গোটা দিন ধরে কর্মবিরতি কেন? এতে আদালতের উপর মামলার চাপ বৃদ্ধি পায়, আইনজীবীদের বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ কোর্টের

সারা দিন ধরে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত না-নেওয়ার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, এর ফলে মামলা জমতে থাকে, যার জেরে ‘আদালতের উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে’। সম্প্রতি হাই কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের উদ্দেশে এমনটাই বলেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। বিচারপতি তাঁদের বলেন, “পূর্ণদিবস কর্মবিরতি (না-করা)-র বিষয়টি ভেবে দেখুন। সময় বদলেছে।”

পূর্ণদিবস কর্মবিরতির বদলে প্রয়োজনে শেষ বেলায় দুপুর সাড়ে ৩টের পরে এই ধরনের কর্মসূচি করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন বিচারপতি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও তাঁর পরামর্শ বিবেচনা করবেন বলে জানান। বস্তুত, গত রবিবার রাতে হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গত সোমবার সকাল ১০টা ১০মিনিটে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রয়াত আইনজীবীকে শ্রদ্ধা জানাতে ওই দিন আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না-করার জন্য অনুরোধ করা হয় সকল আইনজীবীকে।

হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শঙ্করপ্রসাদ দলপতিও আদালতকে অনুরোধ করেন, যাতে ওই দিন কোনও মামলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের অনুপস্থিতিতে কোনও নির্দেশ না-দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সোমবার বিচারপতি ঘোষ আদালতের কর্মদিবসের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “আর মাত্র ১৪টি কর্মদিবস বাকি রয়েছে (দুর্গাপুজোর ছুটি পড়ার আগে)। তার মধ্যে এক দিন (সোমবার) চলে গেল। আপনার এগুলি (কর্মবিরতি) দুপুর সাড়ে ৩টের পরে করুন। তত ক্ষণ পর্যন্ত আমাদের (বিচারপতিদের মামলা শোনার) সুযোগ দিন, যাতে আমরা (মামলাগুলিতে) গতি বৃদ্ধি করতে পারি।”

ওই সময়ে বিচারপতি ঘোষের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। তিনি বিচারপতির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেন, “আমরা পেশাদার এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গেই আমাদের কাজ করার কথা। পুরো একদিনের জন্য আদালত বন্ধ রাখার ফলে পর পর অন্য কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ে।”

বস্তুত, সোমবার সকাল পর্যন্ত হাই কোর্টে মোট ২,০৩,৩৪৯টি মামলা জমে রয়েছে। এর মধ্যে ৩০,৩৫০টি রয়েছে ফৌজদারি মামলা। এ অবস্থায় বিচারপতি ঘোষের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আদালতের তরফে হাই কোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশে এমন প্রস্তাব এই প্রথম নয়। গত বছর হাই কোর্টের বার গ্রন্থাগারের দ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনিও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে একটি গোটা দিনের জন্য কর্মবিরতি না-করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.