প্রাথমিক শিক্ষকদের পোস্টিং মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করল। ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের পোস্টিং সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই ও ইডি-র তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

একই সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, এই বিষয়ে সিবিআই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জেরা করবে। সেই জেরার ভিডিয়ো-রেকর্ডিং করা হবে। আজ কলকাতা হাই কোর্টে বিকেল সাড়ে ৩টের সময় মানিককে জেরার ভিডিয়ো রেকর্ডিং সকলের সামনে দেখা হবে বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগেই মানিকের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। দুপুর ৩টে নাগাদ বিচারপতি এ এস বোপান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বিশেষ বেঞ্চে শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। তাঁদের বক্তব্য, মানিকের বক্তব্য না শুনেই রায় দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রতি আর অবিচার হওয়া উচিত নয়।

বিচারপতিদের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই খবর জানিয়ে দেন। ফলে কলকাতা হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি আর হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ! আমাকে দেখতে দিন কী হয়।’’

এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির দু’টি মামলায় তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই মামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দু’টি মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরে যায়। যে সব নথির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশ দিয়েছিল, তিনি সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলকে তা পাঠাতে বলেছিলেন। তাতেও সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ স্থগিতাদেশ জারি করে। বিচারপতি বোপান্নার নেতৃত্বে সেই বিশেষ বেঞ্চ গঠন হয়েছিল। আজ তাঁর বেঞ্চই ফের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

রাজ্য সরকার ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করেছিল। কোন স্কুলে কার পোস্টিং হবে, তাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কয়েক জন শিক্ষক মামলা করেছিলেন। গত ২৫ জুলাই এ বিষয়ে সিবিআই, ইডির তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সে দিনই রাতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে মানিককে জেরার নির্দেশ দেন সিবিআইকে। পরের দিন, ২৬ জুলাই তিনি নির্দেশ দেন, জেরার ভিডিয়ো-রেকর্ডিং আদালতে পেশ করতে হবে। ৩ অগস্ট তা প্রকাশ্যে দেখা হবে। মানিকের আইনজীবীরা এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আজ তাঁরা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। দুপুর ৩টেয় বিশেষ বেঞ্চে শুনানি হয়। মানিকের হয়ে আইনজীবী কুমারপাল চোপড়া যুক্তি দেন, মানিক এই মামলায় শরিক ছিলেন না। তাঁর বক্তব্য না শুনেই তাঁর বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। সিবিআইকে জেরা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কী ভাবে চলবে, তা-ও নিয়ন্ত্রণ করেছেন হাই কোর্টের বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই রায় দেওয়ার সময় বলেছিলেন, লড়াই এখনও চলছে। যুদ্ধ শেষ হতে দেরি আছে। সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, কিছুই হচ্ছে না। প্রয়োজনে তিনি সিবিআই অধিকর্তাকে দিল্লি থেকে তলব করবেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানাবেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর দু’দিনের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের আইনজীবী আস্থা শর্মা, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায়কে তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলেছে।

২৫ ও ২৬ জুলাইয়ের রায়ে স্থগিতাদেশ দিলেও সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, হাই কোর্টে মূল মামলায় আইনি প্রক্রিয়া চলতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টে আজ আর সেই মামলার শুনানি হয়নি। তা সাত দিনের জন্য মুলতুবি রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.