গতকালের অস্ত্র দিয়ে আজ যুদ্ধ জেতা যায় না! ভারতের সেনা সর্বাধিনায়কের মুখে ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও পাকিস্তান, কী বললেন

ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে আধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজন। বিদেশ থেকে কেনা অস্ত্র নয়, দেশের অভ্যন্তরে প্রস্তুত করা অস্ত্রের প্রয়োজন। একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এমনটাই জানালেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, পুরনো অস্ত্র দিয়ে বর্তমান সময়ের যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। বর্তমানে যুদ্ধ জিততে হলে প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত নতুন অস্ত্র। তাঁর কথায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পাকিস্তানের প্রসঙ্গও এসেছে। কী ভাবে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত, কী ভাবে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যাও করেছেন।

সামরিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বুধবার নয়াদিল্লিতে একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই যোগ দিয়েছিলেন জেনারেল চৌহান। বর্তমান সময়ের যে কোনও সংঘাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তায় জোর দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমরা আজকের যুদ্ধ গতকালের অস্ত্র দিয়ে জিততে পারব না। আজকের যুদ্ধ লড়তে হলে আগামী কালের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পুরনো সিস্টেম দিয়ে কাজ হবে না।’’ একই সঙ্গে বিদেশ থেকে অস্ত্রপ্রযুক্তি আমদানি এবং এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর উপরেও তিনি জোর দিয়েছেন।

জেনারেল চৌহানের মতে, যে কোনও দেশের সঙ্গে সংঘাতের সময়ে বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে থাকলে তা ভারতকে দুর্বল করে দিতে পারে। কারণ, তাতে দেশের অভ্যন্তরের প্রস্তুতি বিঘ্নিত হয়। সেনা সর্বাধিনায়কের কথায়, ‘‘আমদানিকৃত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা আসলে আমাদের প্রস্তুতি দুর্বল করে দেয়।’’

গত মে মাসে পাকিস্তানে ভারতের সেনা অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তৎপরবর্তী দুই দেশের সংঘাত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেনারেল চৌহান জানান, ওই সময়ে নানা ধরনের ড্রোন এবং গোলাবারুদ ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছিল ইসলামাবাদ। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তান থেকে আসা ড্রোন কিংবা গোলাবারুদের অধিকাংশই আমরা নিষ্ক্রিয় করেছি। কোনও পাক ড্রোন ভারতীয় সেনা বা অসামরিক কাঠামোর কোনও ক্ষতি করতে পারেনি।’’

আধুনিক সংঘাতে ড্রোনের গুরুত্ব যে দিন দিন বাড়ছে, তা-ও তুলে ধরেছেন জেনারেল চৌহান। বলেছেন, ‘‘ড্রোন কী ভাবে কৌশলগত ভারসাম্য বদলে দিচ্ছে, আমরা সকলে দেখেছি। এটা কোনও সম্ভাবনা নয়, এটাই এখন বাস্তবতা। প্রতি দিন আমরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি।’’

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তার পর টানা চার দিন চলে দুই দেশের সংঘাত। ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। এর অনেক পরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জেনারেল চৌহান মেনে নিয়েছিলেন, পাক হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু কতগুলি, তা খোলসা করেননি। তাঁর সেই বক্তব্য নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। এ বার দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেন সেনা সর্বাধিনায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.