‘আমাকে ওরা গ্রেফতার করতে চাইছে কারণ ছাড়াই’! জেন-জ়ি বিদ্রোহে ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক ওলির

নেপালের বর্তমান সুশীলা কার্কীর অন্তর্বর্তী সরকার কারণ ছাড়াই তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করলেন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে রবিবার প্রথম বার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বর্তমান সরকারের কাজ নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। জানালেন, এই সরকার ভোট করাতে আগ্রহী নয়।

যদিও এই প্রথম নয়, এর আগে গোপন আস্তানা থেকে তিনি কার্কী সরকারের সমালোচনা করেন। গত মাসে ভক্তপুরে দলীয় একটি বৈঠকেও বর্তমান সরকারের দিকে আঙুল তোলেন ওলি।

রবিবার কাঠমান্ডুতে প্রবীণ সাংবাদিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন ওলি। প্রায় এক ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি, যার সিংহভাগ জুড়ে ছিল বর্তমান সরকারের সমালোচনা। তিনি জানান, কার্কী সরকার তাঁকে যেনতেন প্রকারে গ্রেফতার করতে চাইছে। কোনও কারণ ছাড়াই। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ, যা ভেঙে গিয়েছে, তা আবার প্রতিষ্ঠা করার দাবিও জানিয়েছেন।

নেপালে যুবসমাজের (জেন জ়ি) আন্দোলনের জেরে সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ওলি। ১২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হন কার্কী। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাঁর সুপারিশে নেপালের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওডেল।

২০২৬ সালের ৫ মার্চ নেপালে পরবর্তী ভোট। নেপালের যুবসমাজ নতুন সরকারের কাছে ওলিকে গ্রেফতারের দাবিও তোলে। তাদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বাহিনী ব্যবহার করেছেন ওলি। এ বার ওলি দাবি করেছেন, আন্দোলনের সময়ে ভাঙচুর, অস্ত্রের ব্যবহার করেছে ‘বহিরাগতেরা’। তাঁরা কারা, সে নিয়ে যদিও মুখ খোলেননি ওলি।

তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা কমানোর জন্য কার্কী সরকারের সমালোচনা করেছেন ওলি। জানিয়েছেন, তাঁর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও এই কাজ করা হয়েছে। এই সরকার ‘স্বচ্ছ এবং অবাধ’ নির্বাচন করানোর মতো পরিস্থিতি রাখেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ওলি জানান, বালুওয়াতারে তাঁর সরকারি বাসভবনে আন্দোলনকারীদের হানার মুখ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। তার পরে কিছু দিনের জন্য তাঁর ফোন বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওলির। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর আমলে নেপালের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অনেক ভাল ছিল। সংবাদমাধ্যম নিরাপদে কাজ করতে পারত।

নেপালের যুবসমাজ সে দেশে রাজনীতিক, প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সেই নিয়ে প্রতিবাদ করেছে। এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে ওলি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য মনে করি না। এটা আতঙ্ক তৈরি করেছিল নেপালিদের মধ্যে।’’

প্রসঙ্গত, ওলি দলীয় পদ ছাড়েননি। তিনি এখনও সিপিএন-ইউএমএলের চেয়ারম্যান। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছেন, মানুষ চাইলে তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দেশ এবং দলের এখনও আমাকে প্রয়োজন। আমি দেশ এবং সমাজকে আরও অনেক কিছু দিতে পারি।’’

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে কাঠমান্ডুর বাইরে অজ্ঞাত জায়গায় সেনা ছাউনিতে ছিলেন ওলি। কয়েক সপ্তাহ আগে ভক্তপুর জেলার গুন্ডুতে থাকতে শুরু করেন। সেখানে দলীয় বৈঠকেও ছিলেন তিনি। তখনও কার্কী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.