সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে পাকিস্তান থেকে একাধিক চিঠি এসেছে ভারতে। ওই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের এই চিঠিগুলিকে ‘প্রথানুগামিতা’ (ফরমালিটি) বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাটিল। জানালেন, এতে আদৌ ভারতের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হবে না। পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোর হুঁশিয়ারি নিয়ে মুখ খুলেছেন পাটিল।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে সিন্ধু চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল জলশক্তিমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তানের চিঠি ‘ফরমালিটি’ মাত্র। এর দ্বারা চুক্তির বিষয়ে ভারতের অবস্থান বদলাবে না। সিন্ধু চুক্তির আওতায় থাকা জল কোথাও যাবে না।’’
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাতে পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল দুই দেশের মধ্যে কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা বলা আছে এই চুক্তিতে। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারত জানায়, এই চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, এর শর্তগুলি এখন আর মানা হবে না। সিন্ধু চুক্তি অনুসারে ছ’টি নদীর মধ্যে সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার জল পাকিস্তান ব্যবহার করে। তাদের কৃষিকাজের ৮০ শতাংশ এই তিন নদীর জলের উপর নির্ভরশীল।
পাকিস্তান প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে তারা যুক্ত নয়। সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ভারতের সিদ্ধান্তকে তারা ‘একতরফা এবং বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে একাধিক বার। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ দাবি করেছেন, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলের উপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। তা বন্ধ করতে পারে না ভারত। বিলাবল কিছু দিন আগে এ বিষয়ে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ উঠলে জলশক্তিমন্ত্রী পাটিল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে বিলাবল অনেক কথাই বলেছেন। রক্ত এবং জল বয়ে যাওয়ার কথাও তিনি বলেছিলেন। কিন্তু আমরা এই সমস্ত ফাঁকা আওয়াজে ভয় পাই না।’’ সূত্রের খবর, ২৩ এপ্রিল সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত ভারত ঘোষণা করার পর থেকে অন্তত চারটি চিঠি নয়াদিল্লিকে লিখেছে পাকিস্তান। প্রতি ক্ষেত্রেই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু এতে যে লাভ হবে না, বৃহস্পতিবার বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।