirit, intellect and deeds as well as to develop knowledge, skills, values and dispositions that support responsible commitment to human rights, sustainable development and living and global, well-being thereby reflecting a truly global citizen.”

প্রকৃত শিক্ষানীতি হলাে সেটাই যা একেবারে শিশু অবস্থা থেকে শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নতিতে সাহায্য করে। এই নতুন নীতিতে সেই বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একেবারে প্রাথমিক বা বলা ভালাে। প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকেই একজন শিক্ষার্থীর বহুমুখী প্রতিভার যাতে সঠিক বিচ্ছুরণ ঘটে, সেই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে এবারের শিক্ষানীতিতে। সর্বোপরি, শিক্ষা যাতে কখনই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বােঝাস্বরূপ হয়ে না দাঁড়ায়, বরং তা যেন হয় উপভােগ্য, আনন্দদায়ক ও জ্ঞানার্জনের স্পৃহা বর্ধনকারী, সেই ব্যাপারটির দিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই খেলাচ্ছলে শিক্ষাদানের বিষয়টি এবারে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া, একেবারে অঙ্গনওয়াড়ি স্তর থেকে শুর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাত্তর পর্যন্ত

পরিকাঠামাে ও আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রের মানােন্নয়নের দিকটির প্রতি এবারে সরকার বিশেষ দৃষ্টিপ্রদান করেছেন। পাঁচ বছর বয়সের আগে প্রতিটি শিশুকে একটি প্রিপারেটরি ক্লাস বা বালবাটীকায় (প্রথম শ্রেণীর পূর্বে) যাওয়া নিশ্চিত করবার কথাও এক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এতে শিশুর শারীরিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের দিকটির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। তাছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নানা সময়ে বিভিন্ন রকম যুগােপযােগী ও আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। সরকারের সর্বোচ্চ প্রাধান্য হলাে এটিই যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতাভুক্ত করা যায় এবং বলাই বাহুল্য যে, মােদী সরকার এই লক্ষ্য পূরণে বদ্ধপরিকর।

এই নীতির প্রতিটি ধারা ধরে ধরে আলােচনা করাটা এই সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। তাই এবারে একটু অন্য দিকে আসা যাক। আমাদের এট বুঝতে হবে যে, এই শিক্ষানীতি একুশ শতকের ভারতের চাহিদা মেটানাের কাজ করবে। তাছাড়া, এটা মনে রাখা দরকার যে, যুবসমাজের যে লক্ষ্য, আদর্শ ইত্যাদি থাকে বা যে চাহিদা থাকে, তাকে ও মেটাতে পারবে এই নতুন শিক্ষানীতি। এই জাতীয় শিক্ষনীতি শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র বইমুখী শিক্ষায় উৎসাহিত বা সীমিত করে রাখবে না। পাঠ্যক্রম হবে চিত্তাকর্ষক (পাঠ্যক্রমের বােঝাও কমবে) ও ছাত্র – ছাত্রীরা হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, একস্ট্রা বা কো-কারিকুলার গুণবলীর বিকাশেও এই নীতিতে যথেষ্ট আলােকপাত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের জাতীয় আয়ের শতকরা ছয় ভাগ শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়িত হবে, যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই শিক্ষানীততে কেন্দ্রীয় সরকার দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছে সকলকে শিক্ষায় সংযুক্ত করার বিষয়টিতে; ফলে শিক্ষার অধিকার হবে সুরক্ষিত। কংগ্রেসি আমলে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক নাম বদলে হয়েছে শিক্ষামন্ত্রক, যা একটি বাস্তবােচিত পদক্ষেপ।

এই যুগ হলাে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দিকটিকে এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মনে রাখা দরকার, এখন থেকে আর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করে একটি চাকরির জন্য যাতে অপেক্ষা করে থাকতে বাধ্য না হয়, তার জন্য এবারের শিক্ষানীতিতে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছে। এই নীতি শুধুমাত্র কর্মপ্রার্থী তৈরি করবে না, এতে বৃদ্ধি পাবে কর্মদাতার সংখ্যাও। তাই বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান। ২০৩০ সালের মধ্যে সমস্ত শিক্ষার্থীকে সেকেন্ডারি লেভেলের আওতায় নিয়ে আসাই ভারত সরকারের লক্ষ্য। তাছাড়া, ভােকেশনাল শিক্ষায় যেহেতু সামগ্রিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই বাড়বে স্বনির্ভর ব্যক্তি তথা গােষ্ঠীর সংখ্যা। সার্বিক ভাবে দেশ হবে আত্মনির্ভর। এই ভাবেই কয়েক বছরের মধ্যেই ‘আত্মনির্ভর- ভারত’ নামক যে প্রকল্পের কথা মােদীজী ঘােষণা করেছেন, তা হবে সফল ও বাস্তবায়িত।।

একটা কথা না বললেই নয়, এই নতুন নীতি একদিকে মুক্ত চিন্তার বাহক এবং অন্যদিকে ভারতের মতাে দেশের ক্ষেত্রে যথেষ্টই অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের মতাে চিরকালীন শ্রেণীবিভাগ করাও এই নতুন নীতিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছামতাে বিষয় বেছে নিয়ে পড়তে পারবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, একজন শিক্ষার্থী অঙ্কের বা গণিতের সঙ্গে দর্শনও পড়বার সুযােগ পেতে পারবে। উন্নত বিশ্বের বহু দেশে এই ধারা বহুদিন ধরেই প্রচলিত। এই শিক্ষানীতির উপর একটি বাস্তববাচিত পদক্ষেপ হলাে অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিট। ভারত একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে আজও মূলত আর্থিক কারণেই বহু ছাত্র-ছাত্রীকে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। তাদের সাহায্য করবে এই ব্যাঙ্ক। উল্লেখ্য যে, সাম্মানিক স্নাতক কোর্স হতে চলেছে চার বছরের। কিন্তু কোনাে শিক্ষার্থী এক বছর সম্পূর্ণ করলে পাবে সার্টিফিকেট, দ্বিতীয় বছর ডিপ্লোমা, তৃতীয় বছরে ডিগ্রি এবং চতুর্থ বছরে সে সাম্মানিক স্নাতক হতে পারবে। যদি কেউ কোর্সের মাঝপথে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং পরবর্তীকালে আবার লেখাপড়া করতে চায়, তাে তাকে আবার নতুন করে ভর্তি হতে হবে না, সে যেখানে ছেড়েছিল, তারপর থেকেই সে আবার শুরু করতে পারবে। তার সমস্ত তথ্য জমা থাকবে ওই ব্যাঙ্কে। তাছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে গড়ে তােলাও সরকারের একটি লক্ষ্য। তাই দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে (বিশেষত গবেষণার ক্ষেত্রে) এক আন্তর্জাতিক এবং অতি উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়ার কথাও এই নীতিতে ঘােষিত হয়েছে। তাছাড়া রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে শিক্ষার্থী আদান-প্রদানের বিষয়টিও, যাতে ভারত শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে বিশ্ব গুর’ রূপে প্রতিভাত হয়। একইভাবে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষক আদান-প্রদানের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে আরও বেশি পরিমাণে বৃত্তি পেতে পারে, থাকছে তার ব্যবস্থাও। ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত যাতে আদর্শ হতে পারে, সেদিকেও সরকার দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে সকলকে উচ্চশিক্ষা প্রদানের কথাটিও সরকার স্বীকার করেছেন।

এক্ষেত্রে আরও একটি উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ হলাে বহুবিধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বদলে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশে একটিই সংস্থা সৃষ্টি করা, যাতে নিয়ন্ত্রণ হয় সহজসাধ্য, সমস্ত ক্ষেত্রে যােগাযােগ হয় সুষম এবং সর্বোপরি থাকে। স্বচ্ছতা। এই সংস্থার নাম হবে হায়ার এডুকেশন কমিশন অব ইন্ডিয়া। এছাড়া, শিক্ষা যাতে বেসরকারি ক্ষেত্রে ব্যবসায় পরিণত হয়ে না যায়, তার দিকেও এই নীতিতে স্পষ্ট ভাষায় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। সর্বোপরি বলা হয়েছে যে, শিক্ষা হবে বিশ্বমানের কিন্তু তার ভিত্তি হবে ভারতীয় সনাতন জ্ঞান-বিজ্ঞান, আদর্শ, চিন্তা-ভাবনা, ঐতিহ্য ও মূল্যবােধ। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারে এক্ষেত্রে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ভারতের ধ্রুপদী ভাষাগুলির আরও উন্নতিসাধন কীভাবে করা যায়, তা নিয়েও আছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সাধনের লক্ষ্যে এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ প্রকল্পটিতেও অধিক গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার যে কোনও স্তরেই ভাষা শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে শিশুর ক্ষেত্রে মাতৃভাষাই শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও অন্তত পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষাদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকে মাতৃভাষা ছাড়াও আরও দুটি ভাষার শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। এতে পরবর্তী ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সুবিদাই হবে।

যে কোনও নীতিই রূপায়ণের সফলতার উপরে বহুলাংশে নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির রয়েছে যথেষ্ট দায়িত্ব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এই বিষয়ে অন্যান্য বহু বিষয়ের মতােই তথৈবচ ও হতাশাজনক। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই এই রাজ্যের সরকার নানাভাবে এই নতুন শিক্ষানীতির বিরােধিতা করে চলেছে। অথচ এই নীতি বাস্তবায়িত হলে এই রাজ্যের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনে দারুণভাবে সফল হবে। তাই এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে এই রাজ্যের সরকারের কর্তব্য হলাে কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতি অবিলম্বে বাস্তবায়িত করা। একদা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা সমস্ত পৃথিবীতে বিখ্যাত ছিল। কিন্তু আজ তা গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।

সীমিত পরিসরে জাতীয় শিক্ষানীতির মতাে এত বড়াে বিষয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলােচনা করা সম্ভব নয়। তবু এই নীতির প্রধান বিশিষ্ট্যগুলি প্রসঙ্গে এই প্রবন্ধে আলােচনা করা হলাে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এই জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। এতে তিনি যা বলেছেন, তার একটি সারমর্ম যদি আমরা পর্যালােচনা করি তবে আমরা দেখব যে

(ক) এতে ৩-৪ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ প্রস্তাব ইত্যাদি নিয়ে আলােচনার পরই শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

(খ) এই শিক্ষানীতিতে একতরফা ভাবে কিছুই ঘােষণা করা হয়নি।

(গ) প্রতিটি দেশের শিক্ষানীতিতে সেই দেশের ন্যাশনাল ভ্যালু বা জাতীয় মূল্যবােধ ইত্যাদি প্রসঙ্গে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই নতুন শিক্ষানীতিও সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হয়েছে।

(ঘ) এই শিক্ষানীতি একুশ শতকের নতুন ভারতের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি গড়ে দেবে।

(ঙ) এই নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই সমৃদ্ধ হবেন।

(চ) একদিন যে পুরনাে ধারায় শিক্ষাব্যবস্থা চলেছে, তাতে What to think এই বিষয়টির উপরেই কেবলমাত্র গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বর্তমান নতুন শিক্ষানীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে How to think এই বিষয়টির উপরে। ফলে, শিক্ষাব্যবস্থা হবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। পাশাপাশি, কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার (Job oriented education) বিষয়েও এই নীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই প্রবন্ধের শুরু হয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের একটি অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ উক্তির দ্বারা। এটা বলতে কোনাে দ্বিধা নেই যে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে শুধুমাত্র শিক্ষিত ভারতীয়ই তৈরি হবে না, উপরন্তু তৈরি হবে। আদর্শ মানুষ এবং এর ফলেই মানুষের। অন্তরের পূর্ণত্বের যথার্থ বিকাশ ঘটবে। এই ভাবেই শিক্ষা প্রসঙ্গে স্বামীজীর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়িত হবে। তাই ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ হলাে প্রকৃত অর্থেই সেই যুগােপযােগী পদক্ষেপ, যা গড়ে তুলবে অজেয় ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত , অমর ভারত।

রামানুজ গােস্বামী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.