তাঁর হাত ধরেই রাজধানীর রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে সমাজবাদী পার্টি। তাঁর হাত ধরেই মুলায়ম সিংয়ের দল ‘আধুনিক’ হয়েছে। বলিউডের কলাকুশলীরা তাঁর হাত ধরেই সমাজবাদী রাজনীতিতে আকর্ষণ দেখিয়েছেন। আবার তাঁর হাত ধরেই মুলায়ম সিং যাদবের (Mulayam Singh Yadav) দলে ভাঙাগড়ার খেলা শুরু হয়েছে। কথা হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অমর সিংয়ের। সমাজবাদী পার্টি মানে, গরিব দেহাতিদের দল। মুলায়ম সিং যাদব মানে, ‘আনপড়’ হিন্দি বলিয়ে গাঁইয়া নেতা। সমাজবাদী পার্টিতে অমর সিংয়ের আগমনের পর এই দুটি বদ্ধমূল ধারণা বদলে গিয়েছিল। যার জেরে আজ পর্যন্ত দিল্লির রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক সপা। সম্ভবত সেটাই অমর সিংয়ের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।
অমর সিংকে (Amar Singh) সপার সবচেয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ নেতা বলায় অনেকে অবাক হয়ে থাকবেন। এমনিতে নির্বাচনী রাজনীতিতে বিরাট কিছু সাফল্য তিনি পাননি। সমাজবাদী পার্টি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর আলাদা দলও তৈরি করেছেন, তাতেও সাফল্য আসেনি। সাফল্য আসেনি রাষ্ট্রীয় লোকদলে (RLD) যোগ দিয়েও। কিন্তু অমর সিংকে হাই প্রোফাইল বলার দুটি বড় কারণ আছে। এক বলিউডের অলিতে-গলিতে তাঁর অবাধ বিচরণ। বচ্চন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। সঞ্জয় দত্ত, জয়াপ্রদা, বিপাশা বসুদের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্য রাজনীতিতে নিজের জন্য আলাদা একটি জায়গা তৈরি করতে পেরেছিলেন তিনি। আর দুই হল, তাঁর লাইফস্টাইল। নিজেকে সবসময় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিসেবে তুলে ধরতে পছন্দ করতেন এই সপা নেতা। তাঁর হাই প্রোফাইল লাইফস্টাইল অন্তত সমাজবাদী পার্টির রাজনীতির জন্য আদর্শ ছিল না। তবু মুলায়মের দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন অমর সিং।
অমর সিং সমাজবাদী পার্টিতে (Samajwadi Party) যোগ দেন ১৯৯৬ সালে। তার আগে পর্যন্ত মুলায়ম সিং যাদবকে দেহাতি নেতা বলেই মনে করত রাজনৈতিক মহল। সমাজবাদী পার্টিও কমবেশি গ্রাম এবং মফঃস্বল শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু অমর সিংয়ের আগমনের পর তা আমূল বদলে যায়। ‘আনপড়’ হিন্দি বলিয়ে নেতা থেকে মুলায়ম ক্রমশ দিল্লির রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন। অমর সিংয়ের হাত ধরে বলিউডেও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে সপা। জয়া বচ্চন, জয়াপ্রদা মতো অভিনেতারা যোগ দেন সমাজবাদী শিবিরে। ক্রমশ শহরাঞ্চলেও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে সপা।
অমর সিং মাস্টারস্ট্রোক দেন ২০০৮ সালে মনমোহন সিংয়ের সরকারকে সমর্থন করে। একদিকে মুলায়মের সমর্থনে দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকার বাঁচে। অন্যদিকে বাড়তে থাকে সমাজবাদী পার্টির জনপ্রিয়তা। সম্ভবত সেকারণেই ২০১২ সালে একার ক্ষমতায় উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসে সমাজবাদী পার্টি। তার আগেই অবশ্য ২০১০ সালে সপা থেকে সাসপেন্ড করা হয় অমরকে। কিন্তু মুলায়মের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে , ২০১৬ সালে আবার তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান উত্তরপ্রদেশের নেতাজি। তারপর শেষ জীবনে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন অমর। আবার বহিষ্কৃত হয়েছেন। কিন্তু কোনওদিনই মুলায়মের সম্পর্কে খারাপ কথা বলে শোনা যায়নি তাঁকে। আসলে সারাজীবনই তিনি ছিলেন মুলায়ম সিং যাদবের বিশ্বস্ত সেনা। তাঁর মৃত্যুতে দলের প্রথম আধুনিক নেতাকে হারাল সমাজবাদী পার্টি।