রাজ্যের অধীনে আর নয় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর! নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে ‘স্বাধীনতা’র বার্তা কমিশনের

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরকে দ্রুত ‘স্বাধীন দফতর’ হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। নবান্ন সূত্রের খবর, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে।

কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অধস্তন সচিব এম আশুতোষ চিঠিতে জানিয়েছেন, সিইও-র দফতরের উপর বর্তমানে রাজ্যের অর্থ, স্বরাষ্ট্র এবং পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক দফতরের যে ‘অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে, তার পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থায় সিইও দফতরের প্রয়োজনীয় স্বশাসনের ক্ষমতা নেই। পাশাপাশি, রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন সিইও দফতর গড়া এবং পৃথক প্রশিক্ষণ পরিকাঠামোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

বর্তমান ব্যবস্থায় রাজ্যের সিইও দফতরের পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই বলে নবান্নকে চিঠিতে জানিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, বর্তমানে রাজ্যের সিইও-র দফতরকে স্বরাষ্ট্র এবং পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব পর্যায়ের দফতরের ‘অধীনস্থ দফতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। অর্থাৎ, রাজ্যের সিইও পদাধিকারবলে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (এসিএস) পর্যায়ের আধিকারিক হলেও তিনি মুখ্যসচিব বা অন্য কোনও প্রিন্সিপাল সচিব পর্যায়ের আমলার নিয়ন্ত্রণে থাকবেন না। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে উপ, অতিরিক্ত এবং যুগ্ম সিইও-র চারটি পদ পূরণ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে নবান্নকে।

বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে পড়শি রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা ভোটের একই কায়দায় কমিশন নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, অনুপ্রবেশের ফলে রাজ্যের কয়েকটি জেলার জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে গিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে তাঁর দাওয়াই— ‘‘অবিলম্বে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চাই। এসআইআর চাই।’’ গত সপ্তাহে সিইও-র দফতরে গিয়ে এই দাবি জানিয়েও এসেছেন তিনি। এসআইআর ঘিরে বিতর্কের এই আবহে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চিঠি নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অর্থ বা স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে থাকে না। এটি একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সংস্থা, যা ভারতের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর মূলত রাজ্য স্তরে বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা ও বিধান পরিষদ (যে রাজ্যগুলিতে দু’কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে) নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে। এর মূল দায়িত্ব হল ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংশোধন করা, নির্বাচন পরিচালনা করা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাবলি সম্পন্ন করা। আর সেই কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি দফতরের সহায়তা নেওয়ায় কোনও বাধা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.