অভিশাপ লেগেছে যেন বিশ্বের সুপ্রাচীন উপাসনালয়গুলিতে। একদিকে যখন কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে প্যারিসের আকাশ, সমবেত মানুষের হাহাকার ছাপিয়ে আগুনের গ্রাসে ভেঙে পড়ছে ঐতিব্যমণ্ডিত নতর দাম ক্যাথিড্রালের ধাতম মিনারের চূড়া, প্রায় একই সময় আগুনের লেলিহান শিখা আষ্টেপৃষ্টে ধরে জেরুসালেমের শতাব্দী প্রাচীন আল-আকসা মসজিদকে। আগুনে ছাড়খাড় হয়ে গেছে এই মসজিদের বহু পুরনো মারওয়ানি প্রার্থণা কক্ষ। তবে গোটা মসজিদে আগুন থাবা বসানোর আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনে ইসলামিক ওয়াকফের দমকলবাহিনী।
প্যালেস্তাইনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার এই মসজিদের প্রার্থণা ঘরের বাইরে নিরাপত্তা কর্মীদের ঘরে আগুন লাগে। সেখান থেকেই আগুন বিরাট আকার নিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রার্থণা ঘরে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় মারওয়ানি প্রার্থণা কক্ষ যা ‘সলোমন’স স্টেবল’ নামে খ্যাত। ঘটনার সময় মসজিদে রোজকার মতো প্রার্থণা চলছিল। ধোঁয়া দেখেই আতঙ্ক ছড়ায়। শুরু হয়ে যায় দৌড়োদৌড়ি, আর্তনাদ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ধোঁয়ার কুণ্ডলী বিশাল চেহারা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য শুরু হয় ছুটোছুটি। কিছপক্ষণের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করতে থাকে গোটা মারওয়ানি প্রার্থণা ঘরটিকেই।
জেরুসালেমের ওল্ড সিটির এই আল-আকসা ধর্মস্থানে প্রার্থনা করতে আসেন ইহুদি ও মুসলিমরা। ইহুদিদের কাছে আল-আকসা ‘টেম্পল মাউন্ট’ এবং মুসলিমদের কাছে এই ধর্মস্থান ‘নোবেল স্যাঙ্কচুয়ারি’ নামে পরিচিত। সপ্তম শতকে তৈরি প্রাচীন মার্বেল-পাথরে মোড়া এই ধর্মস্থান মুসলিম ও ইহুদি, দুই সম্প্রদায়ের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র। শুক্রবারের প্রার্থনায় যোগ দিতে পবিত্র এই ধর্মস্থানে আসেন হাজার হাজার মানুষ।

মারওয়ানি প্রার্থণা ঘরটি এই মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় অবস্থিত। ১৮৯০ সালে যখন এই মসজিদের নক্সা তৈরি হয়, মুসলিমরা আল-আকসার এই প্রার্থণা ঘরকে বলতেন হারাম অল-শরিফ। আল আকসার পরিচালন কমিটি এবং জেরুসালেম ওয়াকফের ডিরেক্টর জেনারেল শেখ আজাম অল-কাতিবের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এই প্রার্থণা ঘরের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের ঘর থেকেই আগুন ছড়িয়েছে। তবে কী ভাবে আগুন লাগলো সেটা এখনও অজানা। দমকল কর্মীদের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, না হলে বড় বিপর্যয় হতে পারত।’’
শতাব্দী প্রাচীন এই মসজিদের বিপর্যয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে জেরুসালেমের মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আব্বাস বলেছেন, ‘‘সেই সময় মসজিদে উপস্থিত সব মানুষই সুরক্ষিত আছেন। তবে প্যারিসের ঘটনা খুবই ভয়াবহ ও দুঃখজনক। সেখানকার বন্ধুদের জন্য আমার সমবেদনা রইল।’’