বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে হনুমান জয়ন্তী পালন হচ্ছে। আবার বৃহস্পতিবারই বিজেপির জন্মদিন। দলের ৪৪ তম জন্মদিনে গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, বিজেপির সঙ্গে ভগবান হনুমানের সাদৃশ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায় হনুমান যেমন লঙ্কায় রাক্ষস দমন করেছিল তেমনি দেশ থেকে দুর্নীতি মুছে জনকল্যাণে কাজকে তরান্বিত করতে হবে।
বিরোধীরা, বিশেষত বামপন্থীরা বিজেপিকে হনুমানের দল বলে বিদ্রুপ করে থাকে। কিন্তু এবার তাদের এই বিদ্রুপের কড়া জবাব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলে, হনুমানজি দুষ্টের দমন করেছেন আর বিজেপি লড়াই ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায় দেশের স্বার্থে বিজেপি সরকার হনুমানের মত সাহসিকতার সঙ্গেই এগোবে।
হনুমানজিকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ক্যান ডু অ্যাটিটিউডের কারণেই হনুমানজির সাফল্য পেয়েছেন। সেটাই সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে তার সাফল্যের ক্ষেত্রে। এমন কোনো কাজ নেই যা পবন পুত্র হনুমান করতে পারেন না। ভগবান লক্ষ্মণের যখন সংকট এলো তখন গোটা পর্বত তুলে নিয়ে এলেন হনুমানজি। বিজেপিও এভাবেই মানুষের সমস্যা সমাধান করার প্রয়াস করছে, করে এসেছে আর করেও যাবে। ভারতের উন্নয়নের প্রেরণা হনুমানজির জীবন।
কংগ্রেস সহ বিরোধীদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা কখনো ভাবতে পারেনি, ৩৭০ ধারা কখনো ইতিহাস হয়ে যাবে। আসলে বিজেপির কাজ ওদের হজম হচ্ছে না। কাশ্মীর, উত্তর পূর্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ওরা সহ্য করতে পারছে না। তাই খোলাখুলি বলছে মোদী তোমার কবর খুঁড়বো। তিনি বলেন, কংগ্রেসের পরিচয় হলো পরিবার বাদ, সজন-পোষণ, দুর্নীতি। অন্যদিকে বিজেপির পরিচয় ,”সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিকাশ।”
মোদী আজ স্পষ্ট ভাবেই দাবি করেছেন, ২০২৪- এ ফের বিজেপিই সরকার গঠন করবে। তিনি বলেন, ভোটের এখনো এক বছর বাকি, কিন্তু অনেকেই বলতে শুরু করেছেন বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে। আসলে এতে কোনো সন্দেহ এবং সংশয় নেই। মোদীর দাবি, সরকারের ভালো কাজের কারণেই বিজেপির এই এগিয়ে যাওয়ার যাত্রা অক্ষুন্ন থাকবে। বিরোধীরা যতই সরব হোক না কেন, দুর্নীতির বিনাশ করাইকেই বিজেপি আজ সবচেয়ে বড় হাতিয়ার করেছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে।
মোদী বারবার বলেছেন, দুর্নীতি বিনাশে নেমেছেন বলেই বিরোধীরা তাকে পাল্টা নিশানা করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারবে না। দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করেই ছাড়বেন তিনি।
বৃহস্পতিবার তাঁর ভাষণ জুড়ে ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঙ্কার। রাজনৈতিক মহলের মতে এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্টের বুধবারের রায়। ১৪ বিরোধী দলের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূর। বিরোধীদের দাবি ছিল, ইডি সিবিআইকে বিরোধীদের হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। শীর্ষ আদালত বলেছে দুর্নীতির তদন্তে নেতাদের জন্য পৃথক নিয়ম থাকতে পারে না।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সিবিআইয়ের সদর দপ্তরের অনুষ্ঠানেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন। তদন্তকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দুর্নীতির তদন্ত পিছিয়ে গেলে চলবে না। তদন্তে ভয় পাবেন না। সরকার আপনাদের পাশে আছে।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের নেতা কর্মীদের এগিয়ে যেতে বলে দুটি শব্দকে বিজেপির লক্ষ্য হিসেবে সামনে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিজেপির আগামী দিনের লক্ষ্য জনকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা। বিজেপিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর এই লড়াই হবে জনকল্যাণের জন্য। তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে আরো বেশি করে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি দলের কর্মী ও নেতাদের।
পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে মোদী বলেন, ছয় থেকে সাত বছর বাদে ভারতীয় জনতা পার্টি ৫০ বছর পূরণ করবে। তখন পার্টির রূপ কি হবে পার্টির লক্ষ্য কি হবে তা এখন থেকে স্থির করতে হবে। নতুন উদ্ভাবনকে আনতে হবে। নতুন ভাবে ভাবতে হবে। তার পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা পার্টিতে টেকনোলজি আনতে পারি। আমরা টেকনোলজি সেল তৈরি করতে পারি। সব জায়গায় টেকনোলজিতে এক্সপার্ট ছেলেদের যুক্ত করি। যাতে তারা নতুন নতুন টেকনলজির খোঁজ দিতে পারে আমাদের। কিভাবে সেই টেকনোলজি সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত বাছাই করা কিছু কার্যকর্তার টিম বানিয়ে তাদের ট্রেনিং দিতে হবে।”