রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি কিভের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চায় ইউরোপীয় দেশগুলি। সোমবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের বৈঠকে এই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ‘ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স’ হিসাবে থাকবে ইউরোপীয় দেশগুলিই। তবে আমেরিকাও তাদের সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
সোমবার হোয়াইট হাউজ়ে দু’দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। প্রথম দফায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ট্রাম্প-জ়েলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেন ইউরোপীয় দেশগুলির নেতারাও। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর কথায়, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমেরিকার আশ্বাসই এই বৈঠক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি। যদিও আমেরিকা কী ভাবে সাহায্য করবে, তা নিয়ে প্রকাশ্য কোনও মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। ইউরোপীয় দেশগুলির নেতারাও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
ইউরোপীয় দেশগুলির বক্তব্য, যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি ইউক্রেনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আগামী দিনে রাশিয়া আর ইউক্রেনে হামলা করতে না পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ অনুসারে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার একটি বাহিনী গঠনের কথা বলেছেন। একটি ‘ইচ্ছাশক্তির জোট’ (কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং) গঠনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির পরে এই বাহিনীকে ইউক্রেনে মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই বাহিনী কেমন হবে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই কোনও মন্তব্য করেননি।
সামরিক আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই বাহিনী কেমন হবে, তা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রতিবেদন অনুসারে, এ ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা থাকে বলে মনে করছেন অনেকে। তার মধ্যে একটি হল, ইউক্রেনে ‘শান্তিরক্ষা বাহিনী’ পাঠানো। এই বাহিনী ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে। মূলত কোনও আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই এই বাহিনীকে মোতায়েন করা হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমান করা হচ্ছে, নেটোর সদস্য দেশগুলির সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর আগে দু’বার ভাববে রাশিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হল, কোনও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বিশাল এক সেনাবাহিনীর প্রয়োজন।
সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে ইউক্রেনে ‘ট্রিপওয়্যার’ বাহিনী (তুলনায় অনেক কম সংখ্যক সেনাকর্মীকে নিয়ে তৈরি বাহিনী) মোতায়েনের কথাও ভাবা হতে পারে। এই বাহিনীরও মূলত উদ্দেশ্য থাকবে ইউক্রেনকে রক্ষা করা। তবে এই বাহিনীর উপর হামলা করার অর্থ, যে দেশ ওই বাহিনী মোতায়েন করেছে, তারা হামলাকারী দেশের উপর পাল্টা আক্রমণ চালাবে। সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনের বাইরের সেনার উপর হামলা করতে রাশিয়া দ্বিতীয় বার ভাববে, এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘নজরদার বাহিনী’ (অবজ়ার্ভার ফোর্স) মোতায়েনের কথাও ভাবা হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের বাহিনীর মূলত কাজ থাকে কোনও সামরিক গতিবিধির বিষয়ে খবর দেওয়া।
তবে এমন কোনও সামরিক জোটে যে আমেরিকাকে যুক্ত করা হবেই, এমন কোনও আশ্বাস দেননটি ট্রাম্প। ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আমেরিকা সেনা পাঠালে তা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, ট্রাম্প সরাসরি মার্কিন বাহিনীকে ইউক্রেনে না-ও পাঠাতে পারেন। পরিবর্তে ইউরোপীয় দেশগুলিকে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারে আমেরিকা।