ঐতিহ্যকে অস্বীকার নয়, তবে অচলায়তন ভাঙার সাহসী ডানায় ভর করেই তাঁর সংবাদ এবং সম্পাদনার জীবন। মধ্য ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় সেই প্রত্যয়ের উত্তাপকে আবার স্মরণ করালেন, স্বাগত জানালেন এবং ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের বক্তৃতায় শেখাতে চাইলেন অভীক সরকার। বছরের বেস্ট অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক কথায় ছুঁয়ে গেলেন আরজি কর আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির ব্যবসা-প্রসঙ্গ। বললেন, ‘‘আমরা অধ্যবসায়কে যেমন অভিবাদন জানাচ্ছি, তেমনই স্বাগত জানাচ্ছি এক নতুন বাংলাকে, যারা সাহসী পদক্ষেপ করে অপরিচিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।’’
বছরের বেস্টের অতীতের সন্ধ্যাগুলিতেও বাঁধ ভাঙার কথা বলে এসেছেন অভীকবাবু। খবরের উপস্থাপনাতেও বেড়া ভাঙার ধারাবাহিকতা তিনি দেখতে চান। বছরের বেস্টের প্রত্যেক বারের অনুষ্ঠান সেই গতিপথেই সম্মান জানিয়েছে বাঁধ ভাঙা বাঙালিদের। পুরস্কারের এটি চতুর্থ বছর। অভীকবাবুর কথায়, এই চতুর্থ বছরে কিছু পরিবর্তন আছে। আবার কিছু ধারাবাহিকতাও আছে।
কেমন পরিবর্তন? অভীববাবু বলেন, ‘‘প্রধান পরিবর্তন, মিছিল-আন্দোলন আবার আমাদের জীবনে ফেরত এসেছে। মাঝখানে কিছু মিছিল-ধর্মঘট নিশ্চয়ই হয়েছে। কিন্তু সিঙ্গুর এবং ন্যানো নিয়ে আন্দোলনের পরে এই ধরনের আন্দোলন হয়নি। সেটা ফিরে এসেছে। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় এর প্রকাশ হয়েছে স্ফুলিঙ্গের মতো।’’ কিন্তু একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, এর পুনরাবৃত্তি হবে কি না, হলেও তা কবে হবে, ‘‘সেই ভবিষ্যদ্বাণী এখনই করা কঠিন।’’
আর ধারাবাহিকতা? পশ্চিমবঙ্গের ধারাবাহিকতা কোথায়? তিনি অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন বাঙালির ব্যবসাবিমুখতার দিকে। বলেন, এটি ‘‘৫০ বছর আগেও ছিল। ধরে নেওয়া যেতে পারে ৫০ বছর পরেও থাকবে। আমরা এই চিত্রটাও ধরার চেষ্টা করেছি। সম্ভবত ৫০ বছর পরেও আবার করব।’’
অতীতের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা নয়, তাঁর দর্শনে রয়েছে ঐতিহ্য এবং পরিবর্তনের মধ্যেকার ‘বিরোধাভাস’, যা ভবিষ্যতের দিকে তাকায়। অভীকবাবুর বক্তৃতার ঠিক আগেই বছরের বেস্ট সন্ধ্যা শুরু হয়েছিল অনুপম রায়ের গানে। সেখানেও ধারাবাহিকতা আর পরিবর্তনের দ্বন্দ্বটা দেখিয়েছেন তিনি: গাওয়া হল উপনিষদের শাশ্বত বাণী, গাইলেন এই প্রজন্মের একজন গায়ক। এই সুরটাই যে পরবর্তী অনুষ্ঠান জুড়ে দেখা যাবে, তা-ও জানিয়ে দেন অভীকবাবু। যে ভাবে ‘সম্ভবত’ শব্দটি রেখেও তিনি জানিয়ে দেন, যে চিত্র বর্তমানে ধরার চেষ্টা করছেন, ৫০ বছর পরেও তা করবেন…