দু’দিনে চন্দ্রভাগায় জলপ্রবাহ কমেছে ৯১ হাজার কিউসেক! ভারতের সিন্ধু-‘অস্ত্রে’ শঙ্কার ছবি পাক সংস্থার রিপোর্টেই

চন্দ্রভাগা (চেনাব) দিয়ে জলপ্রবাহ ক্রমশই কমছে। গত দু’দিনে জলপ্রবাহের খতিয়ান তুলে এমনই দাবি করল পাকিস্তানের ‘জল এবং বিদ্যুৎ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (ডব্লিউপিডিএ)। চন্দ্রভাগা নিয়ে ডব্লিউপিডিএ-র দাবির কথা জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।

ডব্লিউপিডিএ শনিবার চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ নিয়ে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, গত বৃহস্পতিবার ভারত হয়ে মারালার দিকে জলপ্রবাহ হয়েছে ৯৮ হাজার ২০০ কিউসেক। তবে শুক্রবার থেকে তা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার চন্দ্রভাগায় জলপ্রবাহ ছিল ৪৪ হাজার ৮০০ কিউসেক। তবে শনিবার ওই নদীতে জলপ্রবাহ ৭ হাজার ২০০ কিউসেক হয়। অর্থাৎ গত দু’দিনে জলপ্রবাহ কমেছে ৯১ হাজার কিউসেক।

ভারতের জল আটকানো নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে পাকিস্তান। সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের সেচ বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওরা (ভারত) চন্দ্রভাগা নদীতে জলপ্রবাহ আটকে দিয়েছে। বর্তমানে তারা সেই জল তাদের বিভিন্ন বাঁধ বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে মজুত করছে। ওরা আমাদের জল ব্যবহার করছে। এটা অন্যায়। ভারত এটা করতে পারে না!’’ শুধু তা-ই নয়, এই নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে অভিযোগও জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে দুই দেশের মধ্যে ‘সংঘর্ষবিরতি’র পরেও ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’ স্থগিত রেখেছে ভারত।

চন্দ্রভাগার অববাহিকায় ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। প্রথমেই আসে পাকাল দুল বাঁধের কথা। ওই বাঁধে ৮৮ হাজার একর-ফুট জলধারণের জায়গা রয়েছে। দ্বিতীয়টি হল রামবনের বগলিহার বাঁধ। পাকাল দুল বাঁধ থেকে ৮৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি। এখানে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। এই বাঁধে ৩ লক্ষ ২১ হাজার একর-ফুট জলধারণের জায়গা রয়েছে। বগলিহার থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সালাল বাঁধ। এখানে ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। ২ লক্ষ ২৮ হাজার একর-ফুট জলধারণ সম্ভব এই বাঁধে। ভারত চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ আটকানোয় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্তারা। সম্প্রতি, ভারতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, এর ফলে ২৪ কোটি পাকিস্তানির অস্তিত্বের সঙ্কট হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় টানা ন’বছরের আলোচনার পরে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সই হয়েছিল ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান চুক্তিতে সই করেছিলেন। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সই হওয়া ওই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র জল। সামগ্রিক ভাবে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির মোট জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার প্রায় ৮০ শতাংশ। ভারতের মাত্র ২০ শতাংশের সামান্য বেশি।

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। জঙ্গিহানায় ২৬ জনের মৃত্যুতে পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তোলে ভারত। তবে পহেলগাঁও কাণ্ডে তাদের কোনও যোগ নেই বলেই প্রথম থেকে জানিয়ে আসছে পাকিস্তান। যদিও তাতে ভারতের সুর নরম হয়নি। তাদের একাধিক পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা। তা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.