আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন শাস্তি শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। তাঁর রায়ে সমাজের একটা বড় অংশই ‘অখুশি’। অনেকেই মনে করছেন, ‘ন্যায়বিচার হল না!’ তবে সঞ্জয়ের শাস্তিতেই শেষ হচ্ছে না আরজি কর মামলা। খুন এবং ধর্ষণ মামলার শুনানি চলবে শিয়ালদহ আদালতেই। শুধু নিম্ন আদালত নয়, উচ্চ আদালতেও এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সঞ্জয়কেই মূল অভিযুক্ত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তার ভিত্তিতে চার্জ গঠনের পর চলে বিচারপ্রক্রিয়া। ৫৯ দিনের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার সঞ্জয়কেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। সোমবার শাস্তি ঘোষণা করেন। সিবিআই আরজি কর-কাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলে আদালতে উল্লেখ করে সঞ্জয়ের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’র দাবি করেন। কিন্তু বিচারক সাজা ঘোষণার সময় জানান, সিবিআইয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তিনি। ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলে মনে করেন না। সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন শাস্তি শোনান বিচারক।
কিন্তু সঞ্জয়ের শাস্তি ঘোষণাতেই মামলা শেষ হচ্ছে না। শিয়ালদহ আদালতে চলবে এই মামলার শুনানি। আরজি কর মামলার তদন্তে উঠেছিল তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলাতেই আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। যদিও সিবিআই সেই মামলায় চার্জশিট জমা দিতে না-পারায় দু’জনেরই জামিন মঞ্জুর হয়। তবে আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, তারা খুব তাড়াতাড়িই ওই মামলায় চার্জশিট দেবে। সেই চার্জশিটের ভিত্তিতে আবারও শুনানি হবে আরজি কর মামলার।
আরজি কর মামলায় প্রথম চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন আদালতে সিবিআই জানিয়েছিল, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। জুনিয়র ডাক্তার, নির্যাতিতার পরিবার-সহ অনেকেই দাবি তুলেছেন, সঞ্জয় একা নয়, জড়িত আছেন আরও অনেকে! আদালতে এ প্রসঙ্গে সিবিআই জানায়, বিষয়টি তারাও খতিয়ে দেখছে। অনেকের মতে, সিবিআইয়ের পরবর্তী চার্জশিটে সেই বিষয়ের উল্লেখ থাকতে পারে। তার ভিত্তিতে শিয়ালদহ আদালতেই শুনানি হবে। অর্থাৎ, আরজি কর মামলা সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ের শুনানিই হবে নিম্ন আদালতে।
সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন শাস্তির রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী। সঞ্জয়কে ‘বেকসুর খালাস’ করার জন্যই হাই কোর্টে আবেদন করবেন বলে জানান তিনি। সেঁজুতি জানান, কোনও অভিযুক্ত নিম্ন আদালতে দোষী প্রমাণিত হলেও উচ্চ আদালতে আবেদন করার অধিকার রয়েছে তাঁর। বিচারক দাসও সোমবার শাস্তি ঘোষণার সময় সঞ্জয়কে সেই অধিকারের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি সঞ্জয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যেতে পারেন।’’ ফলে উচ্চ আদালতেও এই মামলার শুনানি গড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়ার সময় তো বটেই, সোমবার সাজা ঘোষণার দিনও সিবিআই আদালতে সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে। যদিও বিচারক দোষী সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশই দিয়েছেন। ফলে সিবিআই কি রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে? প্রশ্ন উঠছেই। যদিও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। একটি সূত্রের দাবি, রায়ের প্রতিলিপি পর্যবেক্ষণের পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সিবিআই। অন্য দিকে, আরজি কর মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টেও।