সুপ্রতিম চক্রবর্তীর প্রতিবেদন, ২২ মার্চ।
এদিন প্রেম মন্দির আশ্রম প্রাঙ্গনে ভারতবর্ষের জ্ঞান-গরিমা-ঐতিহ্য বিষয়ক একটি রাজ্যস্তরীয় সেমিনার আয়োজিত হয়। শিরোনাম ছিল “Indigenous Knowledge on Science and Technology (IKST-2025)”। আহ্বায়ক ছিলেন ড. শতরূপা চট্টোপাধ্যায় ও ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানান ধারায় বৈদিক যুগ থেকে অধুনাতন কাল পর্যন্ত ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বহু-স্বীকৃত অবদান ও তাৎপর্য আলোচনা করেন বাংলার প্রবুদ্ধ ও প্রথিতযশা অধ্যাপক ও গবেষকবৃন্দ। শ্রোতা ও দর্শকাসনেও ছিল চাঁদের হাট, ছিল ভক্তমণ্ডলী ও বিদ্যার্থীবৃন্দের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
৮ই চৈত্র ১৪৩১, (ইংরেজি ২২ শে মার্চ, ২০২৫), রিষড়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই উপভোগ্য সভা। প্রেম মন্দির জনকল্যাণ সমিতি এবং দেশের মাটি কল্যাণ মন্দিরের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা চক্র। উদ্বোধন করেন আশ্রমের সহ-অধ্যক্ষ পূজ্য শ্রীমৎ ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। স্বাগত ভাষণ দেন প্রেম মন্দির আশ্রম সম্পাদক পূজ্য শ্রীমৎ নির্গুণানন্দ ব্রহ্মচারী। উদ্বোধনী সত্রে উপস্থিত ছিলেন পূজ্য শ্রীমৎ দয়ানন্দ ব্রহ্মচারী এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বে সঞ্চালনা করেন ড. শতরূপা চট্টোপাধ্যায়।
উদ্বোধনের পর দু’টি বৌদ্ধিক সত্র রাখা হয়। প্রথম সত্রের বিষয়-বিন্দু নির্ধারিত ছিল জীববিদ্যা সংক্রান্ত লৌকিক জ্ঞান ও পরম্পরা। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই কালাংশে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মানবেন্দ্র রায়। অতঃপর কল্যাণী জওহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কোচবিহার কলেজের অধ্যাপক ড. অভিজিৎ গলুই, আরসিসিআইআইটি-র অধ্যাপক ড. তথাগত দেব এবং ড. কাঞ্চন কুমার পাত্র একে একে তাদের অপূর্ব গবেষণা-চয়ন-রূপ পুষ্প দিয়ে জ্ঞানের মালা গাঁথতে থাকেন। দ্বিতীয় কালাংশের বিষয় ছিল গণিত এবং মৌলবিজ্ঞান। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শিবপুর আইআইইএসটি-র প্রাক্তন নিবন্ধক ড. দীপঙ্কর চক্রবর্তী। এখানে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. অরিন্দম ভট্টাচার্য, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়, আরসিসিআইআইটি-র অধ্যাপক ড. শতরূপা চট্টোপাধ্যায় এবং ড. দীপঙ্কর চক্রবর্তী নিজে। তথ্য নিবন্ধীকৃত করেন অনির্বাণ দে। বিভিন্ন সত্রে চারুবাক সঞ্চালক ছিলেন মিলন খামারিয়া, দেবজ্যোতি চক্রবর্তী এবং সুশান্ত মজুমদার। আগ্রহী দর্শকবৃন্দের নানান প্রশ্নের জবাব দেন আমন্ত্রিত বক্তা ও অতিথিবৃন্দ।
আশ্রম সম্পাদক শ্রীমৎ নির্গুণানন্দ ব্রহ্মচারী জানান, ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরার উত্তরাধিকার আমরা ভারতবাসী বহন করে চলছি। তাই এগুলি জানার, সহজভাবে বোঝার অধিকার আমাদের সকলের, এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আশ্রম কর্তৃপক্ষ বছরে দু’টি এমন আলোচনা চক্রের ব্যবস্থা করবে। আশ্রমের মুখপত্র ‘প্রেম প্রবাহ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. শতরূপা চট্টোপাধ্যায় জানান, পত্রিকায় এখন থেকে নিয়মিত জ্ঞান পরম্পরা বিষয়ক প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হবে৷ এছাড়া এই সেমিনারে যে বক্তব্য উঠে এসেছে সেগুলি নিয়ে আগামী প্রেম প্রবাহ পত্রিকায় একটি মনোগ্রাহী আলোচনা প্রকাশ করা হবে।
এদিন ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর নতুন লোগো উন্মোচিত হয় আশ্রম সম্পাদকের হাত দিয়ে, তার ছবি আঁকেন শীর্ষ আচার্য। দেশের মাটির পক্ষে মিলন খামারিয়া জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান সফল, সেমিনার হল সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছিল। এদিন সকালে বৃষ্টি হয়, আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো আরও অনেকে আসতেন, আমরা বসার জায়গা দিতে পারতাম না৷ আয়োজক সংগঠনের পক্ষে ড. কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, এই রকম অনুষ্ঠান আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একত্রে আরও অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তির পাশাপাশি বিজ্ঞানেও আপ্লুত হতে চায় ভক্তবৃন্দ। এই বার্তা সমাজের কাছে এক বিশেষ উদাহরণ হয়ে থাকবে যে, ধর্মস্থানে বিজ্ঞান আলোচনা যেমন হয়, ভারত-গৌরব সম্পাদনী-সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
