‘ওয়াংখেড়ে টু ওয়াংখেড়ে’, বিশ্বজয়ের বৃত্ত সম্পূর্ণ, পরস্পরের সঙ্গে একাকার ২.৪.২০১১ আর ৪.৭.২০২৪

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদর দফতর। একটা সময় পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রিত হত আরব সাগরের তীরের এই স্টেডিয়াম থেকে। সেখানেই বৃহস্পতিবার মিশে গেল দুই বিশ্বজয়ের উৎসব, কাহিনি। পূর্ণ হল একটি বৃত্ত।

পোশাকি এই পরিচয় নয়। ওয়াংখেড়ের অলঙ্কার ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ। সেই আবেগও বিশ্বকাপকে ঘিরে। এক দিনের এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মিলে চারটি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। তার একটি ঘরের মাঠে। ২০১১ সালের ২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার এক দিনের বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বকাপ এনে দেওয়া ছক্কা গ্যালারিতে পড়ার মুহূর্ত থেকে ওয়াংখেড়ের আলাদা জায়গা তৈরি হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।

শুধুই কি একটা বিশ্বকাপ? না। ভারতীয় ক্রিকেটে ওয়াংখেড়ের ভূমিকা আরও বেশি। সচিন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ক্রিকেটারদের গড়ে ওঠার পিছনেও মুম্বইয়ের এই মাঠের অবদান কম নয়। ১৯৭৪ সালে স্টেডিয়াম তৈরির পর থেকে মুম্বই ক্রিকেটের চার-পাঁচটি প্রজন্মের কাহিনি জানে ওয়াংখেড়ে। সেই মাঠেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ীদের সংবর্ধনা আয়োজন করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তারা।

ভারতীয় ক্রিকেটের মক্কা হিসাবে পরিচিত মুম্বই। এই প্রথম মুম্বইয়ের কোনও ক্রিকেটারের নেতৃত্বে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত। সেই মুম্বইয়েই সংবর্ধনা। ২০১১র স্মৃতি ফিরল বাণিজ্য নগরীতে। বিশ্বকাপ জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ় থেকে ক্রিকেটপ্রেমীদের আহ্বান দিয়েছিলেন রোহিত। মুম্বইয়ের বিজয় উৎসবে সামিল হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেরিন ড্রাইভে ভিড় জমাতে শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। মুম্বইয়ের রাজপথ দখল দুপুর থেকেই নিয়ে নেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

সমর্থকদের আবেগ, ভালবাসা উপেক্ষা করতে পারেননি রোহিতেরাও। ১৬ ঘণ্টা বিমান যাত্রার পর দিল্লিতে পৌঁছান ক্রিকেটারেরা। তারও ১৩ ঘণ্টা পর মুম্বই পৌঁছান তাঁরা। দিল্লির হোটেলে যে ক্রিকেটারদের ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, তাঁদেরই মুম্বইয়ে হুড খোলা বাসে চনমনে দেখাল। মানুষের ভালবাসাই বোধহয় নতুন করে তরতাজা করে তোলে বিশ্বজয়ীদের।

ওয়াংখেড়েও ওষুধের মতো কাজ করেছে। মুম্বইয়ের এই মাঠে কম-বেশি স্মৃতি রয়েছে সব ক্রিকেটারেরই। প্রায় সকলের মনেই মুম্বইয়ের এই মাঠ মাঠের আলাদা জায়গা রয়েছে।

ওয়াংখেড়ের বয়স হল ৫০। পাঁচ দশকে অসংখ্য ক্রিকেটারের বড় হওয়ার সাক্ষী এই মাঠ। ভারতীয় ক্রিকেটের বহু উত্থান, পতনের কাহিনি জানে ওয়াংখেড়ে। সেই মাঠে বিশ্বজয়ের উৎসব আলাদা মাত্রা যোগ করতে বাধ্য। সুনীল গাওস্কর, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, দিলীপ বেঙ্গসরকার, রবি শাস্ত্রী, সন্দীপ পাটিল বা সচিনের সঙ্গে এই বিশ্বকাপের সরাসরি যোগাযোগ নেই। এই কথাই বা এত সহজে কী করে বলা যায়! অধিনায়ক রোহিত তো বটেই, এই দলের সূর্যকুমার যাদব, যশস্বী জয়সওয়াল, শিবম দুবেরা তো ওঁদের দেখেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিশ্বজয়ী দলের বাকিদের কাছেও তাঁদের গুরুত্ব কম নয়। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিটি সাফল্যে পিছনে আর কোনও শহরের অবদান থাকুক না থাকুক, মুম্বইয়ের থাকবেই। একই কারণে অস্বীকার করা সম্ভব নয় ওয়াংখেড়েকেও।

ধোনির দলের বিশ্বজয়ের মাঠে রোহিতের দলের সংবর্ধনায় পূর্ণ হল বৃত্ত। শুধু বিশ্বজয়ীরা সংবর্ধিত হলেন না। সম্মানিত হল হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলা ওয়াংখেড়েও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.