শীর্ষে এসবিআই, চলতি আর্থিক বছরে হিসাবের খাতা থেকে ৪২ হাজার কোটি মুছে ফেলল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি

চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাস এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ৪২,০০০ কোটি টাকারও বেশি অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে (রাইট অফ) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। সোমবার লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি। গত অর্থবর্ষেও (২০২৩-২৪) তারা মুছে দিয়েছিল ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া। ২০২২-২৩ সালে ওই অঙ্ক ছিল ১.১৮ লক্ষ কোটি। বকেয়া মোছার তালিকায় শীর্ষ রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। ৮৩১২ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ মুছে দিয়েছে তারা। এ ছাড়া পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) ৮০৬১ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ৬৩৪৪ কোটি এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদা ৫৯২৫ কোটি টাকা মুছেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির লাগাতার এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সরব হয়েছে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি। অফিসারদের সংগঠন আইবক-এর রাজ্য সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কাদের বকেয়া আর হিসাবের মধ্যেই রাখা হচ্ছে না, সেই সব নাম প্রকাশ করুক ব্যাঙ্কগুলি। এই টাকা আসলে সাধারণ মানুষের। তাঁদের জানার অধিকার আছে, কোন রাঘব বোয়াল টাকা শোধ না করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। ব্যাঙ্ক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে হিসাবের খাতা থেকে বকেয়ার তথ্যটাই উধাও করে দিচ্ছে।’’

অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এই রাইট অফ কার্যত জাতীয় ক্ষতি। এটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা হওয়ার কথা নয়। ব্যাঙ্কগুলি বড় কর্পোরেট সংস্থার ঋণ মুছে দিচ্ছে। অথচ সাধারণ গ্রাহকদের বহু পরিষেবা বাবদ ফি-র অঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে।’’ তাঁর দাবি, অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ কমিয়ে হিসাবের খাতা পরিষ্কার দেখানোর জন্যই ব্যাঙ্কগুলি বকেয়া মোছার রাস্তা ধরে। অথচ খালি পদে কর্মী নিয়োগ না হওয়া কারণে যে গ্রাহক পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে, সে ব্যাপারে তারাই উদাসীন।

অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাসের মতে, এই পদক্ষেপ ঋণ খেলাপির প্রবণতাকে প্রশ্রয় দেয়। এর সিংহভাগ জুড়ে থাকে বড় কর্পোরেট সংস্থার বকেয়া ঋণ। তবে এ দিন পঙ্কজ জানিয়েছেন, মুছে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, বকেয়া ঋণের দাবি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাবে ব্যাঙ্কগুলি। তিনি জানান, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে ব্যাঙ্কগুলি বকেয়া আদায়ও করেছে ৩৭,২৫৩ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.