পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অভিজ্ঞ ম্যাচ রেফারি এশিয়া কাপের ‘হাই ভোল্টেজ’ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে ‘শক’ খেলেন!
এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিতর্কের কেন্দ্রে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট। অভিযোগ, টসের আগে তিনিই নাকি সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে করমর্দন করতে বারন করেছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আঘাকে। পাইক্রফ্টের বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে আইসিসির আচরণবিধি এবং এমসিসির নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্তারা। এশিয়া কাপের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে তাঁকে অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে। কে এই পাইক্রফ্ট?
৬৯ বছরের নবীন
বয়স ৬৯। জ়িম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন প্রাক্তন ব্যাটার। প্রাক্তন অধিনায়কও। এই সময়ের মধ্যে হওয়া তিনটি এক দিনের বিশ্বকাপেই জ়িম্বাবোয়ের দলে ছিলেন। ন’বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন ২০টি। টেস্ট খেলেছেন তিনটি। তা-ও এক দম শেষ বছরে। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। অবসর নেওয়ার পর কিছু দিন ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছিলেন। এর পর ২০০৬ সালের মার্চে জ়িম্বাবোয়ে ‘এ’ দলের কোচ হন। ২০০৮ সালের অগস্টে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর কোচিং করাননি। ম্যাচ রেফারি হিসাবে কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) এলিট প্যানেলের সদস্য পাইক্রফ্ট।
আইসিসির ম্যাচ রেফারিদের এখনকার এলিট প্যানেলে রয়েছেন পাঁচ জন। পাইক্রফ্ট ২০০৯ সালে অন্তর্ভূক্ত হলেও তিনি পাঁচ জনের মধ্যে দ্বিতীয় নবীনতম। তাঁর চেয়ে নবীন শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের রিচি রিচার্ডসন। তিনি এলিট প্যানেলের সদস্য হয়েছিলেন ২০১৬ সালে। ম্যাচ রেফারি হিসাবে পাইক্রফ্ট যথেষ্ট অভিজ্ঞ। এখনও পর্যন্ত ১০৩টি টেস্ট, ২৪৮টি এক দিনের ম্যাচ, ১৮৩টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ২১টি মহিলাদের টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব সামলেছেন। এ ছাড়াও আইপিএল-সহ ১৩৮টি ২০ ওভারের ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে ৬৯৩টি ম্যাচের অভিজ্ঞতা। এ হেন পাইক্রফ্ট আইসিসির আচরণবিধি বা এমসিসির নিয়ম জানেন না? তাঁকেই কাঠগড়ায় তুলেছে পাকিস্তান।
আইনজীবী থেকে ক্রিকেটার
পাইক্রফ্ট হলেন আইসিসির চতুর্থ ম্যাচ রেফারি যাঁর ১০০টি বা তার বেশি টেস্ট ম্যাচে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের হয়ে খেললেও কখনও পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন না পাইক্রফ্ট। ছিলেন পেশাদার আইনজীবী। ক্রিকেটকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন খেলোয়াড় হিসাবে অবসরের পর। এক সাক্ষাৎকারে পাইক্রফ্ট বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেট কখনও আমার পেশা ছিল না। দিনে আইনজীবী হিসাবে কাজ করতাম। সন্ধ্যার পর ক্রিকেট খেলতাম। সারা দিন কাজের পর অনুশীলন করতাম।’’ ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাই তাঁকে কখনও ২২ গজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি।
কী ভাবে ম্যাচ রেফারি?
ম্যাচ রেফারি হওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল না পাইক্রফ্টের। এক সময় আইনের ব্যবসা আর ভাল লাগছিল না তাঁর। অন্য কোনও কাজের সন্ধানে ছিলেন। ইচ্ছার কথা বলেছিলেন প্রাক্তন আম্পায়ার রাসেল টিফিনকে। মূলত ভাল লাগার ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই টিফিনের পরামর্শ তাঁর মনে ধরেছিল। ম্যাচ রেফারি হিসাবে কাজ শুরু। অপেশাদার প্রাক্তন ক্রিকেটার পুরোদস্তুর পেশাদার ম্যাচ রেফারি হয়ে যান।
কেমন ম্যাচ রেফারি?
আইসিসির আচরণবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলেন। ম্যাচ রেফারি হিসাবে পাইক্রফ্ট একটু কড়া ধাঁচের। তবে নিশ্চিত না হয়ে খেলোয়াড়দের শাস্তি দেন না। ম্যাচ রেফারি হিসাবে অতীতে তেমন বড় বিতর্কেও জড়াননি। তাঁর বিরুদ্ধে আগে কোনও দল গুরুতর অভিযোগ জানায়নি। তবু এশিয়া কাপের দায়িত্ব পালন করতে এসে জড়িয়ে পড়লেন বিতর্কে। আচরণ বিধি না মানায় অভিযুক্ত তিনিই!