রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ, চিন ও আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জোট)-ভুক্ত দেশগুলিকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের তৎপরতা শুরু হল। বুধবার সন্ধ্যায় ‘আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’ (এপিএইচআর)-এর তরফে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে এই মর্মে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার নেপথ্যে বেজিংয়ের ভূমিকা দেখছে কূটনৈতিক মহল। আসিয়ানের উপর চিনের প্রভাব প্রবল। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির প্রাক্তন ও বর্তমান পার্লামেন্ট সদস্যদের নিয়ে গঠিত এপিএইচআর-এর প্রতিনিধিরা বুধবার সন্ধ্যায় সংস্থার চেয়ারম্যান, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন পার্লামেন্ট সদস্য চার্লস সান্তিয়াগোর নেতৃত্বে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই চিনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি, মায়ানমারে হিংসার জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তারও প্রস্তাব দেওয়া হয় ঢাকাকে।
২০১৭ সালে গোষ্ঠীহিংসা এবং মায়ানমার সেনার হামলার জেরে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এর পরে গত দেড় বছরে মায়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে নতুন করে আরও দেড় লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ কথা জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট বলছে, নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। গত দু’বছরের যুদ্ধে চিনের মদতপুষ্ট জুন্টা সেনাকে হটিয়ে তার পুরোটাই দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গাদের মূল বাসভূমি রাখাইন প্রদেশের ৭০ শতাংশ এলাকাই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। ওই প্রদেশের সঙ্গেই রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত। এই পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউনূসের সরকার।