ওভালে অর্ধশতরানের আগে নিজেকে কী কথা দিয়েছিলেন আকাশদীপ? ফাঁস করলেন দেশে ফিরে

ইংল্যান্ড সফরে তিনটে টেস্ট খেলেছেন আকাশদীপ। তাতেই নজর কেড়েছেন ভারতের পেসার। নিয়েছেন ১৩ উইকেট। পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ৮০ রান করেছেন তিনি। ওভালে নির্ণায়ক টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে নৈশপ্রহরী হিসাবে নেমে ৬৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। টেস্টে এটা আকাশদীপের প্রথম অর্ধশতরান। সেই ইনিংসের আগে নিজেকে তিনি কী কথা দিয়েছিলেন, তা জানিয়েছেন বাংলার পেসার।

দেশে ফিরে ‘আজ তক’-কে আকাশদীপ বলেন, “আমি কখনও আশার উপর নির্ভর করে ক্রিকেট খেলিনি। সেই রাতে আমি নিজেকে কথা দিয়েছিলাম যে আউট হব না। ঠিক করেছিলাম, কোনও খারাপ শট খেলব না। যদি ভাল বলে আউট হই তো কিছু করার নেই। ক্রিকেটে সেটা হতেই পারে। যদি রান করতে না পারি, সমস্যা নেই। আমার লক্ষ্য ছিল উইকেটে পড়ে থাকা। নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। তাতে ব্যাট করতে সুবিধা হয়েছে।”

ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে নৈশপ্রহরী হিসাবে নেমেছিলেন আকাশদীপ। এই সিরিজ়ে আগেও এই ভূমিকা তিনি পালন করেছেন। লর্ডসে নেমেছিলেন। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই আউট হয়ে যান। ওভালে টিকেছিলেন আকাশদীপ। পরের দিন ব্যাট করতে নেমে ভরসা জোগান তিনি। যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে শতরানের জুটি বাঁধেন। তিনি নিজে ৯৪ বলে ৬৬ রান করেন। ওভালে চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের সামনে ৩৭৪ রানের লক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আকাশদীপের এই ইনিংসের অবদান রয়েছে। নইলে ভারতের পক্ষে সিরিজ় ড্র করা সম্ভব হত না।

ইংল্যান্ডে তাঁর সাফল্যের নেপথ্যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও বিরাট কোহলির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আকাশদীপ। বাংলার পেসার বলেন, “বিরাট ভাই সব সময় আমাকে বলেছে, কোনও সন্দেহ থাকলে অনুশীলন বাড়িয়ে দিতে হবে। তা হলে আর নিজেকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন তৈরি হবে না। ধোনি ভাইও সব সময় অনুশীলনের কথা বলেছে। ও বলেছে, অনুশীলন বেশি করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ক্রিকেট আত্মবিশ্বাসের খেলা। যার আত্মবিশ্বাস বেশি, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।”

ইংল্যান্ডে সফল হওয়ার জন্য আকাশদীপও অনুশীলনের উপরেই ভরসা রেখেছেন। নেটে সময় দিয়েছেন। তিনি জানতেন, বেশ সুযোগ পাবেন না। তাই নিজেকে আরও ভাল ভাবে তৈরি করেছিলেন। এজবাস্টনে প্রথম বার নেমে তাঁর ১০ উইকেট তারই প্রমাণ। আকাশকে দেখে মনে হয়নি, ইংল্যান্ডে প্রথম ম্যাচ খেলছেন। নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রেখেছেন তিনি।

পিছিয়ে থেকেও ৫ টেস্টের সিরিজ় ২-২ ড্র করেছে ভারত। আকাশদীপ যে তিনটে টেস্ট খেলেছেন তার মধ্যে দুটো জিতেছে ভারত। ওভালে শেষ টেস্টে জয় সহজ ছিল না বলেই মনে করেন বাংলার পেসার। সেটাই তাঁরা করে দেখিয়েছেন। আকাশদীপ বলেন, “ওটা আমাদের কাছে ফাইনাল ছিল। আমরা ১-২ পিছিয়ে ছিলাম। তাই জিততেই হত। কিন্তু শেষ দিকে উইকেট পাটা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ সুবিধা পাচ্ছিলাম না। ভাবছিলাম হেরে যাব। হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেল। দর্শকদের সমর্থন আমাদের আরও তাতিয়ে দিল।”

পঞ্চম দিন নতুন বল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নেয়নি ভারত। পুরনো বলেই ইংল্যান্ডের বাকি ৪ উইকেট ফেলে দিয়ে ৬ রানে ম্যাচ জেতে ভারত। সেই অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন আকাশদীপ। তিনি বলেন, “সাজঘরেই আমরা ঠিক করেছিলাম বল সুইং করলে নতুন বল নেব না। কারণ, নতুন বল নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হয়। সেই সময় হাতে রান বেশি ছিল না। ফলে রানও আটকাতে হত। আমাদের পরিকল্পনা ছিল দ্রুত উইকেট তুলতে হবে। সেটা না হলে হয়তো নতুন বল নিতাম। কিন্তু সিরাজ ভাই তার আগেই ওদের অল আউট করে দিল।”

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন আকাশদীপ। এজবাস্টনে ১০ উইকেট নেওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর দিদি অখণ্ড জ্যোতি সিংহ ক্যানসার আক্রান্ত। বল করার সময় সেই দিদির কথাই ভেবেছেন তিনি। দিদিদের সঙ্গে রাখি উদ্‌যাপন করেছেন পেসার। তিনি বলেন, “অনেক দিন পর দিদিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। ওরা আমাকে রাখি পরিয়েছে। আমি যে কোনও সাফল্য দিদিদের সঙ্গেই উদ্‌যাপন করি। এ বারেও সেটাই করছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.