‘ঈশ্বর আমায় কেন নিলেন না?’ রাজস্থানের স্কুলে দুর্ঘটনায় দুই সন্তান হারিয়ে বিলাপ মায়ের, দুর্ঘটনার দায় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

রাজস্থানের স্কুল ভবন ভেঙে মৃত পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছে তাঁর দুই সন্তানই! সকালে হাসিখুশি ভাইবোন স্কুলে গিয়েছিল। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে বাড়িতে খবর যায় স্কুলের ছাদ ধসে আহত হয়েছে তারা। স্কুলে এসে তাঁদের মা জানতে পারেন, দু’জনের কেউ-ই বেঁচে নেই! অসহায় মায়ের আর্তি, ঈশ্বর তো তাঁকে নিতে পারতেন। বাঁচিয়ে দিতেন দুই সন্তানকে!

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে রাজস্থানের ঝালাওয়াড়ের মনোহর থানা এলাকার পিপলোড়ি গভর্নমেন্ট স্কুল ভবনের ছাদের একাংশ। দুর্ঘটনার সময় সকালের প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিল প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা। কেউ কেউ পালাতে পেরেছিল, তবে অনেক পড়ুয়ারাই ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকা পড়ে। এই দুর্ঘটনায় সাত জন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের মীনা এবং তার বছর ছয়েকের ভাই কানহা!

শনিবার ঝালাওয়াড়ের এসআরজি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের মর্গের বাইরে মৃত সাত শিশুর পরিবারের লোকেরা ভিড় করেন। সকলের চোখেমুখে বিষণ্ণতা। কেউ কেউ অঝোরে কাঁদছেন, আবার কেউ কেউ শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। শনিবারই মৃত শিশুদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের দেহ আঁকড়ে মা-বাবা, পরিবারের লোকেদের আর্তনাদ পরিবেশ ভারী করে তুলেছে। সেই ভিড়ের মধ্যে মীনা এবং কানহার মা-ও ছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর বিলাপ, ‘‘সব হারিয়ে ফেললাম। আমার তো দু’টি সন্তানই ছিল। তারাও চলে গেল। আমার বাড়ি এখন ফাঁকা। ঈশ্বর আমাকে কেন নিলেন না?’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই স্কুলভবনটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় ছিল। তবে এক মাস আগে রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কাজ হয়। কিন্তু সেটা যে যথেষ্ট ছিল না, শুক্রবারের ঘটনাই তার প্রমাণ। শুক্রবার যখন ছাদ থেকে বালি-পাথর পড়তে শুরু করে, তখন খুদে পড়ুয়ারাই শিক্ষকদের সাবধান করে। অভিযোগ, সেই কথা কানেই তোলেননি কেউ। উল্টে বকাবকি করেন শিক্ষকেরা। এই ঘটনার দায় কার, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই কর্তব্য গাফিলতির অভিযোগে ওই স্কুলের পাঁচ শিক্ষককে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে। তবে অনেকের প্রশ্ন, শুধু শিক্ষকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়াতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.