ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন অংশ। সুতি, সামসেরগঞ্জে, ধুলিয়ানে গন্ডগোল ছড়িয়েছে। ধর্মের নামে অশান্তি না ছড়ানোর আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্য়েই এবার শুভেন্দু অধিকারীর করা মামলার জেরে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শান্তিরক্ষায় পুলিসের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনটাই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চ। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সেন বলেন, এই ধরনের অভিযোগ যখন আসে তখন আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। শান্তি এবং সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনাই এখন আদালতের মূল লক্ষ্য। অন্যত্র একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাইতে পারবে রাজ্য সরকার।
আদালত আরও জানিয়েছে যেসব জায়গায় গন্ডগোল হচ্ছে সেইসব এলাকাগুলোতেই প্রধানত ফোকাস করতে হবে। অন্যান্য জায়গাগুলিও নজরে রাখতে হবে। রাজ্য ঠিক করবে কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
এদিন মামলার সওয়াল পর্বে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যারা মামলাকারী তারা চেষ্টা করছে এরাজ্যকে অশান্ত দেখানোর। পুলিস সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেছেন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার। এরপর যদি হাইকোর্টে কোন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তাহলে রাজ্য তার বিরোধিতা করবে না। প্রসঙ্গত, ওই কথা শোনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই রায় শুনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা বড় জয়। বাংলার সনাতনীদের জয়। বিচারব্যবস্থাকে করজোড়ে প্রণাম। আর মমতা আর রাজীব কুমারের গালে চড়।
শনিবার জরুরি ভিত্তিতে মামলা ওঠে হাইকোর্টে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলায় মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি জানতে রাজ্যকে ৩০ মিনিট সময় দেয় আদালত। মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গায় হামলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার আবেদন করা হয় আদালতে। ওই আবেদেনের ভিত্তিতে মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কিছু সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে। এমনটাই জানাল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এতে রাজ্যের অধিকার খর্ব হচ্ছে এমন কাথায় কোনও অর্থ হয় না। রাজ্য অশান্তি দমনের জন্য কী করতে চায় তা তিরিশ মিনিটের জন্য জানাক। এমনটাই বলল হাইকোর্ট।
শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী সওয়াল করেন, ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে হামলা চলছে। একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন কলকাতা অচল করে দেবেন। মুর্শিদাবাদে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে অশান্তি চরম পর্যায়ে গিয়েছে । আমরা ওই জেলাগুলিতে CAPF মোতায়েন চাইছি। রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে আছে। প্রতিবাদ ইন হাউস হতেই পারে। কিন্তু মানুষের জীবন যাবে কেন? মুর্শিদাবাদ ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনা স্পর্শকাতর। আমতলাতে হচ্ছে। ধুলিয়ান এলাকায় বোমাবাজি হচ্ছে।
ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, বিএসএফ কি ওখানে আছে? আপনারা কি চাইছেন? কী করে জানা যাবে যে কোন কোন জেলা স্পর্শকাতর? DM বিএসএফ সাহায্য চেয়েছে! আমরা CAPF-কে বলি রাজ্যের সঙ্গে থেকে কাজ করতে! তার মধ্যে রাজ্য রিপোর্ট দিয়ে জানাক। এখন পরিস্থিতি বুঝেই আমরা বলছি কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা। তার মানে রাজ্যের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। শুধু সাহায্য করবে। অতীতেও বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। রুট মার্চ করতে পরবে তারা। নির্বাচন ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে আগে বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। নির্দিষ্ট কাউকে রক্ষা করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কর্তব্য মানুষকে রক্ষা করা। সেটা আমাদের দেখতে হবে।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, মুর্শিদাবাদের গোলমালে এখনওপর্যন্ত ১৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিস মোতায়েন আছে বিভিন্ন জায়গায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই মুহুর্তে আমদের অফিসাররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।