পৌষ মেলা – হাকিম -কোলকাতা – বাজার

শান্তিনিকেতনের কলাভবনে কাটানো দিনগুলোয় নিজের চোখে যেটুকু দেখেছি—পৌষ মেলা কি? ধর্মতলার ফুটপাতের সঙ্গে বিগবাজার ও বাজার কোলকাতা যোগ হলেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা হয়ে যায়। দূষণ প্রচন্ড বেড়ে যায়। লাল বাঁধে যে সব পরিযায়ী হাঁসরা আসে তাদের অবাঞ্ছিত অর্বাচীন হুজুগে রবীন্দ্র প্রেমিকদের হাতে মারাত্মক অত্যাচারিত হতে হয়। হোটেল গুলোয় দেদার গাঁজা ,মদ ফূর্তি চলে। আরো অনেক কিছুই চলে। আশ্রমিক ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার যথেষ্ট বিঘ্ন দেখা দেয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। হাজার হাজার নবাগত গাড়ীর ধূলায় আশেপাশের গাছ পালাগুলোর পাতায় লাল রঙের আস্তরন পড়ে যায়। মাথার চুলে পর্যন্ত ধুলো চিক চিক করে। শেষে একটা শান্তিনিকেতনি ঝোলা আর একটা অতি নিম্নমানের শিল্পগুন সম্পন্ন টেরাকোটা রবীন্দ্রনাথ কিংবা স্মৃতি হিসেবে একটা নকল একতারা কিনে তারা বাড়ী ফেরে। হ্যাঁ তবুও পৌষমেলা দরকার কারন হোটেল মালিকরা সারাবছরের হোটেল চালানোর খরচ তুলে নেন এই পৌষমেলার এসএলআর বাহিনীর ওপর। প্রতিদিনের হোটেলে থাকার খরচ ২৫০টাকা বেড়ে হয়ে যায় ৩০০০টাকা। সমস্থ হোটেলের সমস্ত ঘর হাউসফুল হয়ে যায়। শুধু তাই নয়—স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের বাড়ীও প্রায় একমাস এই রবীন্দ্র তীর্থযাত্রীদের হাতে ছেড়ে দেন। আনেক আশ্রমিক ছেলে মেয়েদের চুক্তিমত একমাসের জন্য ভাড়া ছেড়ে অন্য জায়গায় উঠে যেতে হয়। কারণ এই সময়ের ভাড়া সারা বছরের ভাড়ার চেয়ে ও কয়েক গুন বেশী । ভুবনডাঙার শান্তিনিকতনি জিনিসের দোকানদাররা এ সময় ধর্মতলার ফুটপাতের ব্যাগগুলি বেশ ভালো দামে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন। পৌষ মেলার সঙ্গে এতবড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি দেখবেন না? তার জন্য আস্ত শান্তিনিকেতনটাই গুঁড়িয়ে দিয়ে আবার পুরোটা জুড়ে পৌষমেলা শুরু না হয়ে যায় যেন। ফিরহাদ হাকিমের কথা শুনে বিশেষ আশ্চর্য হলাম না—“রবীন্দ্রনাথ গাছের তলায় বসে পড়াতেন সেখানে পাঁচিল কেন?” আমি জানি ফিরহাদ হাকিম শান্তিনিকেতন দর্শনের সময় সেই সব গাইডদের হাতে শান্তিনিকেতন দেখেছেন যারা টুরিস্টদের একটু গ্রামের দিকের মেঠো পথ দেখিয়ে বলেন——“ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন— গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ। ” সব শেষে বলি ওই শান্তিনিকতনের পৌষমেলা আর বসন্ত উৎসবে আসা রবীন্দ্রপ্রেমীদের পেটে একটা ঘুঁসি মেরে জিজ্ঞাসা করুন তো রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন কবে? হ্যাঁ ২৫এ বৈশাখ ছাড়া আর কিছু বের হবেনা। নোবেলটা তো আর উদ্ধার হলোই না । রবীন্দ্রপ্রেমের জন্য শান্তিনিকেতনে এসে ভিড়তে হয় না। রদ্দুর রায়ের রবীন্দ্র সংগীতকে নিয়ে চরম যৌন অশ্লীলতার প্রতিবাদ করেছেন কি! রবীন্দ্রনাথের ছবি জাল করে যারা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গর্ভমেন্ট আর্ট কলেজে প্রদর্শনী করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বাড়াচ্ছেন সাংসদ হয়েছেন এর প্রতিবাদ করেছেন কি? পৌষমেলার পাঁচিল ভাঙতে গিয়ে কখন যে শত বছরের পুরোনো গেট ভেঙে ফেললো বাঙালি বুঝতে পারলোনা,তেমনি পৌষমেলা রাখতে গিয়ে এরা যে কখন রবীন্দ্রনাথের সমস্ত পরিশ্রমের শান্তিনিকতনটাকেই সরিয়ে ফেলবে বাঙালি ধরতে পারবে না। তবে পৌষমেলা চলবে আর শান্তিনিকতনের গাইডরা ফিরহাদ হাকিমদের একটা উইএর ঢিবি দেখিয়ে বলবে—“এই দেখুন এখানে এইখানে রবীন্দ্রনাথ প্রচন্ড পরিশ্রম করে ,স্ত্রীর গয়না বিক্রী করে দিয়ে ,নোবেলের টাকা ফুটিয়ে দিয়ে,সারা ভারত ঘুরে ঘুরে চাঁদা তুলে একটা আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন। ”

লেখায় – রেখায় : তিতাস পণ্ডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.