তিনটি কারণে জঙ্গিরা বৈসরণ উপত্যকাকে বেছেছিল হামলার জন্য, কী ভাবে তাদের ডেরার খোঁজ মিলল? জানাল এনআইএ

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে কেন বৈসরণ উপত্যকাকেই হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল পাকিস্তানি জঙ্গিরা? নেপথ্যে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তারা এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। পহেলগাঁওয়ের হামলায় সরাসরি যুক্ত ছিল মোট তিন জন জঙ্গি। গত জুলাইয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে তাদের গোপন ডেরার খোঁজ মিলল, তা-ও জানিয়েছেন এনআইএ তদন্তকারীরা।

জঙ্গি হামলার জন্য বৈসরণ উপত্যকাকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসাবে এনআইএ-র মুখপাত্র যে তিন কারণের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল পর্যটকদের উপস্থিতি। এপ্রিল মাসে এমনিতেই কাশ্মীরে পর্যটক বেশি থাকে। পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় ওই সময় পর্যটকদের উপস্থিতি অন্য অনেক জায়গার তুলনায় বেশি ছিল। এ ছাড়া, উপত্যকাটির ভৌগোলিক অবস্থানও জঙ্গিরা বিবেচনা করেছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। বৈসরণ উপত্যকা তুলনামূলক বিচ্ছিন্ন। ফলে সেখানে হামলার পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়েছিল। তৃতীয় কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীদের সক্রিয়তা। যেহেতু উপত্যকাটি বিচ্ছিন্ন, সেখানে পৌঁছোতে বেশ খানিকটা সময় লাগার কথা নিরাপত্তারক্ষীদের। হামলার খবর পেলেও সহজে তাঁরা সেখানে পৌঁছোতে পারবেন না, জানত জঙ্গিরা। সেই ভেবেই ছক কষা হয়েছিল, জানিয়েছে এনআইএ।

গত ২২ এপ্রিলের এই হামলায় মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়। জঙ্গিরা বেছে বেছে পুরুষ পর্যটকদের নিশানা করেছিল। স্ত্রী, সন্তান বা বাবা-মায়ের চোখের সামনে হত্যা করা হয় তাঁদের। ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। ৬ মে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সেনা অভিযান চালানো হয়। সেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। তার পর টানা চার দিন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সেনা সংঘাত চলেছে। পরে সংঘর্ষবিরতি হলেও দীর্ঘ দিন হামলাকারীরা ছিল অধরা।

কী ভাবে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের খোঁজ মিলল? এনআইএ জানিয়েছে, তারা গত জুন মাসে পহেলগাঁও থেকে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। জঙ্গিদের সাহায্যকারী হিসাবে তাঁদের সন্দেহ করা হয়েছিল। এই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তিন জঙ্গির খোঁজ মেলে। ধৃতেরা হলেন পরভাইজ় আহমেদ জোঠার এবং বশির আহমেদ জোঠার। পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীদের তাঁরা আশ্রয় দিয়েছিলেন। খাবার এবং অন্যান্য সহযোগিতাও করেছিলেন। দাচিগামের জঙ্গলে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিলেন এই দুই অভিযুক্ত।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এনআইএ জানতে পারে, হামলাকারীরা পাকিস্তানের নাগরিক এবং জঙ্গি সংগঠন লস্কর-এ-ত্যায়বার সঙ্গে যুক্ত। এর পর গত ২৮ জুলাই শ্রীনগরের উপকণ্ঠে দাচিগাম জঙ্গলে ‘অপারেশন মহাদেব’ শুরু করে সেনাবাহিনী। তাতেই তিন জঙ্গির মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুর খবর সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়। নিহতেরাই যে পহেলগাঁওয়ের হামলাকারী, তা নিশ্চিত করতে একাধিক প্রমাণও তুলে ধরা হয়। এ বার জঙ্গিদের পরিকল্পনার কথা বিশদে জানাল এনআইএ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.