সামরিক পরিভাষায় ‘এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ (অ্যাওয়াক্স)। আদতে শত্রুপক্ষের উপর নজরদারির জন্য অত্যাধুনিক রেডার বসানো গোয়েন্দাবিমান। ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার পরবর্তী সংঘাতপর্বে পাক বিমানবাহিনীর অন্তত একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাক বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল মাসুদ আখতার এ বার কবুল করেছেন সে কথা।
একটি পাক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আখতার বলেন, ‘‘ দূরপাল্লার রেডার নজরদারি এবং আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণকারী অ্যাওয়াক্স বিমানটি ইসলামাবাদের ভোলারী বিমানঘাঁটিতে ছিল। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সেটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’ গত ৯ মে গভীর রাতে ভারতের ‘নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র হানা’তেই এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পাক এয়ার মার্শাল।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-সহ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই দাবি করা হয়েছিল, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাক বিমানবাহিনীর। কিন্তু পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের (ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস বা আইএসপিআর) ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধরি ভারতীয় সেনার হানায় পাকিস্তানের সামরিক-অসামরিক প্রাণহানির কথা জানালেও প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো বা উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেননি।
এই আবহে শুক্রবার আখতারের মন্তব্য, ‘‘তারা (ভারতীয় বাহিনী) পর পর চারটি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। সেগুলি ‘ভূমি থেকে ভূমি’ সংস্করণ, না কি ‘আকাশ থেকে ভূমি’তে নিক্ষেপযোগ্য, আমি নিশ্চিত নই। পাকিস্তানি পাইলটরা তাঁদের বিমানকে সুরক্ষিত করার জন্য দ্রুত সক্রিয় হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ভোলারী বিমানঘাঁটির হ্যাঙ্গারে আঘাত করে। সেখানে আমাদের একটি অ্যাওয়াক্স ছিল। সেটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পরবর্তী সংঘাতপর্বে ভারতীয় বায়ুসেনা ব্রহ্মস ব্যবহার করেছিল কি না, তা নিয়ে এখনও কিছু বলেনি ভারতীয় সেনা।
প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরুর আগে পাকিস্তানি বায়ুসেনার হাতে সুইডেনের তৈরি ন’টি ‘সাব ২০০০ এরিআই’ অ্যাওয়াক্স ছিল। তারা সুইডেন থেকে মোট ১০টি ‘সাব ২০০০ এরিআই’ কিনেছিল। কিন্তু ২০১২ সালে পাক পঞ্জাবের মিনহাস বিমানঘাঁটিতে তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি) বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে থাকা চারটি অ্যাওয়াক্সের মধ্যে তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে একটি পুরোপুরি বিকল হয়ে গিয়েছিল। আখতার কবুল করলেন আরও একটি অ্যাওয়াক্স ধ্বংসের কথা।
প্রসঙ্গত, ৪৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা শত্রুকে শনাক্ত করতে সক্ষম ‘সাব ২০০০ এরিআই’ কেনার জন্য ২০০৬ সালে সুইডেনকে বরাত দিয়েছিল ইসলামাবাদ। তখন ক্ষমতায় ছিলেন সেনাশাসক পারভেজ় মুশারফ। ভারতীয় বায়ুসেনা ব্যবহৃত ইজ়রায়েলি অ্যাওয়াক্স ‘আইএল-৭৬ ফ্যালকন’ বা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘নেত্র’র তুলনায় সুইডিশ বিমানটি প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে বলেই পশ্চিমি দুনিয়ার দাবি। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি শিবিরে হামলাকারী ১২টি মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেটকে পরিচালনায় সাহায্য করেছিল ইজ়রায়েলি ‘আইএল-৭৬ ফ্যালকন’।