কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে অবশেষে প্রকাশিত হল ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট। বুধবার রাজ্যের অর্থ দফতরের ওয়েবসাইটে কমিশনের সদস্য নিয়োগ সুপারিশ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মচারীদের মূল বেতন, গ্রেড পে এবং বিভিন্ন ভাতা কাঠামোয় বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, ন্যূনতম বেতন বাড়ানো হয়েছে, হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স ও ডিএ-তেও সামান্য পরিবর্তন এসেছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সপ্তম বেতন কমিশনের তুলনায় রাজ্যের এই কমিশনের সুপারিশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন কর্মচারী সংগঠনগুলি। পাশাপাশি, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্টে ডিএর বিষয়টি রাজ্যের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, “যিনি পে কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি এক জন অর্থনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ছিলেন। তিনি চাকরিরত অবস্থায় এবং অবসরকালীন সময়েও এআইসিপিআই অনুযায়ী ডিএ ভোগ করছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের এভাবে অথৈই জলে ডুবিয়ে গেলেন। সত্যিই বিষ্ময়কর।”
কো অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, “রাজ্য সরকার পজ্ঞম বেতন কমিশনে ডিএ পাওয়ার যে অধিকার সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছিল যার ও
উপর ভিত্তি করে মহমান্য আদালত আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশন সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া প্রস্তাব করেছে, যা রাজ্য সরকার গ্রহণ করেছে। সেই কারণেই পাঁচ বছর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনেনি। এই রিপোর্টের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। এবং এআইসিপিএর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার দাবিতে আগামী দিনে আন্দোলন তীব্রতর করব।”
অন্য দিকে, তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক বলেন, “ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর যাঁরা ডিএ নিয়ে প্রমাদ গুনছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই এই বেতন কমিশন ২০১৯ সালে কার্যকর হয়েছে। তার পরে সব সরকারি কর্মচারীরা ডিএ পেয়েছেন। আগামী দিনেও তাঁরা ডিএ পাবেন। তাই তাদের অভিযোগ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থাশীল।”
প্রসঙ্গত, দেবপ্রসাদ হালদার নামে এক কারাকর্মীর দায়ের করা মামলায় গত ১৮ জুন বিচারপতি অমৃতা সিংহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, মূল মামলার শুনানি ১ জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি থাকলেও এই সময়ের মধ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে রাজ্যকে। বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কমিশনের সুপারিশে কী এমন গোপন তথ্য আছে যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে গোপনীয়তা বজায় রেখেছে রাজ্য?’’
ওই মামলায় আবেদনকারীর আইনজীবী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তথ্য জানার অধিকার আইন (আরটিআই) এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হলেও বেতন কমিশনের সুপারিশ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি তাঁর মক্কেলকে। রাজ্যের আইনজীবী মেনে নেন যে রাজ্যের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশের তথ্য সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়নি। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘সরকারি তথ্য, সরকারি কর্মচারীদের সুবিধার্থে কেন প্রকাশ করা হবে না? রাজ্যের কি এমন কোনও নির্দেশিকা আছে?’’
প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন। চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছিল অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারকে। ২০১৯ সালে কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিলেও তা এতদিন প্রকাশ পায়নি। কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে এই নিয়ে অসন্তোষ ছিল। এই রিপোর্ট প্রকাশের ফলে কর্মচারীদের স্বচ্ছতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছিল, তা কিছুটা হলেও মিটবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকরা।