দক্ষিণ চিন সাগরে (South China Sea) অবিশ্বাস্য, অসম্ভব ঘটনা ঘটে গেল, আর কেউ তা ঘটতে দেখল না। দক্ষিণ চিন সাগরে হঠাৎ করেই অকল্পনীয় ভাবে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে, দুটি আমেরিকান সামরিক বিমান, একটি এফ/এ-১৮এফ সুপার হর্নেট ফাইটার জেট (F/A-18F Super Hornet Fighter Jet এবং একটি এমএইচ-সিক্সটিআর সিহক হেলিকপ্টার (MH-60R Seahawk Helicopter) আকাশ থেকে পড়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির সামুদ্রিক অঞ্চলগুলির মধ্যে একটিতে। জেট এবং হেলিকপ্টার উড়ানের আগে যাবতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল এবং সম্পূর্ণরূপেই কার্যকর ছিল। তবুও দুটি এয়ারক্রাফ্টই প্রায় ব্যাক-টু-ব্যাক ভেঙে পড়ল সাগরে। দক্ষিণ চিন সাগরে ঘনাচ্ছে রহস্য…
কাকতালীয়?
একেবারেই ঘটনাটি কাকতালীয় বলে মনে করছে না সকলে। ইরানের গণমাধ্যমে বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে এটি কোনও দুর্ঘটনাই ছিল না। তাদের দাবি চিন এক শক্তিশালী ‘বৈদ্যুতিক শক’ অস্ত্র ব্যবহার করে মার্কিন যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারটিকে মাঝ আকাশেই নিষ্ক্রিয় করেছে। ইরানের দাবি যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো চিনের বিতর্কিত জলসীমায় আমেরিকান সামরিক সম্পদের উপর সরাসরি আক্রমণ, তাও আবার ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি কেবলই গেম-চেঞ্জার নয়। এটি ড্রাগনের সেই ঘোষণা, যেখানে বলে দেওয়া হল যে, চিনের শক্তি সম্পর্কে আমেরিকার ধারণাই ছিল না। সম্ভাবনাগুলো দেখলেই এই দাবিটি আরও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতে শুরু করে। ৩০ মিনিটের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এয়ারক্রাফ্ট- একটি যুদ্ধবিমান এবং একটি হেলিকপ্টার, হঠাৎ করেই ব্যাখ্যাতীত ভাবে বিকল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? এটি এমন এক কাকতালীয় ঘটনা যা মেনে নেওয়া প্রায় কঠিন। সামরিক বিমান বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই এই ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত সন্দেহজনক’ এবং ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপ ছাড়া কার্যত অসম্ভব’ বলে অভিহিত করছেন।
কী বলছেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে। জাপানে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, ‘এটি এক অসাধারণ ঘটনা’ তার শব্দ নির্বাচন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে। তবে ট্রাম্প ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মানতে নারাজ। সম্ভাব্য জ্বালানি দূষণকে কারণ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের বর্ণনায়, ‘এই ঘটনা অসাধারণ, জ্বালানি সমস্যার সাধারণ ব্যাখ্যার বিপরীত।’মার্কিন নৌবাহিনীও একই ভাবে কোনও নাশকতা বা বহিরাগত আক্রমণের কথা উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইরানের বিস্ফোরক দাবি এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতির পটভূমিতে তাদের অস্বীকার ফাঁকা আওয়াজই মনে হচ্ছে। দক্ষিণ চিন সাগরে চিন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে। প্রাচীরকে সামরিকীকরণ করেছে এবং বারবার আমেরিকান নৌচলাচলের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সেখানে দুর্ঘটনাক্রমে কিছুই ঘটে না।
সকলেই জীবিত!
অলৌকিক ভাবে জোড়া এয়ারক্রাফ্টের ৫ জন ক্রু সদস্যই জীবিত উদ্ধার হয়েছে। সুপার হর্নেটের ২ পাইলট এবং সিহকের ৩ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বলা হচ্ছে যে তাঁরা স্থিতিশীল আছেন। তবে তাদের বেঁচে থাকায আরও প্রশ্ন উঠছে। যদি দু’টি বিমান এতটাই গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়ে পড়ে, যে তাদের ভূপাতিত করা সম্ভব হয়, তাহলে সবাই কীভাবে অক্ষত রয়েছেন? পাঁচজনেই বেঁচে থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছুরই ইঙ্গিত করে। সম্ভবত নিয়ন্ত্রিত অবতরণ, ভয়াবহ দুর্ঘটনার চেয়ে এবং ক্রমবর্ধমান জল্পনাকে আরও জোরালো করে তোলে যে কোনও সাধারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির পরিবর্তে কোনও বহিরাগত ইলেকট্রনিক শক্তি হস্তক্ষেপ করেছে।
দক্ষিণ চিন সাগর
পৃথিবীর সবচেয়ে অস্থির সমুদ্রের একটি- দক্ষিণ চিন সাগর। চিন এর প্রায় পুরোটাই দাবি করে। প্রাচীরগুলিকে সামরিক ফাঁড়িতে এবং টহলদারি জলসীমায় পরিণত করে, যা বিশ্বের বাকি অংশ আন্তর্জাতিক বলে মনে করে। এর বিস্তৃত দাবিগুলি ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন্স, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং তাইওয়ান-সহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেশীর সঙ্গে সংঘর্ষের পথে ফেলেছে। একই সময়ে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি নিয়মিতভাবে এই অঞ্চলে তাদের জাহাজ পাঠায় নৌচলাচলের স্বাধীনতা দাবি করতে এবং চিনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। এখানে ঝুঁকি বিশাল। এই জলরাশির নীচে বিশাল তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কিছু মাছ ধরার ক্ষেত্র রয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই সমুদ্র বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধমনী হিসেবে কাজ করে। প্রতি বছর প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য এর মধ্য দিয়ে চলাচল করে। দক্ষিণ চিন সাগরে যেই আধিপত্য বিস্তার করে, সে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জীবনরেখাগুলির একটির উপর আধিপত্য বিস্তার করে।

)