এ বার সংঘর্ষ শীতলখুচিতে, নাক ফাটল বিজেপি কর্মীর, তৃণমূল বলল গুলি চলেছে, পুলিশ বলল চলেনি

মঙ্গলবারের পর বুধবার আবার অশান্তি শুরু হল কোচবিহারে। ২৪ ঘণ্টা আগে গুলি চলেছিল দিনহাটায়। আর এ বার ঘটনাস্থল শীতলখুচি। এর আগে রাজ্যে বিধানসভা ভোট চলাকালীন এই শীতলখুচিতে গুলি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল চার গ্রামবাসীর। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বুধবারও সেখানে চলল গুলি। রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াল বাইক বাহিনী। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হল মোটরবাইকে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার বিকেলে শীতলখুচির ডাকঘরা বাজারে তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের মণ্ডল সভাপতি মানস দাসকে মারধর করে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি, বিজেপির বাইক বাহিনী তাদের পার্টি অফিসে চড়াও হয়। দু’পক্ষেরই দাবি, তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। আর এই নিয়েই দু’পক্ষের অশান্তিকে কেন্দ্র করে ডাকঘরা বাজার চত্বরে দু’রাউন্ড গুলি চলে বলে অভিযোগ। পরে দুষ্কৃতীরা আগুনও ধরিয়ে দেন একটি বাইকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও তারা জানিয়েছে, এলাকায় কোন গুলি চলেনি। যদিও দু’দলের মধ্যে অশান্তির ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা পুরোমাত্রায় বজায় রয়েছে শীতলখুচিতে।

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আর ১০ দিনও বাকি নেই। সোমবার থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারও শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কোচবিহার থেকেই শুরু হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর প্রচার। কিন্তু তার পরের দিন থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছে কোচবিহারে। মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা নাগাদ গুলি চলে কোচবিহারের দিনহাটার গীতালদহের জারি ধরলা এলাকায়। সেই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও চার জন। সেখানেও বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই গুলি চালানোর অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। যা অস্বীকার করেছিল পদ্মশিবির। যেমন বুধবারের ঘটনাতেও তারা পাল্টা তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছে।

বিজেপির কোচবিহারের জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘সকাল থেকে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী শীতলখুচিতে সন্ত্রাস তৈরি করেছে। আমাদের ৩ নম্বর মণ্ডল সভাপতি তথা কার্যকর্তা মানস দাসের নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। তৃণমূলের হার্মাদেরা বাইক বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করছে। তাই সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ করতে পারছে না। ওরা আমাদের ডাকঘরা পার্টি অফিসও ভাঙচুর করেছে।’’

যদিও সুকুমারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করছে বিজেপি। ডাকঘরা পার্টি অফিসে আমাদের কর্মীরা জমায়েত হয়েছিল, তারা আজ সন্ধ্যায় প্রচারের জন্য মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিজেপির একদল পার্টি কর্মী বাইক নিয়ে এসে আমাদের অফিসে হামলা চালায়। পার্টি অফিস ভাঙচুর করে এবং দু’রাউন্ড গুলি চলে। পরে গোটা এলাকার মানুষ এবং আমাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে চলে এলে বিজেপির দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।’’

তবে তৃণমূল শুধু পাল্টা অভিযোগ করেই থেমে থাকেনি। পার্থপ্রতিম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ভোটের আগে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় কেন এসব হচ্ছে তা-ও দেখা দরকার। দেখা দরকার বিএসএফ এর সঙ্গে কোনও ভাবে জড়িত কি না। আমাদের অনুমান, হারার ভয়ে বিজেপি এসব করছে। বিজেপি নেতৃত্বই তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে।’’

তবে তৃণমূল যা-ই বলুক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমারসানি রাজ জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল একটি বাইকবাহিনী কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় ডাকঘরা বাজার এলাকায়। তাদের তাড়া করে আরও একটি দল। একটি বাইক জ্বালিয়ে দেওয়াও হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কোনও গুলি চলেনি। তাই পুলিশ এই ঘটনায় দু’পক্ষের সংঘর্ষের অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ হয় গত ১০ এপ্রিল। সে দিন কোচবিহারের শীতলখুচি বিধানসভা কেন্দ্রের জোড়পাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫/১২৬ নম্বর বুথে ভোটগ্রহণ চলাকালীন গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে সিআইএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো ৪ যুবকের মৃত্যু হয়। রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল হয় এই ঘটনায়। পরবর্তী সময়ে মোট ৬ সিআইএফএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় মৃত যুবকদের পরিবারের তরফে। পরে ওই জওয়ানেরা জামিনও পেয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.