নরেন্দ্র মোদী সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে আপত্তি না জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জানাল, আধারের মাধ্যমেই রেশন কার্ডের মালিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
রাজ্য সরকারের এই অবস্থান নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে রেশন ডিলার থেকে কৃষকদের সংগঠন। কেন্দ্র রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যোগের প্রস্তাব দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল, মোদী সরকার কি ভবিষ্যতে রেশনে চাল-গম বিলির বদলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ ভর্তুকির পথে হাঁটতে চাইছে? এখন রাজ্য আধারের মাধ্যমে রেশন কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জোগাড় করে ফেলার প্রস্তাব দেওয়ায় পরে রাজ্যের খাদ্যসাথী প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
আধারের সঙ্গে রেশন কার্ডের সংযুক্তিকরণ আগেই হয়েছে। আবার আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণও হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিবের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যসচিবদের বৈঠক হয়। সেখানে কেন্দ্র প্রস্তাব দেয়, এ বার রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ করা হোক। সে জন্য, নতুন রেশন কার্ড বিলির সময় যখন পরিবারের প্রধানের ই-কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করা হবে, তখন রাজ্য সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে নেবে।
এই প্রস্তাবে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের বিশেষ সচিব সোমবারই কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব রবি শঙ্করকে চিঠি পাঠান। সূত্রের খবর, এই চিঠিতে রাজ্য জানিয়েছে, রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যোগের বদলে অ্যাকাউন্টের তথ্য ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন (এনপিসিআই) থেকেই পাওয়া যেতে পারে। এনপিসিআই-এর মাধ্যমেই আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ হয়েছিল।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২০১৭-২০১৮-তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার, প্যান কার্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করেছিল। পরে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, যে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি প্রকল্পের ভর্তুকি জমা পড়ছে না, সেগুলির সঙ্গে আধার যোগের প্রয়োজন নেই। যদিও প্রায় সব ব্যাঙ্কই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণে জোর দিয়ে থাকে। তা এনপিসিআই-এর মাধ্যমেই হয়। তাই এনপিসিআই-এর কথা উল্লেখ করেছে রাজ্য।
রেশন ডিলাররা মনে করছেন, রাজ্যের উপরমহলকে না জানিয়ে খাদ্য দফতরের শীর্ষ আমলারা কেন্দ্রের কথায় এই অবস্থান নিচ্ছেন। সর্বভারতীয় ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে রাজ্যেরই কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় আমলা কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে খাদ্যসাথী প্রকল্প বন্ধের চক্রান্তে নেমেছেন। তাই কেন্দ্রের প্রস্তাবে আপত্তি না জানিয়ে, উল্টে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এটা হলে খাদ্যসাথী প্রকল্পের মতো চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’’