বিশ্বের কিছু রহস্যের সমাধান অধরাই থেকে যায়। সময় যত এগোয়, মানুষের কৌতূহল ততই বাড়ে। বারবার সে বিষয় নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়। তেমনই একটা বিষয় টাইটানিক (Titanic) জাহাজের সলিল সমাধি। জাহাজটির করুণ পরিণতির কারণ নিয়ে আজও তদন্ত করে চলেছেন অনেকে। আর সেরকমই এক তদন্তে সম্প্রতি উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য়। তদন্তে ইঙ্গিত, শুধুমাত্র হিমশৈলে ধাক্কা খাওয়াই নয়, টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার পিছনে ছিল অন্য কারণ।
১৪ এপ্রিল, ১৯১২ সাল। ইংল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে রাতে ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। মৃত্যু হয়েছিল ৭০০ যাত্রীর। কীভাবে ঘটল এমন ঘটনা? এ নিয়ে তদন্ত করছেন গবেষক মিলা জিনকোভা জাবি। ‘ওয়েদার’ নামে এক জার্নালে তিনি জানিয়েছেন, সুমেরু প্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিসের (aurora borealis) প্রভাবে সেদিন দিকভ্রান্ত হয়েছিল প্রাসাদোপম জাহাজটি। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছিল।
‘ওয়েদার’-এ বলা হয়েছে, ১৪ এপ্রিল রাতে আকাশে চাঁদ ছিল না। বরং সুমেরু প্রভার (Northern Lights) ছটায় আলোকিত হয়েছিল চারপাশ। সৌরঝড়ের প্রভাবেই তৈরি হয়েছিল এই প্রভা। কখনও কখনও সৌরঝড়ে তীব্রতা এতটাই বেশি হয় যে তা অরোরা বা সুমেরু প্রভা তৈরি করতে পারে। এই ঝড় স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে সক্ষম। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের উপরও এই সৌরঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
ওই গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, ওই দিন রাতে উত্তর আটলান্টিক সাগরে ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই ঝড়ের কারণেই জাহাজের দিক নির্ণয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়েছিল। গবেষকের আশঙ্কা, ভুল পথে চালিত হয়েছিল জাহাজটি। ফলে বরফের ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়র দরুন নিকটবর্তী লা প্রভেন্সে টাইটানিকের বার্তা গিয়ে পৌঁছয়নি। এমনকী, কার্পাথিয়ার কাছে টাইটানিকের সঠিক অবস্থানের বার্তাও যায়নি। কাকতালীয়ভাবে, কার্পাথিয়ারও কম্পাসের ভুলে টাইটানিকের কাছে পৌঁছয় তারা। এই জাহাজের সেকেন্ড অফিসার জেমস বিসেটের সেদিনে লগবুকে শক্তিশালী অরোরা বোরিয়ালিসের উল্লেখ পাওয়া যায়। নয়া গবেষণা অনুযায়ী, মহাজাগতিক কাণ্ডকারখানার প্রভাবেই দিক ভুল করে টাইটনিক। আর তার সলিলসমাধি ঘটে। যদিও এই গবেষণায় বেশ কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন মিলা জিনকোভা জাবি। তা সত্ত্বেও এই তদন্ত যে টাইটানিক দুর্ঘটনায় নতুনভাবে আলোকপাত করল, তা বলাই বাহুল্য।