সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। অঝোর ধারায় বৃষ্টি। সে সব উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কর্মসূচি অনুযায়ী বিকালে উত্তর কলকাতায় প্রতিবাদী মিছিলে পা মেলালেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামীরা। অঞ্জন দত্ত, কৌশিক সেন, রেশমি সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় আবীর চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপরাজিতা ঘোষ দাস, বিশ্বনাথ বসু,অঙ্কুশ হাজরা, জিনিয়া সেন, ঐন্দ্রিলা সেন, জীতু কমল, সৌরসেনী মৈত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র, দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত, অনিমেষ বাপুলি-সহ বিভিন্ন মাধ্যমের অভিনেতা, কলাকুশলীরা এ দিন খান্না থেকে শ্যামবাজার পাঁচমাথা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। সকলের কণ্ঠে ‘সিনেমাপাড়ার একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর’ ধ্বনি। এই পদযাত্রায় যোগ দেন বলিউডের খ্যাতনামী পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর চিত্রগ্রাহক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। খবর, তিনি দক্ষিণের একটি ছবির রেকি করতে কলকাতায় এসেছেন। সম্ভবত তিনি উপস্থিত ছিলেন উত্তর কলকাতাতেই। সেখানে এই প্রতিবাদী সমাবেশ চোখে পড়ে তাঁর। যোগ দেন টলিউড শিল্পীদের সঙ্গে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। তাঁরও কণ্ঠে একটাই ধ্বনি, ‘বিচার চাই, ন্যায় চাই’।
এ দিনের সমাবেশ যতটা তারকাখচিত ততটাই মানবিক। আগেই ঠিক ছিল, বিকেল চারটেয় টলিউডের প্রত্যেকে প্রথমে জমায়েত হবেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়োয়। এ দিন কিন্তু কেউ দেরি করেননি। নির্দিষ্ট সময়ে স্টুডিয়ো চত্বরে একে একে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, রণজয় ভট্টাচার্য, ইশা সাহা এবং আরও অনেকে হাজির। সেখানেই পরমব্রত বলেন, “নারীসুরক্ষা চেয়ে আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। আর রয়েছে অন্যায়ের প্রতিবাদ, মৃতা তরুণী চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচার। এই সব কিছু শান্তিপূর্ণ মিছিলের মাধ্যমে আমরা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করব শাসকদের কাছে।” তখনই ঠিক হয়, খান্না থেকে শ্যামবাজার পাঁচমাথা পর্যন্ত হাঁটবেন তাঁরা। চেষ্টা করবেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভরত চিকিৎসক-ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে। না হলে, প্রশাসনের নির্দেশ মেনে যতটা হাঁটা যাবে, ততটাই হাঁটবেন।
এ দিন আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো নির্দিষ্ট বাসে চেপে তাঁরা রওনা দেন গন্তব্যের দিকে। খান্নায় এসে যোগ দেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং আরও অনেকে। কালো রঙের ফ্লেক্সে লাল-সাদায় লেখা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে এখান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তাঁরা। পথের দু’পাশে কালো কালো অজস্র মাথা। নাট্যকর্মীদের পর পর্দার তারকাদের প্রতিবাদের সাক্ষী উত্তর কলকাতা। যদিও শ্যামবাজার পাঁচমাথা থেকে মিছিলকে আর এগোতে দেয়নি প্রশাসন। তাদের বিনীত অনুরোধ, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আরজি কর-সহ আশপাশের অনেকটা জায়গায় মিছিল, মিটিং, জমায়েত নিষিদ্ধ। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে মিছিল এর পর শ্যামবাজার মেট্রোয় এসে থামে। তখনও আকাশবাতাস মুখরিত ‘বিচার চাই’ ধ্বনিতে। শাশ্বতের কথায়, “এ ভাবেই আন্দোলন চলতে থাকুক। যত দিন না সমাজ অন্যায়মুক্ত হয়।” বিধায়ক নন, প্রযোজক-পরিচালক হিসাবে রাজের দাবি, “প্রত্যেক নারীর সুরক্ষা চাই। যাতে আর কোথাও আরজি কর-কাণ্ড না ঘটে।” একই কথা পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, অঙ্কুশ, ঐন্দ্রিলা, জীতুরও।
প্রতিবাদ এ দিনের মতো শেষ। ফের অঝোর ধারাপাত। সুরকার ইন্দ্রদীপ তড়িঘড়ি ছাতা ধরলেন এক মহিলা সাংবাদিকের মাথায়! বললেন, “এই প্রতিবাদ রোজ হবে। নতুন আঙ্গিকে। শহরের সর্বত্র। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।” একটু দূরে এক পথচারী সৃজিতের কাছে তখন জানতে চাইছেন, “জাস্টিস মানে কী?” ‘পদাতিক’ পরিচালক তাঁর কাঁধে হাত রেখে বোঝালেন, ‘জাস্টিস’ মানে ন্যায়। মানে বুঝেই সেই পুরুষ পথচারীও গলা মেলালেন, “জাস্টিস জাস্টিস।”