স্কুলের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিস্তর গন্ডগোল হয়েছিল। চলেছিল গুলি। খুন হন তৃণমূলের এক নেতা। ওই ঘটনার ১৪ বছর পর হুগলির গোঘাটকাণ্ডে শাস্তি ঘোষণা করল আরামবাগ আদালত। মঙ্গলবার দোষীদের এক জনের ফাঁসি এবং বাকি ১৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। তবে সাত জনকে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শাসকদলের বিধায়ক থেকে বিরোধী দলের নেতারা। অন্য দিকে, ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিপিএমের এক প্রাক্তন কর্মীকে।
২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর গোঘাটের সাওড়া ইউনিয়ন হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। তাতে বিস্তর গোলমাল হয়। গুলিতে নিহত হন গোঘাটের তৃণমূল নেতা শেখ নইমুদ্দিন। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। মঙ্গলবার ওই খুনের ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর অপরাধীদের শাস্তি ঘোষণা করল আদালত। গুলি করে খুন করার ঘটনায় মোট ১৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া সাত জনকে এই মামলা থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন বিচারক। ওই সাত জনের মধ্যে রয়েছেন গোঘাটের বর্তমান বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক, সিপিআইএম নেতা দেবু চট্টোপাধ্যায় এবং ভাস্কর রায়। হুগলি জেলা আদালতরে মুখ্য সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর গোঘাটের সাওড়া ইউনিয়ন হাই স্কুলে গন্ডগোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা শেখ নইমুদ্দিনের। মৃতের স্ত্রী গোঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এত দিন বিভিন্ন সাক্ষ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে সেই মামলা চলছিল। মঙ্গলবার আরামবাগ মহকুমা আদালতে এই মামলা ওঠে। অ্যাডিশনাল সেশন জজ কোর্টের বিচারক কিষেনকুমার আগরওয়াল ১৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এঁদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত বলদেব পালকে ফাঁসির সাজা এবং বাকি ১৮ জনকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা শোনানো হয়েছে।’’
সরকারি আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘এই মামলাটি বিরল ঘটনা। যিনি গুলি চালান, তাঁর যাতে ফাঁসি হয়, সেই আবেদন রেখেছিলাম বিচারকের কাছে। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে মামলা চলাকালীন কয়েক জন মারা গিয়েছেন। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল।’’
মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী তাহেরা বেগম বলেন, ‘‘প্রকাশ্য রাস্তায় আমার স্বামীকে মাথায় গুলি করে মারা হয়েছিল। আজ আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে আমি খুশি। ১৪ বছর ধরে লড়াই করেছি শুধু আজকের দিনটার জন্য।’’