‘পাঠানো যাবে ভারতে’, ২৬/১১ সন্ত্রাসের চক্রী রানার আবেদন খারিজ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে

ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহস্পতিবার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তাহা‌উর রানা আবেদনপত্রে লিখেছিলেন, ‘‘আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর অত্যাচার চালাবেন বলে আশঙ্কা করছি।’’ কিন্তু শুক্রবার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের নবম সার্কিটের বিচারপতি প্রত্যর্পণের নির্দেশ দ্রুত পুনর্বিবেচনার জন্য রানার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া কার্যত নিশ্চিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত ২৫ জানুয়ারি ২৬/১১ হামলার অন্যতম চক্রী রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিয়েছিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমানে আমেরিকার জেলে তিনি বন্দি রয়েছেন। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলায় তাঁর যোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এর পর থেকেই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী রানাকে ভারতে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাঁকে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছিল। প্রথমে নিম্ন আদালতে, তার পরে ওয়াশিংটনের প্রাদেশিক আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন করেন রানা। কোথাও সুরাহা হয়নি। সান ফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতেও প্রত্যর্পণের পক্ষেই রায় গিয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রানাকে দ্রুত ভারতে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে শ্লথ করে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে আগত ১০ লস্কর-ই-তইবা জঙ্গির মুম্বইয়ে হামলার পরিকল্পনায় রানা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল ভারতের। মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গী রানাকে পাওয়ার জন্য প্রায় দেড় দশক আগে ওয়াশিংটনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে সায় মেলেনি। বরং পরবর্তী কালে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

পরবর্তী সময়ে দ্বিপাক্ষিক বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে আবার রানাকে আমেরিকার থেকে ফেরত চায় ভারত। তার পরে ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বই নাশকতার ঘটনাতেই ফের রানাকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকার পুলিশ। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে রানার তরফে জামিনের আবেদন জানানো হলেও বছর দেড়েক আগে তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাঁর প্রত্যর্পণের পথ প্রশস্ত হয়। এর পর সুপ্রিম কোর্টও প্রত্যর্পণের পক্ষে নির্দেশ দিয়েছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বইয়ে পাক জঙ্গি আজমল কসাব এবং তার সঙ্গীদের হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছ’জন মার্কিন নাগরিকও। ২৬/১১ সন্ত্রাসের অন্যতম চক্রী রানা গত দেড় দশকে আইনের ফাঁকফোকর এবং মানবাধিকারের বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে বার বার প্রত্যর্পণ এড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। এ বারও সেই পথই নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.