ঘোড়ায় চড়ে পহেলগাঁওয়ের ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ দর্শনে গিয়েছিলেন, মৃত্যুদূতেরা এল ভেলপুরি খাওয়ার সময়

কাশ্মীর ভাষায় ‘নাগ’ মানে ঝর্না। ‘অনন্ত’ মানে অসংখ্য। দক্ষিণ কাশ্মীরের সেই অনন্তনাগ জেলার ‘মাথার মুকুট’ হিসাবে পরিচিতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পর্যটন স্থান পহেলগাঁও। আর পর্যটকদের জন্য অবশ্য-দর্শনীয় ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত সবুজে ঢাকা বৈসরণ উপত্যকা।

পহেলগাঁও বেসক্যাম্প থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে, জাফরান, আখরোট, আপেলের বাগান আর জঙ্গলে ঢাকা, পাহাড়ে ঘেরা ওই ‘বুগিয়াল’ বসন্ত-গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে ভিড়ে ঠাসা থাকে। যেমনটা ছিল মঙ্গলবার দুপুরে। ঘোড়ায় চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে পর্যটকেরা পৌঁছেছিলেন পাহাড়ে ঘেরা প্রান্তরে। স্থানীয় হোম স্টে লাগোয়া ছোট রেস্তোরাঁগুলিতে ভিড় জমিয়েছিলেন ভেলপুরি, পাপড়ি চাটের জন্য। অনেকে আবার ঘোড়সওয়ারি করছিলেন বৈসরন ময়দান ও আশপাশের পাইন বনে। ঠিক সেই সময়ই ‘উদয় হল’ স্বয়ংক্রিয় রাইফেলধারী ঘাতকদের।

প্রত্যক্ষদর্শী এক পর্যটক জানিয়েছেন, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল পাঁচ-ছ’জন। হঠাৎই তারা রাইফেল উঁচিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে পর্যটকদের এক এক করে পরিচয় জানা শুরু করে। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ছাড়া বাকিদের উপর নির্বিচারে শুরু হয়ে গুলিবর্ষণ। বিদেশিরাও বাদ যাননি। অনেককেই পয়েন্ট ব্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে মারা হয়। পালাতে গিয়ে গুলির শিকার হন অনেকে। শতাধিক রাউন্ড গুলি চালিয়ে নিরাপদে জঙ্গলে গা ঢাকা দেয় তারা। নিহত পর্যটকদের মধ্যে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং ওড়িশার বাসিন্দারা রয়েছেন।

ঘটনাচক্রে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের ভারত সফরের সময়ই হামলা চালাল সন্ত্রাসবাদীরা। পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) মঙ্গলবার রাতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মঙ্গলবারের হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। হামলাকারীদের সন্ধানে বিকেল থেকেই আশপাশের পাহাড় জঙ্গল ঘিরে চিরুনি তল্লাশি অভিযান (নিরাপত্তার পরিভাষায়, ‘সার্চ অ্যান্ড কুম্বিং অপারেশন’ বা ক্যাসো) শুরু করেছে সেনা, রাষ্ট্রীয় রাইফেল্‌স, সিআরপিএফের যৌথ বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.