স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত সব আবেদন বুধবার খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। হস্তক্ষেপ করা হয়নি কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে। হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থার জন্য এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদই দায়ী। কিন্তু দ্রুত শূন্যপদ পূরণ করা এখন লক্ষ্য। না হলে আগামী দিনে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। আদালতের পর্যবেক্ষণে মামলা খারিজের মোট ৯টি কারণ উঠে এসেছে।
- আদালত জানিয়েছে, মামলাকারীরা সকলে ‘অপেক্ষমাণ প্রার্থী’র তালিকায় (ওয়েট লিস্টেড) আছেন। তাঁরা কেউ নিয়োগপত্র পাননি। ফলে ২০২৫ সালের এই নিয়োগপ্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ তাঁরা আদৌ করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
- সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী এবং ‘অযোগ্য বা দাগি হিসাবে চিহ্নিত নন’ (আনটেন্টেড) এমন ব্যক্তিদের বয়সে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তা ছাড়া অন্য কাউকে এই সুবিধা দেওয়া হয়নি। মামলাকারীদের এই দুই তালিকায় ফেলা যায় না।
- ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল হাই কোর্টের রায় কিংবা ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোথাও বলা নেই যে, ভবিষ্যতে শূন্যপদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাবে না। আবার, নিয়োগের জন্য রাজ্য বা কমিশন নতুন নিয়ম বা বিধি বানাতে পারবে না— এমন কথাও বলা হয়নি।
- নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর এখন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আগে যা ছিল ৪৫ শতাংশ। এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এতে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। এই ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তে আদালত তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে, যদি তাতে স্বেচ্ছাচারিতা, পক্ষপাত বা অসাংবিধানিকতার অভিযোগ ওঠে।
- যখন কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থা শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে, তখন আদালত তার উপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। ভাল ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বেশি সংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণ ও দক্ষতার ভিত্তিতে তাঁদের নির্বাচন হওয়া কাম্য। সময়ের সঙ্গে শূন্যপদ বৃদ্ধি পাবে, এটা স্বাভাবিক।
- অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর করে দেওয়া হয়, যাতে অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা সুযোগ পান। এটা অন্যায্য নয়। সরকার চাইলে শিক্ষকের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে পারে। ২০২৫ সালের নিয়োগের উদ্দেশ্য যোগ্যতম প্রার্থী নির্বাচন করা। সংবিধানের ২১এ ধারা অনুযায়ী, শিশুরা উন্নত মানসম্পন্ন শিক্ষা পাওয়ার অধিকারী। তা শুধুমাত্র দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকই দিতে পারেন। ফলে নিয়োগ নীতি পরিবর্তন অযৌক্তিক নয়।
- আবেদনকারীরা কেউ ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হননি। কোনও স্কুলে শিক্ষকতা করেন না। ফলে তাঁরা বয়সে ছাড় বা অন্য কোনও সুবিধার দাবিদার হতে পারেন না।
- কোনও নীতি কতটা উপযুক্ত বা কার্যকর, তা বিচার করা আদালতের কাজ নয়। যদি না সেই নীতি অসাংবিধানিক হয়, বা আইনের পরিপন্থী হয়।
- সরকার কত জনকে নিয়োগ করবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। প্যানেলে নাম থাকলেই নিয়োগে অধিকার পাওয়া যায় না। মামলাকারীরা শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন মাত্র। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তাঁরা পড়েন না।
২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে হত ৩০ মে নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এসএসসি। পরীক্ষাপদ্ধতিতে বেশ কিছু বদল আনা হয়েছিল। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। মামলাকারীদের দাবি ছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের মতোই করতে হবে। ২০২৫ সালের নতুন বিধি চলবে না। বুধবার হাই কোর্ট সেই আবেদনই খারিজ করে দিল। মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস। রাজ্যের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এ ছাড়া, এসএসসি-র হয়ে এই মামলায় সওয়াল করেছেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।